ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ৩০ জুন ২০২৫, ১৬ আষাঢ় ১৪৩২

পাকিস্তানের সাথে অপারেশন সিঁদুরে হারার কারণ জানালেন ভারতের নৌবাহিনীর কর্মকর্তা

প্রকাশিত: ০২:১১, ৩০ জুন ২০২৫; আপডেট: ০২:১১, ৩০ জুন ২০২৫

পাকিস্তানের সাথে অপারেশন সিঁদুরে হারার কারণ জানালেন ভারতের নৌবাহিনীর কর্মকর্তা

ছবি:সংগৃহীত

ভারতের ইন্দোনেশিয়ায় নিযুক্ত প্রতিরক্ষা সংযুক্তি ক্যাপ্টেন শিব কুমার একটি গুরুত্বপূর্ণ ও সৎ স্বীকারোক্তি করেছেন—অপারেশন সিঁদুর শুরুতে ভারতের কিছু যুদ্ধবিমান ধ্বংস হয়েছিল মূলত রাজনৈতিক নির্দেশনার কারণে। প্রথমদিকে ভারতের পাইলটদের নির্দেশ ছিল, যেন তারা পাকিস্তানের সামরিক ঘাঁটি বা প্রতিরক্ষা স্থাপনায় হামলা না করেন, বরং শুধুমাত্র জঙ্গি ঘাঁটিগুলো লক্ষ্য করেন।

এই কথাগুলো তিনি বলেন ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তায় অনুষ্ঠিত এক সেমিনারে, যেখানে তিনি খোলাখুলি জানালেন—যুদ্ধক্ষেত্রে শুরুর দিকে ভারতের ক্ষতির একটি বড় কারণ ছিল সেই ‘সীমাবদ্ধতা’।

“আমরা কিছু বিমান হারিয়েছিলাম, কিন্তু তা কৌশলের ভুলে নয়। আমাদের হাতে এক ধরনের বাঁধা ছিল—আমাদের বলা হয়েছিল শুধুমাত্র জঙ্গি ঘাঁটিতে আঘাত হানতে। আমরা সামরিক ঘাঁটি, বিমানঘাঁটি বা প্রতিরক্ষা ব্যূহকে ছোঁয়ারও অনুমতি পাইনি,”—বলেন তিনি।

তারপর কী হলো?
ক্যাপ্টেন কুমারের ভাষায়, সেই শুরুর ক্ষয়ক্ষতির পর ভারত দ্রুত কৌশল পরিবর্তন করে। এবার লক্ষ্য ছিল পাকিস্তানের সামরিক শক্তি।

“আমরা প্রথমে তাদের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা দুর্বল করি—SEAD ও DEAD কৌশলে। এরপর আমাদের ক্ষেপণাস্ত্র আর ড্রোনগুলো অনায়াসে আঘাত হানতে সক্ষম হয়,” তিনি বলেন। “৮, ৯ ও ১০ মে—এই তিন দিনে ভারত ছিল আকাশে সর্বশক্তিমান।”

সরকারের প্রতিক্রিয়া?
ভারতের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এই মন্তব্য নিয়ে কিছু না বললেও, জাকার্তায় ভারতীয় দূতাবাস জানিয়েছে যে ক্যাপ্টেন কুমারের বক্তব্য “প্রসঙ্গের বাইরে গিয়ে উপস্থাপন করা হয়েছে”।

তাদের মতে, বক্তব্যের মূল বার্তা ছিল এই—ভারতের সশস্ত্র বাহিনী রাজনৈতিক নেতৃত্বের অধীন এবং অপারেশন সিন্ধুর লক্ষ্য ছিল জঙ্গি অবকাঠামো ধ্বংস করা, যুদ্ধ বাড়ানো নয়।

কী বলছেন বিশ্লেষকরা?
একজন ইন্দোনেশিয়ান প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞ দাবি করেন, ভারত হারিয়েছে মোট পাঁচটি যুদ্ধবিমান—রাফাল, মিগ-২৯ ও সুখোই-৩০ সহ। যদিও ক্যাপ্টেন কুমার এই পরিসংখ্যানে একমত নন, তিনি ভারতীয় বিমান হারানোর বিষয়টি অস্বীকার করেননি।

পাকিস্তানও বড়সড় ক্ষতির মুখে পড়ে। ছয়টি যুদ্ধবিমান, দুটি AWACS এবং একটি পরিবহন বিমান ধ্বংস হয় বলে জানানো হয় সেমিনারে।

রাজনৈতিক বিরোধিতা বাড়ছে
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিরোধী কংগ্রেস দল প্রশ্ন তুলেছে—যদি শীর্ষ পর্যায়ের সেনা কর্মকর্তারা এত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রকাশ করছেন, তবে প্রধানমন্ত্রী কেন এখনো একটি বিশেষ সংসদ অধিবেশন ডাকছেন না?

“সিঙ্গাপুরে একজন, জাকার্তায় আরেকজন মুখ খুলছেন। অথচ সরকার সংসদে নীরব। সত্যটা কী?”—বলেছেন কংগ্রেসের জয়রাম রমেশ।

অপারেশন সিঁদুর পটভূমি
৭ মে ভোরে ভারতের চালানো অপারেশন সিন্ধুর ছিল ২২ এপ্রিলের ভয়াবহ পাহেলগাম হামলার জবাব। সেই হামলায় ২৬ জন নিরীহ মানুষের প্রাণ গিয়েছিল।

ভারতের এই সামরিক প্রতিক্রিয়ায় ৪ দিন ধরে আকাশপথে, ভূমি থেকে ক্ষেপণাস্ত্র, ড্রোন ও গোলাবর্ষণে সংঘর্ষ চলে। ১০ মে, উভয় দেশ অস্থায়ীভাবে যুদ্ধ বন্ধের সিদ্ধান্তে পৌঁছায়।

পাকিস্তানের পাল্টা অপারেশন, বুনিয়ান-উম-মারসুস, মাত্র ৮ ঘণ্টাতেই ব্যর্থ হয়। ভারতের প্রতিরক্ষা প্রধান জানিয়েছেন, পাকিস্তানের পরিকল্পনা ছিল ৪৮ ঘণ্টায় ভারতকে কাবু করা—যা ছিল “সম্পূর্ণ অবাস্তব”।


যুদ্ধ কখনো নিখুঁত হয় না। কৌশল, নির্দেশনা, বাস্তবতা ও সাহস সব মিলিয়েই একটি দেশের প্রতিক্রিয়া গড়ে ওঠে। ক্যাপ্টেন কুমারের বক্তব্য হয়তো অস্বস্তিকর, কিন্তু এটি আমাদের মনে করিয়ে দেয়—সেনাবাহিনী শুধু অস্ত্রের নয়, আদেশের অধীনেও চলে।

একজন যুদ্ধরত পাইলট শুধু আকাশে উড়েন না, তিনিও নির্দেশের ভার বহন করেন। আর সেই ভার কখনো কখনো প্রাণঘাতী হতে পারে।

মারিয়া

×