ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ৩০ জুন ২০২৫, ১৬ আষাঢ় ১৪৩২

চীনে সাহিত্যের নামে অপরাধ?

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশিত: ০৭:৩৫, ৩০ জুন ২০২৫

চীনে সাহিত্যের নামে অপরাধ?

ছবি: সংগৃহীত

চীনে অল্প বয়সী লেখিকাদের একটি বড় অংশ এখন ভয়াবহ আইনগত ও সামাজিক চাপে পড়েছে। কারণ, তারা 'দানমেই' বা সমলিঙ্গ ভালোবাসাভিত্তিক ইরোটিক ফিকশন লেখার অভিযোগে পুলিশি তদন্ত, জিজ্ঞাসাবাদ এবং গ্রেপ্তারের মুখোমুখি হচ্ছেন। ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত অন্তত ৩০ জন নারী লেখিকা গ্রেপ্তার হয়েছেন যাদের বয়স সাধারণত বিশের কোটায়। বেশিরভাগই জামিনে আছেন কিংবা বিচারের অপেক্ষায়। অনেককে আবার জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করা হয়েছে।

এই সাহিত্যিক কর্মের মূল কেন্দ্র ছিল "হাইতাং লিটারেচার সিটি" নামের একটি তাইওয়ানে হোস্টকৃত প্ল্যাটফর্ম, যেখানে ‘দানমেই’ লেখালেখি হয়। এই ধারার কল্পনার জগতে সমলিঙ্গ পুরুষদের প্রেম, যৌনতা ও আবেগের প্রকাশকে উপস্থাপন করা হয়, যা ব্যাপকভাবে চাইনিজ পাঠকের মনে স্থান করে নিয়েছে।

তবে চীনের পর্নোগ্রাফি বিরোধী আইনে “অশ্লীল উপাদান তৈরি ও প্রচার”-এর অভিযোগে এই লেখিকাদের অভিযুক্ত করা হচ্ছে। যারা অর্থ উপার্জন করেছেন, তাদের ১০ বছরেরও বেশি কারাদণ্ড হতে পারে।

এই লেখাগুলোতে সমলিঙ্গ সম্পর্ক থাকলেও অনেক হেটারোসেক্সুয়াল সাহিত্যে যেমন মো ইয়ানের মতো লেখকদের গ্রাফিক যৌন দৃশ্য প্রকাশে ছাড় রয়েছে, তেমনটি দানমেই লেখকদের জন্য নেই। অনেক লেখিকার দাবি, পুলিশ তাদের ফোন বাজেয়াপ্ত করে, ডরমিটরি তল্লাশি চালায়, এমনকি নগ্ন করে ছবি তোলে। তাদের কিছু লেখা লাখখানেক ‘ভিউ’ পেলেও আয়ের অঙ্ক হয়তো ৪ হাজার ইউয়ানের মতো—এটাই তাদের ‘অপরাধের প্রমাণ’ হিসেবে তুলে ধরা হচ্ছে।

আইনজীবীদের ভাষ্যমতে, পুলিশের এই ‘অফশোর ফিশিং’ কৌশল চীনের কিছু অঞ্চলকে রাজস্ব আদায়ের হাতিয়ার হিসেবেও কাজে লাগানো হয়। লানঝু শহরের পুলিশ একাধিক প্রদেশে গিয়ে লেখিকাদের তলব করেছে, যা আইনি পরিধির বাইরে পড়ে।

চীনের রাষ্ট্রপ্রধান শি জিনপিং "ঐতিহ্যবাহী পারিবারিক মূল্যবোধ" ও জন্মহার বাড়ানোর লক্ষ্যে নারীদের ওপর সামাজিক ও সাংস্কৃতিক চাপ বাড়াচ্ছেন। 'দানমেই' সাহিত্যকে নারীদের সন্তানধারণে অনাগ্রহী করে তোলার উপাদান হিসেবে দেখা হচ্ছে। ২০২১ সালে এই ধারার ৬০টি বই টিভি বা সিনেমায় রূপান্তর হয়; বড় তারকারাও দানমেই নাটক দিয়ে ক্যারিয়ার শুরু করেছেন।

তবুও এই জনপ্রিয়তার মাঝেও লেখিকারা শঙ্কিত। কিছু লেখিকা বলেছেন—“আমি শুধু গল্প লিখতাম। কিন্তু এখন মনে হয়, প্রতিটি শব্দ যেন আমার বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।”

একজন লেখিকা লিখেছেন, “আমি খাবার না খেয়ে টাকা জমিয়ে কলম কিনেছি, চুল কেটে বিক্রি করেছি লেখার জন্য। আমি এখন শুধু চাই, আদালত যেন কাগজের বাইরের মানুষটাকেও দেখতে পায়।”

মুমু ২

×