
ছবি: সংগৃহীত
তুরস্কের প্রাচীন শহর চাতালহোইকে (Çatalhöyük)-এ ৯ হাজার বছর আগে নারীরাই ছিলেন সমাজের শাসক—এমনটাই জানিয়েছে নতুন এক গবেষণা। নারীকেন্দ্রিক বা মাতৃতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থার এই সুস্পষ্ট প্রমাণ মিলেছে সম্প্রতি প্রাচীন ডিএনএ বিশ্লেষণে।
যুক্তরাজ্যের বিজ্ঞান সাময়িকী ‘সায়েন্স’-এ প্রকাশিত গবেষণাটিতে বলা হয়েছে, চাতালহোইকে শহরের প্রায় ১৩০টি কঙ্কালের ডিএনএ বিশ্লেষণ করা হয়েছে, যেগুলো খননের মাধ্যমে ৩৫টি আলাদা আবাসন থেকে সংগ্রহ করা হয়। এই শহর গড়ে উঠেছিল আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ৭১০০ সালে এবং প্রায় ১,০০০ বছর ধরে এখানে মানুষের বসবাস ছিল।
গবেষণায় দেখা যায়, শুরুর দিকে একই পরিবারের সদস্যদের একসঙ্গে সমাহিত করা হতো। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ওই চর্চায় পরিবর্তন আসে, এবং অনেক কবরস্থ ব্যক্তির মধ্যে কোনো জিনগত সম্পর্ক খুঁজে পাওয়া যায়নি। যেখানে সম্পর্ক পাওয়া গেছে, তা বেশিরভাগই নারী লাইন অনুযায়ী, অর্থাৎ কন্যাসন্তান ও মায়েদের মধ্যে। এটি বোঝায়, বিয়ের পর পুরুষরা স্ত্রীদের বাড়িতে বসবাস করতেন—একটি স্পষ্ট মাতৃতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থার ইঙ্গিত।
গবেষক দলের সদস্য মেহমেত সোমেল বলেন, ‘চাতালহোইকের মধ্য দিয়ে আমরা এখন খাদ্য-উৎপাদক প্রাচীন সমাজের মধ্যে জিনগতভাবে বিশ্লেষিত প্রথম সামাজিক সংগঠনের ধরন জানতে পারলাম।’
তাদের বিশ্লেষণে উঠে এসেছে, প্রায় ৭০ থেকে ১০০ শতাংশ ক্ষেত্রে কন্যা সন্তানরাই বাড়ির সঙ্গে যুক্ত থাকত, প্রাপ্তবয়স্ক পুত্র সন্তানরা অন্যত্র গমন করত।
গবেষণায় আরও দেখা গেছে, নারীদের প্রতি সামাজিকভাবে বিশেষ মর্যাদা দেওয়া হতো। কারণ নারীদের কবরগুলোতে পুরুষদের তুলনায় পাঁচ গুণ বেশি সমাধি সামগ্রী (grave goods) পাওয়া গেছে।
সময় যত গড়িয়েছে, জিনগত সম্পর্ক সমাজে গুরুত্ব হারিয়েছে। তখন সমাজে অপত্য গ্রহণ (adoption) বা পালন-পোষণ (fostering) পদ্ধতি চালু হয়েছে, যা এখনো বহু সমাজে প্রচলিত।
এ প্রসঙ্গে সোমেল আরও বলেন, ‘আমরা নারীকেন্দ্রিক এই সামাজিক সংগঠনের সন্ধান খুঁজছিলাম না, কিন্তু তথ্য-উপাত্ত স্পষ্ট করে বলছে যে ইউরোপের নিওলিথিক ও ব্রোঞ্জ যুগের পুরুষ-প্রধান সামাজিক ধারা সর্বত্র ছিল না।’
চাতালহোইকে আগে থেকেই ইউনেস্কো ঘোষিত ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট হিসেবে স্বীকৃত। এখানকার খননকৃত স্থাপনাগুলোতে পাওয়া গেছে বিপুল সংখ্যক নারীমূর্তি, যেগুলোকে বহুদিন ধরেই নারীতন্ত্রের প্রতীক বলে অনেকে বিবেচনা করে এসেছেন। এই নতুন গবেষণা সেই বিশ্বাসেরই বৈজ্ঞানিক ভিত্তি গড়ে দিল।
সূত্র: এনডিটিভি।
রাকিব