
ছবি: সংগৃহীত
"প্রতিদিন একটি আপেল ডাক্তারকে দূরে রাখে" - এই প্রবাদটি শত শত বছর ধরে প্রচলিত। কিন্তু সত্যিই কি প্রতিদিন একটি আপেল খাওয়া আপনার স্বাস্থ্যের জন্য এত ভালো? সহজ উত্তর হলো, হ্যাঁ, একটি আপেল আপনার স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত উপকারী হতে পারে, যদিও এটি সব রোগের নিরাময় নয় বা ডাক্তারের বিকল্পও নয়।
কেন আপেল আপনার স্বাস্থ্যের জন্য ভালো?
আপেল ভিটামিন, খনিজ, ফাইবার এবং বিভিন্ন অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে ভরপুর একটি ফল, যা শরীরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাজে সহায়তা করে। এর কিছু প্রধান উপকারিতা নিচে তুলে ধরা হলো:
-
হৃদপিণ্ডের স্বাস্থ্য: আপেলে থাকা দ্রবণীয় ফাইবার (যেমন পেকটিন) রক্তে খারাপ কোলেস্টেরলের (LDL) মাত্রা কমাতে সাহায্য করে, যা হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়। এছাড়াও, আপেলের পলিফেনল এবং ফ্ল্যাভোনয়েড রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে এবং হার্টের স্বাস্থ্যকে উন্নত করে। গবেষণা থেকে জানা যায়, নিয়মিত আপেল খেলে স্ট্রোক এবং হৃদরোগে মৃত্যুর ঝুঁকি কমে।
-
হজমশক্তি ও অন্ত্রের স্বাস্থ্য: আপেলের উচ্চ ফাইবার উপাদান হজম প্রক্রিয়াকে উন্নত করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধে সহায়ক। এতে থাকা পেকটিন একটি প্রিবায়োটিক হিসেবে কাজ করে, যা অন্ত্রের উপকারী ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি ঘটায় এবং সামগ্রিকভাবে অন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো রাখে।
-
ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়তা: আপেলে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার ও পানি থাকে এবং ক্যালোরি তুলনামূলকভাবে কম। এটি দীর্ঘক্ষণ পেট ভরা রাখে, ফলে ঘন ঘন ক্ষুধা লাগে না এবং অতিরিক্ত খাবার গ্রহণ থেকে বিরত থাকা যায়। এটি ওজন কমাতে বা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।
-
রক্তে শর্করার নিয়ন্ত্রণ ও ডায়াবেটিস প্রতিরোধ: আপেলের ফাইবার এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রক্তে শর্করার মাত্রা স্থিতিশীল রাখতে সাহায্য করে। এটি কার্বোহাইড্রেট শোষণের গতি কমিয়ে দেয়, ফলে রক্তে শর্করার হঠাৎ বৃদ্ধি ঘটে না। কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত আপেল খেলে টাইপ ২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমে।
-
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি: আপেল ভিটামিন সি এবং বিভিন্ন অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে সমৃদ্ধ। এই উপাদানগুলো শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে এবং শরীরকে সর্দি-কাশি ও বিভিন্ন সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে।
-
ক্যান্সার প্রতিরোধে সম্ভাব্য ভূমিকা: আপেলে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ফাইটোকেমিক্যাল কোষের ক্ষতি কমাতে সাহায্য করে এবং ক্যান্সারের ঝুঁকি কমানোর ক্ষেত্রে একটি সম্ভাব্য ভূমিকা রাখতে পারে। বিশেষত কোলন, ফুসফুস এবং স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে আপেলের উপকারিতা নিয়ে গবেষণা চলছে।
-
মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য: আপেলের অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলো মস্তিষ্কের কোষকে অক্সিডেটিভ ক্ষতি থেকে রক্ষা করতে পারে, যা মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য রক্ষায় এবং স্মৃতিশক্তি উন্নত করতে সহায়ক।
-
দাঁতের স্বাস্থ্য: আপেল চিবিয়ে খাওয়ার সময় মুখের লালা উৎপাদন বৃদ্ধি পায়, যা দাঁতের ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া দূর করতে সাহায্য করে এবং দাঁত পরিষ্কার রাখতে সহায়ক।
মনে রাখা দরকার:
যদিও প্রতিদিন একটি আপেল খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী, তবে শুধু আপেলের ওপর নির্ভর করে সুস্থ থাকা সম্ভব নয়। একটি সুষম খাদ্য তালিকা এবং নিয়মিত শারীরিক কার্যকলাপ সুস্থ জীবনযাপনের জন্য অপরিহার্য। আপেলের সর্বোচ্চ পুষ্টিগুণ পেতে খোসাসহ খাওয়া উচিত, কারণ খোসাতে অনেক মূল্যবান অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ফাইবার থাকে।
এছাড়াও, কোনো নির্দিষ্ট স্বাস্থ্যগত সমস্যা থাকলে বা ডায়াবেটিসের মতো রোগে আক্রান্ত হলে আপেল খাওয়ার পরিমাণ বা পদ্ধতি সম্পর্কে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া ভালো।
সব মিলিয়ে, প্রতিদিন একটি আপেল নিঃসন্দেহে আপনার সামগ্রিক সুস্থতায় ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে পারে এবং এটি আপনার দৈনন্দিন খাদ্যতালিকায় একটি চমৎকার সংযোজন। সূত্র: বিবিসি
সাব্বির