
দৃষ্টি প্রতিবন্ধী পারিছা খাতুন তাঁর বুদ্ধি প্রতিবন্ধী স্বামী ও অন্ধ দুই শিশু সন্তান
ঘরজুড়ে আলো থাকলেও জীবনে যেন শুধুই অন্ধকার। মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার কাজিপুর ইউনিয়নের ভবানীপুর গ্রামে একই পরিবারের চারজন সদস্যই প্রতিবন্ধী। এই পরিবারের করুণ বাস্তবতা প্রতিনিয়তই লড়াই করে টিকে থাকার গল্প বলে যাচ্ছে। দৃষ্টি প্রতিবন্ধী পারিছা খাতুন তাঁর বুদ্ধি প্রতিবন্ধী স্বামী ও অন্ধ দুই শিশু সন্তানকে নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
জন্ম থেকেই দৃষ্টি প্রতিবন্ধী পারিছা খাতুন। অন্ধত্বকে হার না মেনে তিনি নিজের হাতে রান্নাবান্না, সন্তানদের গোসল করানো, খাওয়ানোসহ সংসারের সকল কাজই করে চলেছেন নির্ভরতায়। তাঁর বিয়ে হয় একই গ্রামের বুদ্ধি প্রতিবন্ধী দিনমজুর শাহিনের সঙ্গে। সংসার জীবনে আসে দুই পুত্রসন্তান—কিন্তু দুর্ভাগ্য, তাদের কারোর চোখেই আলো নেই।
বর্তমানে বড় ছেলে পারভেজের বয়স ১০ বছর ও ছোট ছেলে হামিমের বয়স ৭ বছর। আত্মীয়-স্বজনদের সহযোগিতায় অনেক চেষ্টা করেও সন্তানের চোখে আলো ফেরাতে পারেননি এই দম্পতি। সন্তানদের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন পারিছা খাতুন চান, তাদের একটি মাদ্রাসায় ভর্তি করে পড়াশোনার সুযোগ করে দিতে।
স্বামীর অল্প আয়ে এবং প্রতিবেশীদের সহযোগিতায় কোনোমতে সংসারের চুলায় আগুন জ্বলে। অথচ এই পরিবারের চারজন প্রতিবন্ধী সদস্য থাকলেও, এখন পর্যন্ত প্রতিবন্ধী ভাতা কার্ড পেয়েছেন মাত্র একজন।
প্রতিবেশী হাবিবুর রহমান বলেন, “অন্ধ পারিছা খাতুন তাঁর স্বামী-সন্তানদের নিয়ে অসহায়ভাবে জীবন কাটাচ্ছেন। আমরা প্রতিবেশীরা যার যা সামর্থ্য অনুযায়ী সহায়তা করছি।” একই গ্রামের রজব আলী সমাজের বিত্তবানদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, “এই অসহায় পরিবারটির পাশে দাঁড়ানো আমাদের নৈতিক দায়িত্ব।”
কাজিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলম হোসেন জানান, “পরিবারটিকে সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির আওতায় এনে শতভাগ সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হবে। পাশাপাশি দুই অন্ধ শিশুর লেখাপড়ার ব্যবস্থাও করা হবে।”
গাংনী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন বলেন, “প্রতিবন্ধী পারিছা খাতুনের পরিবারের প্রতিটি সদস্যকে প্রতিবন্ধী ভাতার আওতায় আনার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। সেই সঙ্গে সরকারিভাবে সকল সহায়তা নিশ্চিত করা হবে।
সায়মা ইসলাম