
ছবি: সংগৃহীত
সম্প্রতি ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় ইসরায়েল এবং যুক্তরাষ্ট্রের যৌথ হামলা আন্তর্জাতিক মহলে আলোড়ন তুলেছে। অনেকেই জানতে চাইছেন— এই হামলা কেন এখন? যখন ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে আলোচনা চলছিল, তখন কেন এই সামরিক পদক্ষেপ?
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেন, এই হামলা ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচিকে সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করেছে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা সংস্থার (DIA) গোপন এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হামলার প্রভাব সীমিত এবং ইরানের কার্যক্রম মাত্র কয়েক মাস পিছিয়েছে। যদিও পরবর্তীতে মার্কিন ও ইসরায়েলি কর্মকর্তারা প্রকাশ্যে দাবি করেন, হামলার মাধ্যমে ইরানের সক্ষমতা বড় মাত্রায় ধ্বংস হয়েছে।
মূল প্রশ্নটি হলো, কেন ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র এখন এই হামলা চালানোর সিদ্ধান্ত নিল? এটা শুধু ইরানের প্রযুক্তিগত অগ্রগতির ওপর নির্ভর করে নয়, বরং সেই অগ্রগতিকে তারা কী উদ্দেশ্যে ব্যবহার করতে চায়, সেটাও বিবেচ্য।
ইসরায়েলের মতে, ইরান সম্প্রতি পারমাণবিক অস্ত্র অর্জনের পথে দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে তাদের আঞ্চলিক মিত্র গোষ্ঠীগুলো দুর্বল হয়ে পড়ায়, ইরান এখন নিজেই সক্রিয়ভাবে একটি পারমাণবিক ছাতা নির্মাণে ঝুঁকেছে। ইসরায়েলের দৃষ্টিতে, সময় ফুরিয়ে আসছে—তাই আগে থেকেই প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ প্রয়োজন।
আন্তর্জাতিক পারমাণবিক সংস্থা (IAEA) সম্প্রতি জানিয়েছে, ইরান গোপনে কয়েকটি স্থানে পারমাণবিক উপাদান নিয়ে কাজ করেছে এবং ৬০ শতাংশ মাত্রায় বিপুল পরিমাণ ইউরেনিয়াম মজুদ করেছে, যা অল্প সময়েই অস্ত্র তৈরির পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব। মার্কিন সেনা কর্মকর্তারাও ইরানের এই দ্রুত অগ্রগতিকে উদ্বেগজনক বলে মন্তব্য করেছেন।
ইরান দাবি করে, তারা পারমাণবিক অস্ত্র চায় না। কিন্তু ইরানের পারমাণবিক সংস্থার সাবেক প্রধানের বক্তব্য এবং ইসরায়েলি গোয়েন্দাদের তথ্য অনুযায়ী, ইরান প্রয়োজনীয় সব উপাদান ইতিমধ্যে সংগ্রহ করেছে এবং কেবল রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের অপেক্ষায়।
এদিকে, ব্যালিস্টিক মিসাইল নিয়ে ইরানের দ্রুত অগ্রগতি ইসরায়েলকে আরও বেশি সজাগ করে তোলে। তাদের ধারণা, ইরান আগামী দুই বছরের মধ্যে ৮ হাজারের বেশি মিসাইল তৈরি করতে চায়। চীন ও রাশিয়া থেকে উপাদান আমদানি করে ইরান এই লক্ষ্য পূরণের চেষ্টা করছে। এই বাস্তবতায়, ইসরায়েল আর অপেক্ষা করতে রাজি ছিল না।
যুদ্ধের মাধ্যমে ইসরায়েলের মূল লক্ষ্য ছিল—ইরানের পারমাণবিক ও ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি ধ্বংস করা এবং দেশটির আঞ্চলিক আধিপত্যের স্বপ্নকে থামানো। ইরানের অভ্যন্তরে অস্থিরতা সৃষ্টি করাও ছিল এক ধরনের কৌশল।
যুদ্ধ ১২ দিন স্থায়ী হয়। যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলকে সাহায্য করে, কিন্তু সর্বোচ্চ নেতা খামেনির ওপর সরাসরি হামলা থেকে বিরত রাখে। শেষপর্যন্ত, ইসরায়েল মনে করে তারা তাদের কৌশলগত লক্ষ্য পূরণ করেছে এবং এরপরই যুদ্ধবিরতির সিদ্ধান্ত আসে।
ইরান এখন কঠিন অবস্থানে। শাসন টিকিয়ে রাখতে হলে অভ্যন্তরীণ স্থিতিশীলতার ওপর জোর দিতে হবে। পারমাণবিক কর্মসূচি বা আঞ্চলিক প্রভাব বিস্তারের স্বপ্ন আপাতত বন্ধ রাখতে হতে পারে। ইতিহাসে যেমন ১৯৮৮ সালে ইরাকের সঙ্গে যুদ্ধে “বিষের পেয়ালা” খেতে হয়েছিল খোমেইনকে, এবারও হয়তো খামেনিকে তেমন কোনো আপোষে যেতে হবে।
এই যুদ্ধ হয়তো ইরানের শাসনব্যবস্থা শেষ করবে না। কিন্তু অন্তত কিছু সময়ের জন্য মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চলে বিপজ্জনক উত্তেজনা কিছুটা প্রশমিত হতে পারে।
সূত্র: জাস্ট সিকিউরিটি
এম.কে.