
ছবি: সংগৃহীত
রাশিয়ার পূর্ণমাত্রার সামরিক আগ্রাসন শুরু হওয়ার পর তিন বছরের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও ইউক্রেনে সহিংসতা ক্রমেই বেড়ে চলেছে। দেশটির পূর্বাঞ্চলে রুশ সেনাদের দখলকৃত এলাকা প্রতিবছরই একটু একটু করে বাড়ছে। এমন প্রেক্ষাপটে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির জেলেনস্কি যুদ্ধের কৌশলে বড় পরিবর্তন আনছেন, আর রাশিয়া চালাচ্ছে ইতিহাসের সবচেয়ে বড় আক্রমণ।
রোববার প্রথম প্রহরে ইউক্রেনে চালানো হয় এযাবতকালের সবচেয়ে বড় আকাশ হামলা। ইউক্রেনীয় বিমান বাহিনীর তথ্য অনুযায়ী, ওই রাতে রাশিয়া ৪৭৭টি ড্রোন ও ৭টি ক্ষেপণাস্ত্রসহ মোট ৫৩৭ বার হামলা চালায়। ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এর মধ্যে ৪৭৫টি হামলা আকাশেই প্রতিহত করতে সক্ষম হয়।
তবে এত বিশাল হামলার মুখে পিছু হটতে গিয়ে বিধ্বস্ত হয় ইউক্রেনের একটি এফ-১৬ বোমারু বিমান। এতে প্রাণ হারান লেফটেন্যান্ট কর্নেল পদমর্যাদার একজন অভিজ্ঞ সামরিক পাইলট।
দক্ষিণের কৃষ্ণসাগর তীরবর্তী ওডেসা থেকে শুরু করে পূর্বাঞ্চলের খারসন, খারকিভ ও আরও একাধিক এলাকায় রাতভর হামলা চালানো হয়। বহু প্রাণহানি ঘটে এসব এলাকায়। ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির চিত্র এখনো পরিষ্কার নয়।
এই পরিস্থিতিতেই যুদ্ধের কৌশলে নাটকীয় মোড় নেয় ইউক্রেন। মানবঘাতী অ্যান্টি পার্সোনাল ল্যান্ডমাইন (APL) নিষিদ্ধকরণে গৃহীত ১৯৯৭ সালের অটোয়া কনভেনশন থেকে সরে দাঁড়ায় দেশটি। রোববার প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি এই বিষয়ে ডিক্রি জারি করেন।
অর্থাৎ এখন থেকে ইউক্রেন নিজেই এই প্রাণঘাতী মাইন তৈরি, ব্যবহার ও মজুদ করতে পারবে। যুদ্ধের ভয়াবহতায় এমন সিদ্ধান্তকে ‘দায়সারা প্রতিরক্ষা’ নয়, বরং ‘প্রয়োজনীয় রণকৌশল’ বলেই উল্লেখ করছেন বিশ্লেষকরা।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক পর্যবেক্ষক সংস্থা ইনস্টিটিউট ফর দ্য স্টাডি অফ ওয়ার (ISW) জানিয়েছে, ইউক্রেনের দোনেতস্ক অঞ্চলের উত্তর ও পশ্চিমাংশ, বিশেষ করে পোকরভোস্ক শহরজুড়ে ক্রমশ অগ্রসর হচ্ছে রুশ বাহিনী। এখন পর্যন্ত প্রায় ১,০০০ কিলোমিটার এলাকা নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে রাশিয়া।
ইউক্রেনের সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা আরও জানায়, ইউক্রেনের ভূখণ্ডেই এখন মোতায়েন রয়েছে প্রায় দেড় লাখ রুশ সেনা। তবে ডনবাসের টরেটস্কের পশ্চিমে ইউক্রেনীয় সেনারা এখনো প্রতিরোধ গড়ে রেখেছে।
যুদ্ধ চলাকালীন এবার তৃতীয় দফা আলোচনার বিষয়ে সম্মত হয়েছে ইউক্রেন ও রাশিয়া। তুরস্কের মধ্যস্থতায় এই আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে। এর আগের দুই দফা আলোচনার পর দেশ দুটি একে অপরের ১,০০০ করে বন্দি বিনিময় করে। এমনকি রাশিয়া ইউক্রেনের ৬,০০০ সেনার মরদেহও ফেরত দেয় ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনীর কাছে।
একদিকে যুদ্ধ তীব্র হলেও, রাশিয়ার ওপর আরোপিত কিছু অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা শিথিল করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এর ফলে ইউরোপের দেশ হাঙ্গেরিতে পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের কাজে রাশিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান গ্যাজপ্রম ব্যাংক লেনদেন করতে পারবে। যদিও এটি ইউক্রেনের দীর্ঘদিনের মিত্র যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানে এক ধরনের পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে।
ছামিয়া