
ছবি: সংগৃহীত
ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বহুল প্রতীক্ষিত ‘মিনি’ বাণিজ্য চুক্তির আলোচনা ক্রমেই দীর্ঘায়িত হচ্ছে। অথচ বছরের শুরুতে ভারত ছিল অন্যতম প্রথম দেশ যারা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনের সঙ্গে বড় ধরনের বাণিজ্য চুক্তির আলোচনা শুরু করেছিল।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই আলোচনা এখন একপ্রকার ‘নাটকীয় ভাঙনের’ দিকে যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের থিঙ্কট্যাংক সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের ভারত বিষয়ক বিশ্লেষক রিচার্ড রসো বলেন, ৯ জুলাইয়ের শুল্ক আরোপের সময়সীমা ঘনিয়ে এলেও দুই পক্ষের মধ্যে সমঝোতার সম্ভাবনা ক্ষীণ হয়ে পড়েছে।
চলতি মাসে দিল্লিতে অনুষ্ঠিত বৈঠকে দুই দেশের অবস্থান আরও কঠোর হয়ে ওঠে। যুক্তরাষ্ট্রের দাবি, ভারতকে তাদের কৃষিপণ্য, বিশেষ করে জেনেটিকালি পরিবর্তিত ভুট্টা ও সয়াবিন গ্রহণ করতে হবে। কিন্তু এই দাবি মেনে নেওয়া মোদী সরকারের জন্য অত্যন্ত কঠিন। কারণ ভারতের কৃষি নির্ভর বিশাল জনগোষ্ঠী এবং দেশীয় কৃষকদের রক্ষার প্রতিশ্রুতি মোদীর সরকারের দীর্ঘদিনের নীতির অংশ।
এছাড়া দেশটির বড় ব্যবসায়ী শ্রেণি এবং হিন্দু জাতীয়তাবাদী সংগঠনগুলোও বিদেশি প্রতিযোগিতার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। সবচেয়ে বড় সংগঠন আরএসএস এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক চাপের প্রেক্ষাপটে আন্তর্জাতিক মেধাস্বত্ব সুরক্ষা চুক্তি থেকে বেরিয়ে আসার পরামর্শও দিয়েছে।
বিশ্লেষকদের অনেকেই মনে করেন, ট্রাম্পের ‘ন্যায্য বাণিজ্য’ বার্তা আসলে একতরফা লাভের কৌশল। ভারতের সাবেক বাণিজ্য আলোচক অজয় শ্রীবাস্তবের মতে, সীমিত সময় দিয়ে ভারতকে চাপে ফেলে চুক্তিতে বাধ্য করতে চাচ্ছেন ট্রাম্প।
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র-ভারত সম্পর্কে এক ধরনের শীতলতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এপ্রিল মাসে মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্সের সফরের মাধ্যমে যেটুকু উষ্ণতা তৈরি হয়েছিল, তা দ্রুত ম্লান হয়ে যায় ট্রাম্পের বিতর্কিত কাশ্মীর মন্তব্য এবং পাকিস্তানকে নিয়ে বাণিজ্য ‘বার্গেনিং চিপ’ বলার পর।
সবচেয়ে বেশি ক্ষোভের সৃষ্টি হয় যখন ১৮ জুন ট্রাম্প হোয়াইট হাউজে পাকিস্তানের সেনাপ্রধান আসিম মুনিরের সঙ্গে হাস্যোজ্জ্বল মধ্যাহ্নভোজে অংশ নেন। বিষয়টি ভারতীয় গণমাধ্যম ও জনমনে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে।
বর্তমানে ভারতের প্রধান শঙ্কা হলো—চুক্তি হলেও সেটি ট্রাম্প প্রশাসন কতটা মেনে চলবে। দিল্লি এখন এমন নিশ্চয়তা চাইছে যে ভবিষ্যতে হঠাৎ করে নতুন শুল্ক আরোপ করা হবে না, এবং কোনো পরিবর্তনের ক্ষেত্রে পুনরায় আলোচনা করা যাবে।
অনেক বিশ্লেষক বলছেন, এখনই চুক্তিতে না গিয়ে অপেক্ষা করাই ভালো, কারণ মার্কিন আদালত ট্রাম্পের একতরফা শুল্ক আরোপের ক্ষমতা বাতিল করতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের মধ্যকার সাম্প্রতিক অন্তর্বর্তী চুক্তির উদাহরণ টেনে অনেক ভারতীয় বিশেষজ্ঞ মনে করছেন, দ্রুত পদক্ষেপের মানে বেশি ছাড় দেওয়া হলে অপেক্ষাই উত্তম। অজয় শ্রীবাস্তব বলেন, “এটি কোনো যুদ্ধ নয়, কেউ বোমা মারছে না—তাই আত্মসমর্পণের প্রশ্নই ওঠে না।”
সব মিলিয়ে বলা যায়, ভারত-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য চুক্তির ভবিষ্যৎ এখন বেশ অনিশ্চিত। এবং মোদীর জন্য এটি স্পষ্ট যে, ‘বন্ধু’ ট্রাম্পের কাছ থেকে সহজে কোনো ছাড় মিলছে না।
মুমু ২