ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ৩০ জুন ২০২৫, ১৬ আষাঢ় ১৪৩২

নরসিংদীতে সেতুর অভাবে চরম দুর্ভোগে চরাঞ্চলের অর্ধলক্ষাধিক মানুষ

সাইফুল ইসলাম, নরসিংদী

প্রকাশিত: ১২:২৫, ৩০ জুন ২০২৫; আপডেট: ১২:২৬, ৩০ জুন ২০২৫

নরসিংদীতে সেতুর অভাবে চরম দুর্ভোগে চরাঞ্চলের অর্ধলক্ষাধিক মানুষ

ছবি- দৈনিক জনকণ্ঠ

নরসিংদীর সদর উপজেলার আলোকবালী ইউনিয়নের প্রায় ৫০ হাজার মানুষের একমাত্র ভরসা নৌপথ। মেঘনা নদী দ্বারা পরিবেষ্টিত এই চরাঞ্চলের বাসিন্দারা যুগ যুগ ধরে সেতুর অভাবে চরম দুর্ভোগে রয়েছেন। শহরে যাতায়াতে ৪ থেকে ৫ ঘণ্টা সময় লাগছে, যার ফলে বাড়ছে জীবন ঝুঁকি, দুর্ঘটনা এবং খরচ।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সদর উপজেলার এই ইউনিয়নে রয়েছে ৯টি গ্রাম। জেলা শহরের দূরত্ব মাত্র ২০ কিলোমিটার হলেও সেতু না থাকায় দুর্ভোগ গুণে গুণে বাড়ছে। কৃষক, জেলে, শিক্ষার্থী, রোগী—সবাইকে প্রতিদিন নদী পারাপারের বিড়ম্বনার শিকার হতে হয়। নৌপথে যাত্রা শুধু সময়সাপেক্ষই নয়, বর্ষা মৌসুমে কিংবা অতিরিক্ত কচুরিপানার সময় তা হয়ে দাঁড়ায় মৃত্যুঝুঁকিপূর্ণ।

আলোকবালী গ্রামের রুবেল আহমেদ (৩২) বলেন, “সেতু না থাকায় কচুরিপানার জন্য এক ঘণ্টার রাস্তা ৩-৪ ঘণ্টায় লাগছে। রোগীদের ঠিকমতো চিকিৎসা দিতে পারি না। অনেক সময় প্রেগন্যান্ট মহিলারা মাঝপথে সন্তান প্রসব করেন। কৃষিপণ্য বাজারজাত করতে পারি না। শিক্ষার্থীরাও কষ্টে পড়ছে। মাত্র ৩০০-৩৫০ মিটার দীর্ঘ একটি সেতু হলে আমাদের সমস্যা অনেকটাই কমে যেত।

বাখরনগর গ্রামের আহমদ মিয়া (২৫) বলেন, " গত ১০ জানুয়ারি রাত প্রায় আড়াইটায় আমার বাবার বুকে ব্যাথা অনুভব করে এবং সময়ের বাড়ার সাথে সাথে ব্যাথার তীব্রতা বাড়তে থাকে। হাসপাতালে কাছে নিতে যেতে চাইলে নদীর পথের পাশাপাশি কুয়াশার কারণে রাস্তায় কিছু দেখা যায় নি। যার কারণে কোনো নৌকা শহরে আসতে রাজি হয়নি। পরে ভোর হলে নৌকায় দেড় ঘন্টা নৌকার পথ পাড়ি দিয়ে নরসিংদী সদর হাসপাতালে নিয়ে আসি কিন্তু ততক্ষণে আব্বার বড়ো ধরনের হার্ট অ্যাটাক করেছেন।

তিনি আরও বলেন হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক আমাদের জাতীয় হৃদরোগ ইন্সটিটিউট এ রেফার্ড করলে দীর্ঘপথ পাড়ি দিয়ে ঢাকার শেরেবাংলা নগরে পৌছে হাসপাতালের মেইন গেইটে প্রবেশ করতেই বাবা মারা যায়। সঠিক সময়ে চিকিৎসা দিলে তাকে বাঁচানো যেতো কিন্তু যাতায়াত ব্যবস্থার কারণে হাসপাতালে সঠিক সময়ে নিয়ে আসা যায় নি।

আলোকবালী গ্রামের সাইফুল ইসলাম (২৪) বলেন, "আলোকবালী ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ডের নির্বাচিত সদস্য আমির সরকারকে গত ২২ এপ্রিল  স্থানীয় সন্ত্রাসীরা কুপিয়ে জখম করে। হাসপাতালে নিয়ে আসার পথে অতিথি রক্ত ক্ষরণে রাস্তায় মারা যায়। তাকে দ্রুত নিয়ে আসা যায় নি নদীতে অতিরিক্ত কচুরিপানার কারণে। প্রায় ১ ঘন্টার নৌ পথ ৩ ঘন্টাও আনা যায় নি। পাশাপাশি শহরের সাথে সড়ক পথে যোগাযোগ না থাকায় প্রশাসন ঠিকমতো দায়িত্ব পালন করতে পারছেন না। ফলে, সন্ত্রাস, মাদক ও অস্ত্রের ঝনঝনানি ব্যাপক হারে বাড়ছে।

একটি সেতুর অভাবে শিক্ষা, চিকিৎসা, কৃষি, প্রশাসনসহ মৌলিক অধিকারের অনেক কিছু থেকে বঞ্চিত হচ্ছে আলোকবালীর অর্ধলক্ষাধিক মানুষ। এলাকাবাসী চায়, অগ্রাধিকার ভিত্তিতে দ্রুত সেতু নির্মাণ করে এ জনদুর্ভোগের অবসান ঘটানো হোক

নরসিংদী সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আসমা জাহান সরকার বলেন, “অবহেলিত চরাঞ্চলের মানুষরা দীর্ঘদিন ধরে দুর্ভোগে রয়েছেন। আমি নিজেও নৌপথে গিয়ে পরিস্থিতি দেখেছি। তাদের সুবিধার্থে সেতু নির্মাণের জন্য সম্ভাব্যতা যাচাই করা হয়েছে এবং পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।”

নরসিংদীর এলজিইডির প্রধান প্রকৌশলী ফুলকাম বাদশা বলেন, “আমি নিজে পরিদর্শনে গিয়ে কচুরিপানায় তিন ঘণ্টা নৌকায় আটকে ছিলাম। বিষয়টি আমি উপলব্ধি করেছি। ইতোমধ্যে সেতু নির্মাণের সম্ভাব্যতা যাচাই শেষ হয়েছে। আলোকবালী থেকে করিমপুরের শ্রীনগর পর্যন্ত প্রায় ৩০০ মিটার দীর্ঘ সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।”

নোভা

×