ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ৩০ জুন ২০২৫, ১৬ আষাঢ় ১৪৩২

ইরানের মজুতকৃত উচ্চমাত্রার ইউরেনিয়াম এখন কোথায়? চলছে আন্তর্জাতিক অনুসন্ধান

প্রকাশিত: ০৬:৫৯, ৩০ জুন ২০২৫; আপডেট: ০৭:০০, ৩০ জুন ২০২৫

ইরানের মজুতকৃত উচ্চমাত্রার ইউরেনিয়াম এখন কোথায়? চলছে আন্তর্জাতিক অনুসন্ধান

ছবি:সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের সাম্প্রতিক হামলার পর ইরানের পরমাণু কর্মসূচি ঘিরে বিশ্বজুড়ে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। সবচেয়ে বড় প্রশ্ন: ইরানের মজুতকৃত উচ্চমাত্রার ইউরেনিয়াম এখন কোথায়?

গত সপ্তাহে মার্কিন বাহিনী ইরানের তিনটি প্রধান পরমাণু স্থাপনায় বোমা বর্ষণ করে— ফোর্ডো, নাতানজ এবং ইসফাহান। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছিলেন, এই হামলায় ‘সব কিছু নিশ্চিহ্ন করে দেওয়া হয়েছে’। কিন্তু জাতিসংঘের পারমাণবিক পর্যবেক্ষণ সংস্থা IAEA এখনো নিশ্চিত হতে পারেনি, ইউরেনিয়ামের মজুদ ধ্বংস হয়েছে, না কি কোথাও সরিয়ে ফেলা হয়েছে।

IAEA প্রধান রাফায়েল গ্রোসি জানান, ফোর্ডোতে অবস্থিত সংবেদনশীল সেন্ট্রিফিউজগুলো সম্ভবত ধ্বংসপ্রাপ্ত। তবে সেখানে থাকা ৪০০ কেজির বেশি ৬০%-এ পরিশোধিত ইউরেনিয়াম— যা অস্ত্র তৈরির জন্য ব্যবহৃত হতে পারে—এর ভাগ্যে কী ঘটেছে, সেটি এখনো রহস্য।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই পরিমাণ ইউরেনিয়াম আরও পরিশোধন করলে তা থেকে ৯টি পরমাণু বোমা বানানো সম্ভব। ফলে এর কোনো অংশ যদি হারিয়ে গিয়ে থাকে, সেটা গোটা বিশ্বের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াবে।

আশঙ্কার বিষয়, হয়তো হামলার আগেই ইরান এই ইউরেনিয়াম সরিয়ে ফেলেছিল। ১৩ জুন, ইসরায়েলের প্রথম হামলার দিন, ইরান IAEA-কে জানায়, তারা গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রপাতি ও উপকরণ রক্ষা করার জন্য ব্যবস্থা নিচ্ছে। যদিও বিস্তারিত কিছু জানায়নি, কিন্তু অনেকেই মনে করছেন এর মানে ছিল— তারা ইউরেনিয়াম অন্যত্র সরিয়ে ফেলেছে।

স্যাটেলাইট চিত্রেও ফোর্ডোর বাইরে ট্রাক ও গাড়ির দীর্ঘ সারি দেখা গেছে, যা সরবরাহ কার্যক্রমের ইঙ্গিত দেয়।

তবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এই দাবি উড়িয়ে দিয়ে বলেছেন, “তারা কিছুই সরায়নি। এগুলো খুবই ভারি। সরানো সহজ নয়।”

IAEA বলছে, তারা এখন আর ইরানের পরমাণু স্থাপনাগুলোয় পর্যবেক্ষণ চালাতে পারছে না। হামলার পর ইরান ঘোষণা দিয়েছে, তারা সংস্থাটির সঙ্গে সহযোগিতা বন্ধ করছে। ধ্বংসস্তূপ, অবিশ্বস্ত পরিবেশ এবং রাজনৈতিক জটিলতায় পরিস্থিতি আরও অনিশ্চিত হয়ে উঠেছে।

IAEA-এর সাবেক প্রধান পরিদর্শক ওলি হেইনোনেন জানিয়েছেন, বোমার ধ্বংসস্তূপ থেকে প্রকৃত তথ্য সংগ্রহ করতে অনেক সময় লেগে যাবে— কারণ তা হবে ধ্বংসাবশেষ থেকে নমুনা সংগ্রহ, পরিবেশগত বিশ্লেষণ ও উচ্চ ঝুঁকির মধ্যে কাজ করা।

তিনি আরও বলেন, “ইরান যদি তাদের ৪০০ কেজি ইউরেনিয়ামের হিসাব দেয়, তাহলে সমস্যাটা সামাল দেওয়া যাবে। কিন্তু তারা যদি গোপন রাখে, তাহলে কেউই নিশ্চিত হতে পারবে না সেটা কোথায় আছে।”

বহু পশ্চিমা কূটনীতিক এখন এই পরিস্থিতিকে ‘চালচিত্রের খেলা’ হিসেবে বর্ণনা করছেন। কারণ একদিকে তত্ত্বাবধান নেই, অন্যদিকে পরমাণু বোমা তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় উপাদান গায়েব।

IAEA বলছে, এখন পর্যন্ত তারা ইরানের বিরুদ্ধে একটি সমন্বিত পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির প্রমাণ পায়নি। তবে তারা এটাও নিশ্চিত করতে পারছে না যে সবকিছু শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হচ্ছে।

যুদ্ধের ধ্বংসস্তূপের মাঝে, নিরীক্ষকেরা আবারও ছায়ার পেছনে ছুটছেন— যেন ২০০৩ সালের ইরাক যুদ্ধের আগের দিনগুলোর মতো।
 

মারিয়া

×