
মেহেদি হাসান মিরাজ ও লিটন কুমার দাস
দুই বছরে ১৪ টেস্টে নেতৃত্ব দিয়ে ৯ হারের বিপরীতে জয় ৪ ম্যাচে- শান্ত যে ‘কিংবদন্তি’ অধিনায়ক নন, পরিসংখ্যানেই সেটি পরিষ্কার। তবু আক্ষেপে পুড়তে হতে পারে বাংলাদেশে ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) কর্তাদের! কারণ সাকিব-তামিম পরবর্তী কঠিন সময়ে সাদা পোশাকে দায়িত্ব দেওয়ার জন্য কাউকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। এমনকি সে সময়ের ভারপ্রাপ্ত লিটন দাসও অনীহা প্রকাশ করেছিলেন।
অথচ নাজমুল হোসেন শান্ত দায়িত্বটা নিয়েছিলেন স্বতস্ফূর্তভাবে। হাঁফ ছেড়ে বাঁচা কর্তারা তিন ফর্যাটেই দায়িত্ব দেন এই ওপেনারকে। তাৎপর্যপূর্ণভাবে দেখলে এর অর্থ বাংলাদেশের ক্রিকেটে শান্তর অবস্থান ‘বিশেষ’ জায়গায়। ব্যাটিংয়ে মনোযোগী হতে স্বেচ্ছায় টি২০’র দায়িত্ব ছাড়েন। কিন্ত শ্রীলঙ্কা সফরের ঠিক আগে আলোচনা না করেই তাকে সরিয়ে ওয়ানডে অধিনায়ক করা হয় মেহেদি হাসান মিরাজকে। গুঞ্জন ওঠে অভিমানে টেস্টের অধিনায়কত্ব ছাড়তে যাচ্ছেন শান্ত। সেটিই সত্যি হয়েছে। প্রশ্ন, তা হলে কে হতে যাচ্ছেন টেস্টের অধিনায়ক? মিরাজ এগিয়ে, তবে লিটনও থাকবেন সে দৌড়ে।
বাংলাদেশের পরবর্তী টেস্ট খেলা আগামী নভেম্বর মাসে, ঘরের মাঠের আয়ারল্যান্ড সিরিজে। ফলে নতুন টেস্ট অধিনায়ক হিসেবে যাকেই বেছে নেওয়া হোক, সিদ্ধান্ত নিতে হাতে অনেক সময় পাচ্ছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড। আইসিসির বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ২০২৫-২৭ চক্রে এক বছরের জন্য শান্তকে অধিনায়ক এবং মিরাজকে সহ-অধিনায়ক করেছিল বিসিবি।
নতুন চক্রের প্রথম সিরিজ খেলেই পদত্যাগ করলেন শান্ত। মিরাজকে টেস্ট অধিনায়ক করে দেওয়াই এখন সবচেয়ে সহজ এবং অনুমিত, ‘শান্ত ভালো করছিল টেস্টে। এখন যেহেতু ছেড়ে দিয়েছে তা হলে ব্যাটিংয়ে আরও মনোযোগ বাড়াতে পারবে। তবে পরবর্তী অধিনায়ক হিসেবে মিরাজই এগিয়ে থাকবে। লিটনের কথাও আসতে পারে তবে মিরাজই এগিয়ে মনে হয়। মিরাজ অধিনায়ক হিসেবে যথেষ্ট ক্যাপাবল।’ বলছিলেন জাতীয় দলের সাবেক নির্বাচক হান্নান সরকার।
লম্বা সময় ধরেই অধিনায়কত্বের আলোচনায় ছিল মিরাজের নাম। শ্রীলঙ্কা সিরিজ দিয়েই নতুন ওয়ানডে অধিনায়ক হিসেবে যাত্রা শুরু করছেন মিরাজ। টেস্টে মিরাজের পারফরম্যান্স বেশ উজ্জ্বল অনেক আগে থেকেই। আগেও টেস্টে অধিনায়কত্ব করার অভিজ্ঞতা আছে।
শান্তর অনুপস্থিতিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে পুরো একটি সিরিজেই নেতৃত্ব দেন মিরাজ। দুই ম্যাচের সেই সিরিজে তার নেতৃত্বে দেশের বাইরে ১-১ ড্র নিয়েই ফিরেছিল টাইগাররা। ২০২৪ সালের ২২-২৬ নভেম্বর আন্টিগায় প্রথম টেস্টে বাংলাদেশকে ২০১ রানে হারায় ক্যারিবিয়ানরা। এরপর ৩০ নভেম্বর-৩ ডিসেম্বর কিংস্টনে দ্বিতীয় টেস্টে ১০১ রানে জয় পায় বাংলাদেশ। শান্তর অনুপস্থিতিতে মিরাজেরও যেহেতু অধিনায়কত্ব করার অভিজ্ঞতা আছে এবং দেশের বাইরে টেস্ট ড্র করে আসার অভিজ্ঞতা আছে, আইসিসি র্যাঙ্কিংয়ের দ্বিতয়ীসেরা অলরাউন্ডারের ওপর সাদা পোশাকের ফরম্যাটে আস্থা রাখতেই পারে বিসিবি।
লিটন দাসকেও অবশ্য বিবেচনায় না রাখার সুযোগ নেই। অতীতে মূল অধিনায়কের অনুপস্থিতিতে বেশ কয়েকবার অধিনায়কত্ব করতে হয়েছে লিটনকে। টি২০তে ২০২৬ বিশ্বকাপ পর্যন্ত অধিনায়কের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তাকে। তার অধীনে ওয়েস্ট ইন্ডিজে ৩-০ ব্যবধানে টি২০ সিরিজও জিতেছে বাংলাদেশ। এ ছাড়া বিপিএলেও অধিনায়কত্ব করার অভিজ্ঞতা রয়েছে লিটনের।
সাদা বলে যত অধারাবাহিকই হোন, টেস্টে লিটন বরাবরই দারুণ। সব মিলিয়ে টেস্ট অধিনায়ক হিসেবে দারুণ পছন্দ হতে পারেন লিটন দাস। গত বছর এক সাক্ষাৎকারে তাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, অধিনায়কত্ব নিতে প্রস্তুত কি না? জবাবে তাইজুল বলেছিলেন, ‘যেহেতু ১০ বছর ধরে খেলেছি, অধিনায়কত্ব নিতে পুরোটাই তৈরি।’
যদিও তার নেতৃত্বে আসার সম্ভাবনা তেমন নেই। আগে কখনো বাংলাদেশকে কোনো ফরম্যাটে নেতৃত্ব দেননি তাইজুল। বিপিএলেও করেননি অধিনায়কত্ব। এ ছাড়া তাসকিন আহমেদ বিপিএলের সর্বশেষ আসরে কিছু ম্যাচে দুর্বার রাজশাহীর অধিনায়কত্ব করেছেন। বেশ প্রশংসিত হয়েছিলেন অধিনায়ক তাসকিন। তবে জাতীয় দলে তাসকিনকে অধিনায়ক করাটা একটু কঠিনই বটে। চোটের সঙ্গে নিয়মিতই লড়াই চালাতে হয় তাসকিনকে।
যার ফলে টানা ম্যাচ না খেলিয়ে বিশ্রাম দিয়ে দিয়ে তাকে খেলাতে হয়। ওয়ার্কলোড ম্যানেজের ব্যাপার থাকায় তাকে অধিনায়ক করলে বোলিংয়েও প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। অধিনায়ক তাসকিনকে পেতে গিয়ে নিশ্চিতভাবেই বোলার তাসকিনকে হারিয়ে ফেলতে চাইবে না বোর্ড।