ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ৩০ জুন ২০২৫, ১৭ আষাঢ় ১৪৩২

হাওরের গর্ব ইমা এখন এশিয়ার মঞ্চে—চীনে লড়ছেন বাংলাদেশের হয়ে

এস এম মিজান, সুনামগঞ্জ

প্রকাশিত: ২০:২৫, ২৯ জুন ২০২৫

হাওরের গর্ব ইমা এখন এশিয়ার মঞ্চে—চীনে লড়ছেন বাংলাদেশের হয়ে

ছবি: জনকন্ঠ

সম্ভাবনার এক উজ্জ্বল নাম হয়ে উঠছেন নাদিরা তালুকদার ইমা। হাওরের বুক চিরে উঠে আসা এই কিশোরী এখন আন্তর্জাতিক ক্রীড়াঙ্গনে বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করছেন। আগামীকাল (৩০ জুন) চীনে শুরু হতে যাওয়া অনূর্ধ্ব-১৮ এশিয়া কাপ হকিতে অংশ নিতে বাংলাদেশ নারী হকি দলের সঙ্গে রওনা হচ্ছেন সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জ উপজেলার ঢালাগাঁও গ্রামের কৃতী কন্যা ইমা।

বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (বিকেএসপি) থেকে প্রশিক্ষণ নেওয়া ইমা বর্তমানে একজন প্রতিশ্রুতিশীল হকি খেলোয়াড় হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। এ বছরই তিনি এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন। মাঠে তার জার্সি নম্বর ১৬।

পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, মুসলিম তালুকদার ও মাজেদা তালুকদারের নয় সন্তানের মধ্যে সর্বকনিষ্ঠ ইমা ছোটবেলা থেকেই খেলাধুলার প্রতি গভীর আগ্রহী ছিলেন। তার আগ্রহ দেখে পরিবার তাকে ভর্তি করায় বিকেএসপিতে, আর সেখান থেকেই শুরু হয় তার স্বপ্নযাত্রা।

২০২৪ সালে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রথমবারের মতো দেশের প্রতিনিধিত্ব করেন ইমা। সিঙ্গাপুরে অনুষ্ঠিত এএইচএফ কাপ হকিতে বাংলাদেশ দল রানার্সআপ হয় এবং ইমা ছিলেন সেই দলের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। একই বছরের ডিসেম্বরে ওমানে অনুষ্ঠিত এশিয়া কাপে অংশ নেন তিনি, যেখানে দল দশটি অংশগ্রহণকারী দেশের মধ্যে নবম স্থান অর্জন করে।

চলমান অনূর্ধ্ব-১৮ এশিয়া কাপে বাংলাদেশের মেয়েরা ৪ জুলাই জাপানের, ৫ জুলাই উজবেকিস্তানের ও ৭ জুলাই হংকংয়ের মুখোমুখি হবে। সেমিফাইনাল ৯ জুলাই ও ফাইনাল ম্যাচটি অনুষ্ঠিত হবে ১৩ জুলাই। নির্ধারিত সূচি অনুযায়ী ১৪ জুলাই দেশে ফিরবে দল।

ইমার বড় ভাই হোসাইন আহমদ জানান, “ইমা ছোট থেকেই খেলাধুলা ভালোবাসত। আমরা তার আগ্রহকে দমন করিনি বরং সবসময় সাহস দিয়েছি। আজ সে শুধু আমাদের নয়, পুরো সুনামগঞ্জের গর্ব।”

নিজের অনুভূতি জানাতে গিয়ে ইমা বলেন, “আমি এখনো শিখছি, উন্নতির চেষ্টা করছি। বিকেএসপির সহায়তায় আজ এই পর্যায়ে এসেছি। দেশের হয়ে খেলতে চীন যাচ্ছি—এটা আমার জীবনের বড় অর্জন। আমি চাই বাংলাদেশের জন্য সম্মান বয়ে আনতে পারি। সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন।”

নাদিরা তালুকদার ইমার এই অর্জন কেবল একটি ব্যক্তিগত সাফল্য নয়, এটি শান্তিগঞ্জের প্রত্যন্ত হাওরাঞ্চলের মানুষের জন্য গর্বের ও অনুপ্রেরণার উৎস। এই সাফল্য প্রমাণ করে—সুযোগ, সঠিক দিকনির্দেশনা এবং পরিবারের সমর্থন পেলে বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকেও উঠে আসতে পারে বিশ্বমানের ক্রীড়াবিদ।

Mily

×