ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ৩০ জুন ২০২৫, ১৬ আষাঢ় ১৪৩২

লিভার রোগ প্রতিরোধে আশার আলো, কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে ভূমধ্যসাগরীয় খাদ্যাভাস

প্রকাশিত: ০৫:১৩, ৩০ জুন ২০২৫; আপডেট: ০৫:১৪, ৩০ জুন ২০২৫

লিভার রোগ প্রতিরোধে আশার আলো, কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে ভূমধ্যসাগরীয় খাদ্যাভাস

ছবি: সংগৃহীত।

স্বাস্থ্যবান, দীর্ঘজীবন এবং ক্যানসারের ঝুঁকি কমানোর মতো নানা উপকারিতার সঙ্গে যুক্ত ‘ভূমধ্যসাগরীয় খাদ্যাভাস’ এবার প্রমাণ দিল আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ সুবিধার। এক নতুন গবেষণা বলছে, এই খাদ্যপদ্ধতি মেটাবলিক ডিসফাংশন-সম্পর্কিত স্টিয়েটোটিক লিভার ডিজিজ (MASLD) নামক এক সাধারণ লিভার রোগের ঝুঁকি কমাতে সহায়ক হতে পারে।

বিশ্বজুড়ে প্রায় প্রতি তিন জনে একজন MASLD-এ আক্রান্ত হন। এই রোগে লিভারে অতিরিক্ত চর্বি জমে, যার ফলে প্রদাহ, ক্যানসার এমনকি ফাইব্রোসিস (লিভারের কোষে শক্ত হওয়া) পর্যন্ত হতে পারে। টাইপ-২ ডায়াবেটিস ও স্থূলতার সঙ্গেও এই রোগের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে।

স্পেনের ইউনিভার্সিটি অব রোভিরা আই ভারজিলি পরিচালিত এই রিভিউ গবেষণায় আগের ১৩টি গবেষণা বিশ্লেষণ করা হয়, যার মধ্যে ৯২৬ জন অংশগ্রহণকারী ছিলেন। সবাই MASLD-এ আক্রান্ত ছিলেন এবং বিভিন্ন ধরনের খাদ্যাভ্যাস অনুসরণ করছিলেন। এর মধ্যে যেটি সবচেয়ে বেশি স্বাস্থ্য উপকারিতা দিয়েছে তা হলো ভূমধ্যসাগরীয় খাদ্যাভাস। পাশাপাশি ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং (নিয়মিত বিরতিতে উপবাস) পদ্ধতিও উল্লেখযোগ্য সুফল দিয়েছে।

গবেষকদের মতে, “এই রিভিউ ইঙ্গিত দেয় যে ভূমধ্যসাগরীয় খাদ্যাভাস এবং ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং-ভিত্তিক পদ্ধতিগুলো শরীরের ওজন কমাতে, রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণে রাখতে এবং প্রদাহ হ্রাসে সহায়তা করতে পারে, যা লিভার ফাংশন উন্নয়নে ইতিবাচক ভূমিকা রাখে।”

তবে গবেষকরা জানিয়েছেন, এখনো MASLD নির্দিষ্টভাবে কেন্দ্র করে দীর্ঘমেয়াদি গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে যাতে নিশ্চিত হওয়া যায় এই ডায়েটের কার্যকারিতা ও নিরাপত্তা।

এই ডায়েট মূলত ফলমূল, শাকসবজি, গোটা শস্য, বাদাম, অলিভ অয়েল, মাছ ও হাঁস-মুরগির ওপর নির্ভরশীল। এতে চিনি, লাল মাংস ও প্রক্রিয়াজাত খাবার সীমিত থাকে। গ্রীস, ইতালি ও ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চল থেকে উৎপত্তি হওয়ায় এর নাম ভূমধ্যসাগরীয় খাদ্যাভাস।

গবেষকরা সতর্ক করেছেন, যদিও সকল অংশগ্রহণকারী MASLD রোগী ছিলেন, এই রোগকে কেন্দ্র করে সব গবেষণা হয়নি। ফলে গবেষকেরা পরোক্ষভাবে বিভিন্ন বায়োমার্কার যেমন: গ্লাইসেমিক নিয়ন্ত্রণ ও প্রদাহের মাত্রার মাধ্যমে MASLD-এর প্রভাব নির্ধারণ করেছেন।

তবে তাত্ত্বিকভাবে বলা যায়, ভূমধ্যসাগরীয় খাদ্যাভাস MASLD রোগের তীব্রতা হ্রাস করতে পারে কিংবা এটি যেন না হয়, সেই প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তুলতে পারে। এ জন্য দীর্ঘমেয়াদি ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল প্রয়োজন।

গবেষকেরা আরও লিখেছেন, “MASLD একটি জটিল রোগ। এর ঝুঁকি ও বিকাশে পুষ্টি ও ইমিউনো-মেটাবলিক স্বাস্থ্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তাই সুনির্দিষ্ট খাদ্যাভ্যাসের প্রভাব ও কার্যকারিতা বিশ্লেষণ MASLD ব্যবস্থাপনায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে।”

ভূমধ্যসাগরীয় খাদ্যাভাস শুধু হৃৎপিণ্ড বা ওজন নয়, বরং লিভারের স্বাস্থ্য উন্নয়নের দিকেও কার্যকরী ভূমিকা রাখতে পারে বলে ধারণা মিলছে। তবে নিশ্চিত সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে প্রয়োজন আরও বিস্তারিত ও দীর্ঘমেয়াদি গবেষণা। তবুও, এই প্রাচীন ও বৈজ্ঞানিকভাবে স্বীকৃত খাদ্যাভ্যাসের প্রতি মানুষের আগ্রহ বাড়ছে প্রতিনিয়ত। 

সূত্র: https://short-link.me/11Uf-

মিরাজ খান

×