ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ৩০ জুন ২০২৫, ১৬ আষাঢ় ১৪৩২

এআই বনাম মানব আবেগ: কে এগিয়ে? গবেষণায় চমকে দেওয়া ফলাফল

প্রকাশিত: ১৬:৪৬, ৩০ জুন ২০২৫

এআই বনাম মানব আবেগ: কে এগিয়ে? গবেষণায় চমকে দেওয়া ফলাফল

ছবি: প্রতীকী

সম্প্রতি প্রকাশিত এক গবেষণায় দাবি করা হয়েছে, আবেগ-ভিত্তিক পরিস্থিতিতে মানুষ নয়, বরং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) আবেগকে আরও ভালোভাবে বোঝে এবং পরিস্থিতি অনুযায়ী সঠিক প্রতিক্রিয়া দিতে সক্ষম।

২১ মে জার্নাল Communications Psychology-তে প্রকাশিত এই গবেষণায় সুইজারল্যান্ডের জেনেভা বিশ্ববিদ্যালয় ও বার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা জনপ্রিয় কিছু বড় ভাষা মডেল (LLM)—যেমন ChatGPT-4, GPT-o1, Gemini 1.5 Flash, Claude 3.5 Haiku, Copilot 365 এবং DeepSeek V3—এর উপর একাধিক প্রামাণ্য আবেগ-চিন্তন পরীক্ষার (যেমন STEM, STEU, GEMOK-Blends, GECo Regulation এবং GECo Management) প্রয়োগ করেন।

মানুষের চেয়ে ২৫% বেশি ‘সঠিক’ প্রতিক্রিয়া AI-এর

গবেষণায় দেখা যায়, যেখানে মানুষেরা গড়ে ৫৬% ক্ষেত্রে আবেগগতভাবে সঠিক প্রতিক্রিয়া দিতে পেরেছে, সেখানে AI সঠিক উত্তর দিয়েছে ৮১% ক্ষেত্রে।

অর্থাৎ, মানব বিশেষজ্ঞদের স্বীকৃত ‘সঠিক’ প্রতিক্রিয়ার ভিত্তিতে AI মানুষের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে এগিয়ে।

এছাড়া ChatGPT-এর তৈরি নতুন প্রশ্নগুলোও মানব পরীক্ষকদের মতে যথেষ্ট মানসম্মত ছিল এবং মূল প্রশ্নগুলোর মতোই কঠিন ছিল। গবেষণায় AI এবং মানব পরীক্ষার ফলাফলের মধ্যে সম্পর্ককে ‘মজবুত’ (correlation coefficient 0.46) বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

তবে গবেষণার পদ্ধতি নিয়ে প্রশ্ন

তবে সব বিশেষজ্ঞই এই গবেষণার ফলাফলের পেছনের পদ্ধতি নিয়ে সতর্ক থাকতে বলছেন।

কারণ, এসব ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্স টেস্ট ছিল মূলত বহু নির্বাচনী প্রশ্নভিত্তিক—যা বাস্তব জীবনের জটিল আবেগপূর্ণ পরিস্থিতিকে পুরোপুরি ধরতে পারে না।

তথ্য নিরাপত্তা ও ফাইন্যান্স বিশ্লেষক তাইমুর ইজলাল বলেন, “একজন মানুষ কী অনুভব করছে, তা নিয়ে অনেক সময় মানুষ নিজেরাও একমত হতে পারে না, এমনকি মনোবিজ্ঞানীরাও নয়। তাই এমন পরীক্ষায় AI এগিয়ে থাকলেই তা গভীর আবেগ বোঝার প্রমাণ নয়—এটি শুধুমাত্র পরিসংখ্যানগতভাবে ‘সঠিক’ উত্তরের হার বেশি ছিল।”

‘আবেগ বোঝা’ নয়, বরং প্যাটার্ন ধরতে পারা

AI স্বাস্থ্য প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান CliniScripts-এর প্রতিষ্ঠাতা নওমান জাফর বলেন, “AI আবেগ চেনার কাঠামোগত সংকেত যেমন মুখভঙ্গি বা ভাষাগত ইঙ্গিত ভালোভাবে ধরতে পারে, কিন্তু এটিকে সত্যিকারের ‘বোধগম্যতা’ বলা একধরনের অমূলক দাবি।”

অনেকে এই গবেষণাকে তুলনা করেছেন ‘Reading the Mind in the Eyes’ পরীক্ষার সঙ্গে—যেখানে কেবল চোখের অভিব্যক্তি দেখে আবেগ বোঝার চেষ্টা করা হয়। তবে ছবি তোলার আলো বা সাংস্কৃতিক পার্থক্য বদলালেই AI-এর পারফরম্যান্স অনেকখানি কমে যায় বলে উল্লেখ করেছেন গবেষকরা।

বাস্তব জীবনের একটি উদাহরণ: ব্রাজিলে ট্রাকচালকদের জন্য AI

AI বাস্তবজীবনে কতটা কার্যকর, তার এক বাস্তব উদাহরণ টেনে এনেছেন HAL-AI-এর সিইও মার্কোস আলভেস।

ব্রাজিলে ৬ হাজার ট্রাকচালক ব্যবহার করছেন ‘Aílton’ নামক একটি মাল্টিমোডাল হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাটবট, যা ভয়েস, টেক্সট ও ছবি বিশ্লেষণ করে রিয়েল-টাইমে আবেগ চিহ্নিত করতে পারে। এর সাফল্যের হার প্রায় ৮০%—যা মানুষের চেয়ে প্রায় ২০ শতাংশ বেশি।

এক চালক সহকর্মীর দুর্ঘটনায় হতবিহ্বল হয়ে ১৫ সেকেন্ডের একটি ভয়েস মেসেজ পাঠালে Aílton স্বয়ংক্রিয়ভাবে সহানুভূতিমূলক উত্তর দেয়, মানসিক স্বাস্থ্য সহায়তার তথ্য দেয় এবং সংশ্লিষ্ট ব্যবস্থাপককে সতর্ক করে।

আলভেস বলেন, ‘হ্যাঁ, বহু নির্বাচনী প্রশ্নে আবেগ বোঝা সহজ। তবে আমাদের বাস্তব ডেটা বলছে—আধুনিক LLM এখন সত্যিকার অর্থেই অধিকাংশ মানুষের চেয়ে ভালোভাবে আবেগ চিহ্নিত ও প্রতিক্রিয়া জানাতে পারছে।’

এআই কি সত্যিই আমাদের চেয়ে আবেগ বেশি ‘বোঝে’? হয়তো না—কিন্তু নির্দিষ্ট কাঠামোর মধ্যে আবেগ চিনে নেওয়া ও নিরপেক্ষ প্রতিক্রিয়া দেওয়ার ক্ষেত্রে এআই এখন মানুষের চেয়ে এগিয়ে। তবে বাস্তব জীবনের জটিলতা, তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া ও সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপটে এখনও মানুষই এগিয়ে, বলছেন বেশিরভাগ বিশেষজ্ঞ।

 

সূত্র: লাইভ সায়েন্স।

রাকিব

×