ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ৩০ জুন ২০২৫, ১৬ আষাঢ় ১৪৩২

অল্পতেই ধৈর্য হারিয়ে যায়? জেনে নিন ধৈর্য বাড়ানোর সহজ কৌশল

প্রকাশিত: ০৫:৫৪, ৩০ জুন ২০২৫

অল্পতেই ধৈর্য হারিয়ে যায়? জেনে নিন ধৈর্য বাড়ানোর সহজ কৌশল

ছ‌বি: প্রতীকী

এই ব্যস্ত সময়ে অনেকেই অনুভব করেন, তারা ধৈর্য ধরে কিছু করতে পারেন না। মনে হয় যেন সব কিছু এখনই করতে হবে, এক মুহূর্তও দেরি করা যাবে না। একটি চিন্তা মাথায় এলেই তার বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত অস্থিরতা বাড়তে থাকে। এই অস্থিরতা কখনো উত্তেজনা, কখনো উদ্বেগ, আবার কখনো টেনশনের রূপ নেয়। এমন প্রবণতা শুধু মানসিক অস্বস্তিই তৈরি করে না, দীর্ঘমেয়াদে ব্যক্তি জীবনে, কর্মক্ষেত্রে এবং পারিবারিক সম্পর্কেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।

মনোরোগ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই তাড়াহুড়োর অভ্যাস অনেক সময় মানসিক স্বাস্থ্যজনিত জটিলতার সঙ্গে সম্পর্কিত। উদ্বেগজনিত রোগ (Anxiety), বিষণ্ণতা (Depression), মনোযোগের ঘাটতি ও অতিসক্রিয়তার সমস্যা (ADHD) এবং অবসেসিভ কমপালসিভ ডিসঅর্ডার (OCD)-এর মতো সমস্যায় ভোগা মানুষদের মাঝে এমন তাড়াহুড়োর আচরণ বেশি দেখা যায়। কারও কারও মধ্যে আবার এসব রোগ না থাকলেও চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য হিসেবেও এমন আচরণ গড়ে উঠতে পারে।

তাড়াহুড়ো করে কাজ করার ফলে যে সমস্যাগুলো দেখা যায়, তার মধ্যে অন্যতম হলো—কাজের গুণমান কমে যাওয়া। যেটি সহজেই ভালোভাবে করা যেত, সেটিও তখন ভুল হয়। ফলে আসে আফসোস, আত্মগ্লানি, অনেক সময় সমালোচনার মুখে পড়তে হয়। অনেকেই তাড়াহুড়ো করে এমন খরচও করে বসেন, যেটি একটু ধীরস্থির হয়ে করলেই এড়ানো যেত। এই তাড়াহুড়োর কারণে অনেকে সিদ্ধান্ত গ্রহণে ভুল করেন, যেটি পরবর্তীতে তাদের জন্য বড় সমস্যা ডেকে আনে।

তাড়াহুড়োর পেছনে নানা ধরনের মানসিক কারণ থাকতে পারে। যেমন কেউ উদ্বেগের কারণে মনে করেন কাজটি যত দ্রুত শেষ হবে, তত দ্রুত তার মানসিক চাপ কমবে। কেউ বিষণ্ণতার কারণে কাজ ফেলে রাখেন, আর শেষ মুহূর্তে এসে হঠাৎ তাড়াহুড়ো শুরু করেন। ADHD-তে আক্রান্ত কেউ হয়তো একসঙ্গে অনেক কাজ হাতে নেন কিন্তু কিছুই ঠিকমতো শেষ করতে পারেন না। OCD-তে আক্রান্ত ব্যক্তি আবার হঠাৎ করে মনে করেন, কোনও কিছু এখনই বদলাতে হবে, না হলে বড় ক্ষতি হয়ে যাবে। এসব কারণেই তাড়াহুড়োর একটি অভ্যাস তৈরি হতে পারে।

তবে শুধু মানসিক রোগই নয়, অনেক সময় এটি একটি জীবনধারা হয়ে দাঁড়ায়। কেউ কেউ সব সময় ঘড়ির কাঁটার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলেন। মনে হয় যেন সময় ফুরিয়ে যাচ্ছে, কাজ শেষ করার সময় নেই। এই অভ্যাসকে অনেকে বলেন হারি সিকনেস।

এই পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পেতে হলে প্রথমেই প্রয়োজন জীবনযাপনের ধরনে পরিবর্তন আনা। পরিকল্পনা মাফিক কাজ করা, কাজের অগ্রাধিকার ঠিক করা, ‘না’ বলতে শেখা এবং কাজকে ছোট ছোট ভাগে ভাগ করে এগোনোর মতো অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। পাশাপাশি মাইন্ডফুলনেস বা মনোযোগের সঙ্গে বর্তমান মুহূর্তে থাকার চর্চাও গুরুত্বপূর্ণ। শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম বা ধ্যান মনকে স্থির করতে সাহায্য করে। এসব অভ্যাস গড়ে তুললে মনের অস্থিরতা কমবে এবং কাজের গুণমানও উন্নত হবে।

তবে এসব চেষ্টার পরও যদি সমস্যার উন্নতি না হয়, যদি তাড়াহুড়োর কারণে ব্যক্তি জীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে, তবে একজন সাইকোলজিস্ট বা সাইকিয়াট্রিস্টের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। কারণ তাড়াহুড়োর অভ্যাসের পেছনে লুকিয়ে থাকতে পারে এমন মানসিক সমস্যা, যার পেশাদার সহায়তা ছাড়া সমাধান সম্ভব নয়।

অতএব, ধৈর্য হারানোর আগে একটু থামুন, ভাবুন, নিজেকে বোঝার চেষ্টা করুন। ধৈর্যচর্চা কেবল ব্যক্তিগত নয়— সুস্থ ও স্থিতিশীল জীবনের গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি।

ভিডিও দেখুন: https://youtu.be/Z29_B8UDAuM?si=RF6Xxbd1eAdxDQjf

এম.কে.

×