ছবি: সংগৃহীত
বিশ্বজুড়ে বাড়তে থাকা ইলেকট্রনিক বর্জ্য (ই-ওয়েস্ট) সমস্যা মোকাবিলায় যুগান্তকারী এক প্রযুক্তির উদ্ভাবন করলেন দক্ষিণ কোরিয়ার বিজ্ঞানীরা। দক্ষিণ কোরিয়ার কোরিয়া ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি (KIST)-এর একদল গবেষক এমন একটি মেমোরি ডিভাইস তৈরি করেছেন যা নির্দিষ্ট সময় পর পানিতে গলে যায়—একদম কোনো ক্ষতিকর অবশিষ্টাংশ না রেখে।
এই মেমোরি চিপে ব্যবহৃত হয়েছে এক নতুন ধরনের অণুগঠন, যার নাম PCL-TEMPO। এটি গঠিত হয়েছে TEMPO নামক একটি জৈব অণু এবং পলিক্যাপ্রোল্যাকটোন (PCL) নামক একটি বায়োডিগ্রেডেবল পলিমারের সংমিশ্রণে। TEMPO বৈদ্যুতিক তথ্য সংরক্ষণের সক্ষমতা রাখে এবং PCL স্বাভাবিক উপায়ে পচনশীল—ফলে এটি ই-ওয়েস্টের দূষণ প্রতিরোধে বড় সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিচ্ছে।
প্রকল্পের প্রধান বিজ্ঞানী ড. সাংহো চো বলেন, ‘এই উদ্ভাবন প্রযুক্তিগতভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি প্রথমবারের মতো একটি উচ্চ-দক্ষতার জৈব মেমোরি ডিভাইসে স্ব-ধ্বংসযোগ্যতা সংযুক্ত করার সফল উদাহরণ।’
গবেষণাপত্রে জানানো হয়, এই ডিভাইস ১০,০০০ সেকেন্ডেরও বেশি সময় ধরে তথ্য সংরক্ষণে সক্ষম এবং এক মিলিয়নেরও বেশি অন-অফ সাইকেল পার করেও তথ্য নির্ভুলভাবে ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছে। এমনকি এটি ২৫০ বার রাইট-ইরেজ সাইকেল এবং ৩,০০০ বার বাঁকানোর পরেও কোনো কার্যক্ষমতা হারায়নি।
এই চিপ মানবদেহে প্রতিস্থাপনযোগ্য এবং বিজ্ঞানীরা চাইলে এটি কখন গলে যাবে, তা নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন। নির্দিষ্ট সময় বা অবস্থায় চিপটির বাইরের স্তর ভেঙে গেলে তা তিন দিনের মধ্যে পানিতে পুরোপুরি গলে যায়।
এ বিষয়ে ড. সাংহো আরও জানান, ‘আমরা ভবিষ্যতে এই প্রযুক্তিকে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই। স্ব-নিরাময় এবং আলোক-প্রতিক্রিয়াশীল (photo-responsive) ক্ষমতা যুক্ত করে এটিকে বুদ্ধিমান এবং পরিবেশবান্ধব ইলেকট্রনিক ডিভাইস হিসেবে রূপ দেওয়ার লক্ষ্য রয়েছে।’
প্রসঙ্গত, চলতি মাসের শুরুতে জাপানি বিজ্ঞানীরাও এমন একটি প্লাস্টিকের উদ্ভাবন করেন যা সমুদ্রের পানিতে গলে যায় এবং পেছনে রেখে যায় শুধু নাইট্রোজেন ও ফসফরাস—যা জীবাণু হজম করতে পারে এবং গাছ শোষণ করতে সক্ষম।
এই ধরনের প্রযুক্তি বিশ্বজুড়ে পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তির নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে চলেছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
সূত্র: এনডিটিভি।
রাকিব
