ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ৩০ জুন ২০২৫, ১৬ আষাঢ় ১৪৩২

কলকাতায় শিক্ষার্থী ধর্ষণকাণ্ডের প্রধান অভিযুক্ত মনোজিত মিশ্রের ভয়ঙ্কর কাহিনি

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশিত: ১২:৩৮, ৩০ জুন ২০২৫; আপডেট: ১২:৪১, ৩০ জুন ২০২৫

কলকাতায় শিক্ষার্থী ধর্ষণকাণ্ডের প্রধান অভিযুক্ত মনোজিত মিশ্রের ভয়ঙ্কর কাহিনি

ছবি: সংগৃহীত

“মনোজিত দাদা আমাদের হৃদয়ে (Team MM)” — এই গ্রাফিতিটি লেখা আছে কলকাতার একটি আইন কলেজের দেয়ালে। সেই কলেজই এখন দেশজুড়ে শিরোনামে, কারণ এখানেই ঘটে গেছে এক ছাত্রীর উপর ভয়াবহ ধর্ষণের ঘটনা। আর এই ঘটনার মূল অভিযুক্ত মনোজিত মিশ্র, যিনি একসময় ওই কলেজের ছাত্র ছিলেন এবং দীর্ঘদিন ধরে কলেজ ক্যাম্পাসে আধিপত্য বিস্তার করে আসছিলেন।

মনোজিত মিশ্র, যিনি 'পাপাই' নামেও পরিচিত, ২০১৭ সাল থেকে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের কলেজ ইউনিটের নেতা ছিলেন বলে জানা যায়। যদিও ধর্ষণ কাণ্ড প্রকাশ্যে আসার পর তৃণমূল দল জানিয়েছে, মনোজিতের সঙ্গে তাদের কোনও সম্পর্ক নেই এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া উচিত।

কলেজের শিক্ষার্থী ও কর্মীদের একাংশ জানিয়েছেন, মনোজিত এতটাই প্রভাবশালী ছিলেন যে, তার ভয়ে অনেকে কলেজে যেতেই ভয় পেতেন। তার বিরুদ্ধে আগেও একাধিক যৌন হয়রানি ও হুমকির অভিযোগ উঠলেও কোনও প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

মনোজিতের বাবা রবীন মিশ্র কালিঘাটের এক পুরোহিত। মা মস্তিষ্কজনিত সমস্যায় ভুগছেন। বাবা জানিয়েছেন, ছেলেকে ভালো শিক্ষাদানের জন্য অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছিলেন, কিন্তু রাজনীতির প্রতি ঝোঁক ও সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ার পর সম্পর্ক ছিন্ন করেন। মনোজিত প্রায় চার বছর ধরে আলাদা থাকতেন।

পাড়া-প্রতিবেশীরা বলেন, ‘পাপাই’ ছিল এলাকাতেও এক ঝামেলাবাজ, যিনি প্রায়ই মদ্যপ অবস্থায় মারামারিতে জড়াতেন।

২০০৭ সালে মনোজিত আইন কলেজে ভর্তি হন এবং ২০১২ সালের মধ্যে পাস করার কথা থাকলেও মাঝপথে ড্রপআউট হন। পরে ২০১৭ সালে আবার ভর্তি হয়ে ২০২২ সালে গ্র্যাজুয়েট হন। যদিও নিজেকে ‘ক্রিমিনাল ল’ বিশেষজ্ঞ বললেও, বাবার দাবি—তিনি কোর্টে নয়, বরং কলেজ ক্যাম্পাসেই বেশি সময় কাটাতেন।

২০১৭ সালে প্রিন্সিপালের অফিসে ভাঙচুরে যুক্ত থাকার অভিযোগে তৃণমূল কলেজ ইউনিট বিলুপ্ত করে। তবে কলেজে আর ছাত্র সংসদ নির্বাচন না হওয়ায় কার্যত তিনিই নেতা ছিলেন।

২০২৩ সালে, গ্র্যাজুয়েশনের এক বছর পর, মনোজিত কলেজে দৈনিক মজুরিভিত্তিতে ক্লার্কের চাকরি নেন। দিনে ৫০০ টাকা করে পান। প্রশ্ন ওঠে—আইনজীবী হয়ে কেন এমন চাকরি? উত্তর, হয়তো ক্যাম্পাসে প্রভাব বিস্তারের প্রতি তার আসক্তির কারণে।

টাইমস অব ইন্ডিয়ার রিপোর্টে জানা যায়, মনোজিতের প্রিয় পিক-আপ লাইন ছিল, “তুই আমায় বিয়ে করবি?” ধর্ষণের শিকার তরুণীকেও এই কথা বলেন তিনি।

তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে, তিনি কলেজের ছাত্রীদের ছবি তুলে তা বিকৃত করে হোয়াটসঅ্যাপে ছড়িয়ে দিতেন, এবং শরীর নিয়ে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করতেন। অনেকে তার ভয়ে কলেজে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছিলেন। এমনকি, এক প্রতিবাদ মিছিলে অংশ নেওয়া ছাত্রীদের হুমকি ও মারধরের অভিযোগও আছে।

ভুক্তভোগী ছাত্রী জানিয়েছেন, ২৫ জুন সন্ধ্যা ৭টার দিকে মনোজিত ও তার সহযোগীরা তাকে কলেজের ইউনিয়ন রুমে ডেকে পাঠান। যদিও কলেজ নিয়ম অনুযায়ী ৫টার পর ক্যাম্পাস বন্ধ হওয়ার কথা। নিরাপত্তার দায়ে থাকা একজন গার্ডও অভিযুক্তদের সাহায্য করেন বলে অভিযোগ।

সেখানে তাকে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের প্রতি ‘বিশ্বস্ততা প্রমাণ’ করতে বলা হয়। তিনি বেরিয়ে আসার চেষ্টা করলে, আরেকটি কক্ষে টেনে নিয়ে গিয়ে তাকে ধর্ষণ করা হয়। সেই দৃশ্য ভিডিও করে ব্ল্যাকমেইলও করা হয়।

পুলিশ জানিয়েছে, কলেজের সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেছে মনোজিত ও তার সহযোগীরা জোর করে তরুণীকে একটি কক্ষে নিয়ে যাচ্ছে। ইতোমধ্যেই মনোজিতসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, যাদের মধ্যে একজন নিরাপত্তারক্ষীও রয়েছেন।

মুমু ২

×