ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ৩০ জুন ২০২৫, ১৭ আষাঢ় ১৪৩২

রোহিঙ্গা সংকট: সহানুভূতি ছাড়িয়ে সমাধানের পথে

মোঃ ইব্রাহীম খলিলুল্লাহ্, স্টেট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ২৩:২১, ২৯ জুন ২০২৫

রোহিঙ্গা সংকট: সহানুভূতি ছাড়িয়ে সমাধানের পথে

ছবিঃ সংগৃহীত

বাংলাদেশে রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে আলোচনা আজ নতুন কিছু নয়। বরং, প্রতি বছর বর্ষা মৌসুম এলে এই সংকটের নতুন মাত্রা দেখা যায়। সম্প্রতি কক্সবাজারের শিবিরগুলোতে পাহাড়ি ঢল ও ভারী বৃষ্টিপাতে আবারও হাজার হাজার রোহিঙ্গা মানবেতর অবস্থায় পড়েছে। এ চিত্র দেখে মনে হয়, রোহিঙ্গাদের প্রতি আমরা কি শুধুই মানবিক সহানুভূতি দেখিয়ে যাব, নাকি বাস্তব ও কার্যকর সমাধানের পথে এগোবো?

আমার দৃঢ় বিশ্বাস, রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে আমাদের প্রথম পদক্ষেপ হতে হবে—শিবিরের ভেতর নিরাপত্তা ও মৌলিক সেবার নিশ্চয়তা। প্রতি বছর বর্ষার ঝড়ে শিবিরের ঘরবাড়ি ভেঙে পড়ে, শিশু ও বৃদ্ধরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এই দুর্যোগ মোকাবিলায় বিদেশি সাহায্যের অপেক্ষায় না থেকে, আমাদের উচিত জাতীয় বাজেট থেকে নির্দিষ্ট অর্থ বরাদ্দ করা। স্থানীয় প্রশাসন ও স্বেচ্ছাসেবীদের মাধ্যমে দ্রুত আশ্রয়কেন্দ্র সংস্কার ও দুর্যোগ-প্রতিরোধী অবকাঠামো নির্মাণ নিশ্চিত করা এখন সময়ের দাবি।

রোহিঙ্গা শিবিরে শিক্ষার সুযোগ ও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা না থাকায় তরুণদের মধ্যে হতাশা বাড়ছে, যা সামাজিক অস্থিরতা ডেকে আনছে। এ পরিস্থিতি বদলাতে হলে, সীমিত পরিসরে হলেও কারিগরি শিক্ষা ও ক্ষুদ্র ব্যবসার সুযোগ সৃষ্টি করা জরুরি। এতে শুধু মানবিক সংকটই কমবে না, বরং ভবিষ্যতে প্রত্যাবাসনের ক্ষেত্রেও রোহিঙ্গারা আত্মনির্ভরশীল হতে পারবেন।

অনেকে মনে করেন, আন্তর্জাতিক চাপ ছাড়া মিয়ানমার রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে রাজি হবে না। কিন্তু বাস্তবতা হলো, বাংলাদেশ যদি আঞ্চলিক কূটনীতিতে সক্রিয় ভূমিকা না রাখে, তাহলে এই সংকট আরও দীর্ঘায়িত হবে। আমাদের উচিত চীন, ভারত ও আসিয়ান দেশগুলোর সঙ্গে সমন্বিত উদ্যোগে নতুন কৌশল গ্রহণ করা। একইসঙ্গে, জাতিসংঘে আরও জোরালো কূটনৈতিক প্রচার চালিয়ে আন্তর্জাতিক সহায়তা বাড়াতে হবে।

রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে দেশের ভেতর জনমতও দিন দিন পরিবর্তিত হচ্ছে। অনেকেই মনে করেন, দীর্ঘদিন ধরে এভাবে শিবিরে আটকে রাখা কোনো সমাধান নয়। তাই, সরকারকে স্বচ্ছ নীতিমালা নিয়ে জনগণকে জানাতে হবে—এই সংকটের সমাধানে আমাদের পরিকল্পনা কী, এবং কোন পথে আমরা এগোচ্ছি। এতে দেশের মানুষের আস্থা যেমন বাড়বে, তেমনি আন্তর্জাতিক মহলেও বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হবে।

সবশেষে বলব, রোহিঙ্গা সংকট শুধু মানবিক নয়, জাতীয় নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার বিষয়। তাই, সংকট নিরসনে আমাদের উচিত—দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া, বাজেট বরাদ্দ বাড়ানো, কূটনৈতিক তৎপরতা জোরদার করা এবং শিবিরের মানুষের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করা। মানবিক সহানুভূতি ছাড়িয়ে, এখন সময় বাস্তব ও বাস্তবায়নযোগ্য সমাধানের পথে এগোনোর। এই সংকটে বাংলাদেশকে নেতৃত্বের দৃষ্টান্ত স্থাপন করতেই হবে—নিজেদের স্বার্থ ও মানবিকতার ভারসাম্য রেখে।

এটাই এখন সময়ের দাবি, এটাই আমাদের জাতীয় দায়িত্ব।

আলীম

×