ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ৩০ জুন ২০২৫, ১৬ আষাঢ় ১৪৩২

সত্যিই কি এক দশক পিছিয়ে গেছে ইরানের পরমাণু শক্তি?

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশিত: ০৭:১৯, ৩০ জুন ২০২৫

সত্যিই কি এক দশক পিছিয়ে গেছে ইরানের পরমাণু শক্তি?

ছবি: সংগৃহীত

জাতিসংঘের পরমাণু পর্যবেক্ষক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল অ্যাটমিক এনার্জি এজেন্সি (IAEA)-এর প্রধান রাফায়েল গ্রোসি সতর্ক করে জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের সাম্প্রতিক হামলায় কিছু পরমাণু স্থাপনা ধ্বংস হলেও ইরানের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ সক্ষমতা এখনো পুরোপুরি ধ্বংস হয়নি। ফলে ‘কয়েক মাসের মধ্যেই’ দেশটি ফের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করতে সক্ষম হবে।

গ্রোসি জানান, “ইরানের কিছু পরমাণু কার্যক্রম এখনো অটুট আছে। কয়েকটি সেন্ট্রিফিউজ ক্যাসকেড চালু করেই দেশটি আবার সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম উৎপাদন শুরু করতে পারে।” তিনি আরও বলেন, “ইরানের পরমাণু প্রযুক্তি অত্যন্ত উন্নত, জ্ঞান ও কারিগরি সক্ষমতা তাদের রয়েছে।”

এই সতর্কবার্তা এসেছে এমন এক সময়ে, যখন মধ্যপ্রাচ্য ইতিমধ্যেই উত্তাল হয়ে উঠেছে ইসরায়েলের ‘অপারেশন রাইজিং লায়ন’-এর কারণে। গত ১৩ জুন ইসরায়েল ইরানের পরমাণু ও সামরিক ঘাঁটিতে হামলা চালায়। পরদিন যুক্তরাষ্ট্রও তিনটি মূল পরমাণু স্থাপনায় বোমাবর্ষণ করে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, “ইরানের পরমাণু কার্যক্রম এক দশক পিছিয়ে গেছে,” এবং ওই স্থাপনাগুলো “সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস” করা হয়েছে।

তবে ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাকচি জানিয়েছেন, ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা গুরুতর হলেও অনেক তথ্য এখনো অজানা। এক্ষেত্রে আরও উদ্বেগের বিষয় হলো, হামলার আগেই ইরান তার ৯০০ পাউন্ডের মতো উচ্চমাত্রায় সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের মজুদ সরিয়ে ফেলেছিল কি না, সে প্রশ্নের উত্তর মেলেনি।

গ্রোসি CBS নিউজকে জানান, “আমরা জানি না সেই ইউরেনিয়াম কোথায় আছে। কিছু ধ্বংস হয়ে থাকতে পারে, কিছু হয়তো সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। আমাদের তদন্তে অংশ নিতে হবে, কিন্তু ইরান তাতে সহযোগিতা করছে না।”

বর্তমানে ইরানি সংসদ IAEA-এর সঙ্গে সহযোগিতা স্থগিত করেছে এবং গ্রোসি’র পরিদর্শন অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করেছে, বিশেষ করে মূল কেন্দ্র ‘ফোর্ডো’ ঘাঁটিতে।

এদিকে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির বিরুদ্ধে কড়া হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, “যদি ইরান আবার উদ্বেগজনক মাত্রায় ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করে, তাহলে নতুন করে হামলার বিষয়টি তিনি বিবেচনা করবেন।”

ট্রাম্প বলেন, “আমি জানতাম খামেনি কোথায় লুকিয়ে ছিল, কিন্তু তাকে হত্যা করতে দেইনি। ইসরায়েল বা মার্কিন বাহিনী তাকে শেষ করে দিতে পারত, কিন্তু আমি তা হতে দেইনি।” তিনি আরও বলেন, “আমি তাকে অত্যন্ত লজ্জাজনক মৃত্যু থেকে রক্ষা করেছি।”

তবে ইরান বলেছে, নতুন করে পরমাণু চুক্তির সম্ভাবনা কেবল তখনই আসবে, যদি যুক্তরাষ্ট্র ‘অবমাননাকর’ ভাষা বন্ধ করে। দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “খামেনির প্রতি অসম্মান বন্ধ না হলে কোনো আলোচনা সম্ভব নয়।”

ট্রাম্প জানিয়েছেন, তিনি ইরানের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা শিথিলের কথা ভাবছিলেন, তবে এখন সেই পরিকল্পনা বাতিল করেছেন। নতুন করে হামলার সম্ভাবনা সম্পর্কেও হোয়াইট হাউজের এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “অবশ্যই, যদি প্রয়োজন হয়।”

মুমু ২

×