ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ৩০ জুন ২০২৫, ১৬ আষাঢ় ১৪৩২

বুকের ব্যথা: গ্যাস নাকি হার্ট অ্যাটাক? চিনবেন যেভাবে

প্রকাশিত: ০৭:২৩, ৩০ জুন ২০২৫

বুকের ব্যথা: গ্যাস নাকি হার্ট অ্যাটাক? চিনবেন যেভাবে

ছবিঃ সংগৃহীত

বুকের ব্যথা হলেই আমরা আতঙ্কিত হয়ে পড়ি—এই ব্যথাটা কি গ্যাসের জন্য, না কি এটা হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ? এই দুটি সমস্যার লক্ষণ প্রায়ই একরকম হওয়ায় বিভ্রান্ত হওয়াটা খুব স্বাভাবিক। তবে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য রয়েছে, যা বুঝতে পারলে আপনি সময়মতো সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন।

কেন লক্ষণগুলো এতটা মিল থাকে?
বুকে একসাথে রয়েছে হৃদপিণ্ড, ফুসফুস, পাকস্থলী, ইসোফ্যাগাস (খাদ্যনালী) এবং নানা ধরণের স্নায়ু। এ কারণে এই অঞ্চলে যে কোনো অস্বস্তি একইরকম অনুভব হতে পারে।

গ্যাস্ট্রিক গ্যাস উপরের দিকে চাপ তৈরি করে বুকের মধ্যেও টানটান ভাব তৈরি করতে পারে, যা হার্ট অ্যাটাকের মতোই মনে হতে পারে। উভয় ক্ষেত্রেই বমিভাব, মাথা ঘোরা, ঘাম হওয়া, এমনকি চোয়াল বা পিঠে ব্যথাও হতে পারে।

ব্যথার অবস্থান কোথায়?
গ্যাস: ব্যথা সাধারণত পেটের ওপরের দিকে থাকে এবং চলাচল করতে পারে। অবস্থান বদলালে বা হেঁটে গেলে ব্যথা কমে যেতে পারে। ঢেঁকুর ওঠা বা বাতাস নির্গমনের পর আরাম মিলতে পারে।

হার্ট অ্যাটাক: ব্যথা সাধারণত বুকের মাঝামাঝি বা বাম পাশে হয়। এটি চাপ বা ভারী বস্তু চেপে থাকার মতো অনুভূতি তৈরি করে এবং অনেক সময় বাম বাহু, ঘাড়, চোয়াল বা পিঠে ছড়িয়ে পড়ে। চলাফেরা বা ঢেঁকুরে এই ব্যথা কমে না।

ব্যথার অনুভূতি কেমন?
গ্যাস: অস্বস্তিকর হলেও সাধারণত বিপজ্জনক নয়। তীব্র গ্যাস্ট্রিক ব্যথা তীক্ষ্ণ বা খিঁচ ধরার মতো হতে পারে এবং খাবারের পর বেশি হয়।

হার্ট অ্যাটাক: একে “চাপা”, “জ্বালাপোড়া”, বা “টাইট” ব্যথা বলা হয়। শ্বাস নিতে কষ্ট, কথা বলার শক্তি না থাকা, বা ব্যথা চারদিকে ছড়িয়ে পড়া এর লক্ষণ।
Harvard Health অনুযায়ী, নিচের লক্ষণগুলো বিশেষ সতর্কতা চায়:

বুকের মাঝামাঝি চাপ, টান, জ্বালা বা ব্যথা

এক বা দুই বাহু, পিঠ, ঘাড়, চোয়াল বা পেটে অস্বস্তি বা অসাড়তা

শ্বাসকষ্ট

হঠাৎ বমি বমি ভাব বা বমি

মাথা ঘোরা বা হালকা লাগা

হঠাৎ দুর্বলতা বা ক্লান্তি

ঠান্ডা ঘাম

আর কী কী লক্ষণ একসাথে আছে?
গ্যাসের ক্ষেত্রে আপনি পেতে পারেন:

ঢেঁকুর ওঠা বা গ্যাস নির্গমন

পেট ফুলে থাকা

পেট গড়গড় শব্দ

চলাফেরা করলে ব্যথা কমে যাওয়া

হার্ট অ্যাটাকের ক্ষেত্রে হতে পারে:

ঠান্ডা ঘাম

মাথা ঘোরা

শ্বাস নিতে কষ্ট

বমিভাব (বিশেষ করে নারীদের মধ্যে)

ভয়ানক অস্থিরতা বা আতঙ্ক

নারীদের জন্য বিশেষ সতর্কতা
নারীদের হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ সবসময় ক্লাসিক “বুক ধরা ব্যথা” নাও হতে পারে। তাদের ক্ষেত্রে নিচের লক্ষণগুলো বেশি দেখা যায়:

বমিভাব বা বমি

অতিরিক্ত দুর্বলতা বা ক্লান্তি

পিঠ, ঘাড় বা চোয়ালে ব্যথা

মাথা ঘোরা বা অস্থিরতা

উদ্বেগ বা “ভুল কিছু হতে যাচ্ছে” এমন অনুভূতি

এই কারণে নারীদের হার্ট অ্যাটাক অনেক সময় ধরা পড়ে না বা গ্যাস্ট্রিক ভেবে ভুল হয়। কিছু অস্বাভাবিক মনে হলে গুরুত্ব দিন।

কখন জরুরি সাহায্য নেবেন?
যদি সন্দেহ থাকে, দেরি না করে অ্যাম্বুলেন্স ডাকুন।

বিশেষ করে নিচের পরিস্থিতিতে দেরি করবেন না:

ব্যথা ৫ মিনিটের বেশি স্থায়ী হয়

বিশ্রাম বা অ্যান্টাসিডে কমে না

শ্বাসকষ্ট, ঘাম, মাথা ঘোরা, বমিভাব হয়

আপনার হার্ট বা ব্লাড প্রেশার সমস্যা আছে

ব্যথা ক্রমেই বাড়ছে

মনে রাখবেন: বুকের ব্যথা কখনোই হালকাভাবে নেওয়ার বিষয় নয়। যদি আপনার শরীর বিপদের সংকেত দেয়, তবে সেটিকে গুরুত্ব দিন—even যদি পরে জানা যায় সেটা গ্যাস ছিল। কারণ, হার্ট অ্যাটাকের সময় প্রতি মিনিটই গুরুত্বপূর্ণ। গ্যাসের জন্য হয়ত একটু অস্বস্তি হবে, কিন্তু হার্ট অ্যাটাক হলে সেকেন্ডেই বিপদ বাড়ে। তাই বুকের ব্যথা নিয়ে কখনো অবহেলা করবেন না।

তথ্যসূত্র: টাইমস অফ ইন্ডিয়া 

নোভা

×