
ছবি: সংগৃহীত
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সাল পর্যন্ত বিশ্বব্যাপী ৫৭ মিলিয়নেরও বেশি মানুষ ডিমেনশিয়ায় আক্রান্ত ছিলেন। সাধারণত আলঝেইমারস অনেক দেরিতে ধরা পড়ে, কিন্তু বহু বছর আগে থেকেই শরীরে এমন কিছু সূক্ষ্ম পরিবর্তন শুরু হয়—যেগুলো আমরা প্রায়ই উপেক্ষা করি।
৪০-এর কোঠায় থাকা অনেকেই নিজেদের কিছু উপসর্গকে মানসিক চাপ, বয়সের স্বাভাবিক প্রভাব, কিংবা ব্যস্ত জীবনের অংশ বলে ভাবেন। কিন্তু যদি এগুলো মস্তিষ্কের প্রাথমিক সতর্কবার্তা হয়? যদি এগুলো এমন এক গল্প বলে, যা শরীর তখনও পুরোপুরি প্রকাশ করেনি?
মস্তিষ্ক ও দেহ কোচ টাইলার ব্র্যাডলি-সহ বিশেষজ্ঞদের মতে, মস্তিষ্কে প্রাথমিক প্রদাহ, বিপাকজনিত চাপ (metabolic stress) এবং ঘুমের ভারসাম্যহীনতা অনেক সময় নীরবে স্নায়বিক অবক্ষয়ের ভিত্তি তৈরি করে দেয়। নিচে এমন ৩টি উপসর্গ তুলে ধরা হলো, যেগুলো সাধারণভাবে বিপজ্জনক মনে না হলেও, সতর্ক হওয়া উচিত।
১. অতিরিক্ত ও স্থায়ী মস্তিষ্ক ঝাপসা
স্মৃতি ভুলে যাওয়া, নাম মনে না থাকা বা কী বলেছিলেন কেউ—এমন ভুল আমাদের সবারই হয়। কিন্তু যখন এই ভুলগুলো নিয়মিত হতে শুরু করে, কথার মাঝখানে হারিয়ে যাওয়া কিংবা মনোযোগ ধরে রাখা কষ্টকর হয়ে পড়ে, তখন তা শুধুই মানসিক চাপ বা ক্লান্তি নয়—বরং হতে পারে মস্তিষ্কে প্রদাহের প্রাথমিক লক্ষণ।
সাম্প্রতিক স্নায়ুবিজ্ঞানের গবেষণায় দেখা গেছে, মস্তিষ্কে গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণের দুর্বলতা বা ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স এই ধরনের মস্তিষ্ক ঝাপসার অন্যতম কারণ। যেহেতু মস্তিষ্ক অত্যন্ত শক্তি-নির্ভর অঙ্গ, তাই যখন বিপাকক্রিয়ায় সমস্যা দেখা দেয়, তখন তার প্রভাব সরাসরি পড়তে পারে মনঃসংযোগ ও স্মৃতিশক্তির উপর।
২. অপ্রত্যাশিত ও অযৌক্তিক মানসিক প্রতিক্রিয়া
৪০-এর পর জীবনে চাপ বাড়তে থাকে—সন্তান, চাকরি, বৃদ্ধ বাবা-মায়ের যত্ন ইত্যাদি। ফলে একটুখানি খিটখিটে মেজাজ বা উদ্বিগ্নতা স্বাভাবিকই মনে হয়।
তবে যখন ক্ষুদ্র ঘটনাও বড় মানসিক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে—যেমন অস্বাভাবিক রাগ, দুঃখবোধ বা উদ্বিগ্নতা—তখন এটি শুধুমাত্র বাইরের চাপ নয়, বরং মস্তিষ্কের ভিতরের পরিবর্তনের ইঙ্গিত হতে পারে।
এই পরিবর্তনের পেছনে থাকতে পারে ‘মাইক্রোগ্লিয়াল সেল’-এর প্রদাহ, যা মস্তিষ্কের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা। এতে করে স্নায়ুতন্ত্র অতি-সংবেদনশীল হয়ে ওঠে এবং মানসিক ভারসাম্য নষ্ট হয়। ফলে প্রতিনিয়ত ‘সারভাইভাল মোড’-এ চলে যায় মস্তিষ্ক।
৩. ঘুম কিন্তু বিশ্রাম নয়—রাত জাগা ও অস্থির ঘুম
রাত ২টার সময় হঠাৎ জেগে ওঠা অনেকেই অভিজ্ঞতা করেছেন। কেউ মনে করেন এটি হরমোনের প্রভাব, কেউ ভাবেন রাতে পানি বেশি খাওয়া দায়ী।
কিন্তু মস্তিষ্ক ঘুমের সময় নিজেকে পরিষ্কার করে একটি বিশেষ সিস্টেমের মাধ্যমে—যার নাম গ্লিম্ফ্যাটিক সিস্টেম। যদি এই প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়, তাহলে মস্তিষ্কে টক্সিন জমে যায়—বিশেষ করে ‘অ্যামিলয়েড প্লাকস’ যেটি আলঝেইমারসের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত।
রাতভর ৮ ঘণ্টা ঘুমিয়েও ক্লান্তবোধ করা, মাঝরাতে হঠাৎ জেগে উঠে উদ্বিগ্ন লাগা—এগুলো হতে পারে এমন এক ঘুম যা মস্তিষ্কের প্রয়োজনীয় পুনরুদ্ধার করে না। এটি শুধু ইনসমনিয়া নয়, বরং হতে পারে মস্তিষ্কের স্নায়ুরসায়নের ভারসাম্যহীনতা।
এই উপসর্গগুলো এক নজরে গুরুতর মনে না হলেও, এগুলো মস্তিষ্কের ভিতরকার বড় সমস্যার সূচনা হতে পারে। ৪০-এর দশকে এসব উপসর্গকে গুরুত্ব দিয়ে দেখা এবং প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়াই হতে পারে ভবিষ্যতে আলঝেইমারসের ঝুঁকি কমানোর প্রথম পদক্ষেপ।
আবির