ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ০২ আগস্ট ২০২৫, ১৮ শ্রাবণ ১৪৩২

অর্থনীতি বিভাগের সব খবর

সঙ্কোচনমূলক মুদ্রানীতি ঘোষণা নীতি সুদহার অপরিবর্তিত

সঙ্কোচনমূলক মুদ্রানীতি ঘোষণা নীতি সুদহার অপরিবর্তিত

নীতি সুদহার অপরিবর্তিত রেখে নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণা করল বাংলাদেশ ব্যাংক। মূল্যস্ফীতি ৭ শতাংশের নিচে নামলেই প্রধান নীতি সুদহার কমানো হবে। বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধির প্রাক্কলন আগামী ডিসেম্বরে ৭ দশমিক ২ এবং জুনে ৮ শতাংশ অর্জনের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। আগের মুদ্রানীতিতে বেসরকারি খাতের ঋণ গত জুনে ৯ দশমিক ৮ শতাংশ লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে অর্জিত হয়েছে ৬ দশমিক ৪ শতাংশ।  বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংকের সভাকক্ষে চলতি অর্থবছরের মুদ্রানীতি ঘোষণা করেন গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর। সংবাদ সম্মেলনে চার ডেপুটি গভর্নর, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ, গবেষণা বিভাগের নির্বাহী পরিচালক, বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও অন্য কর্মকর্তারা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। গভর্নর বলেন, মূল্যস্ফীতি ধীওে ধীরে কমছে। তবে এখন আমাদের কাক্সিক্ষত মাত্রায় আসেনি। আমাদের লক্ষ্য মূল্যস্ফীতি ৩ থেকে ৫ শতাংশে নামিয়ে আনা। মূল্যস্ফীতি কমে গত জুনে ৮ দশমিক ৪৮ শতাংশে নেমেছে। বিনিময় হার স্থিতিশীল থাকা এবং উৎপাদন ভালো হওয়ায় এটা কমছে। চাল ছাড়া সব পণ্যের দর স্থিতিশিল রয়েছে। তিনি বলেন, ‘বর্তমান বাস্তবতায় ৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি খারাপ না। একটা বিষয় মাথায় রাখতে হবে- প্রবৃদ্ধির জন্য রাজনৈতিক স্থিতিশিলতা একটা বড় বিষয়।  এক প্রশ্নের তিনি বলেন, আমানতকারীদের আতঙ্কের কিছু নেই। তাদের সঞ্চয় সম্পূর্ণ নিরাপদ। এবার বড় আকারে সার্জারি করা হবে। সরকার বড় অঙ্কের তহবিল জোগান দেবে। মুনাফাসহ সেই টাকা ফেরত নিতে পারবে সরকার।’ নতুন মুদ্রানীতিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক আপাতত প্রধান নীতি সুদহার (রেপো) ১০ শতাংশে অপরিবর্তিত রেখেছে। মূলত ব্যাংকগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে সরকারি সিকিউরিটিজ বন্ধক রেখে রেপোর বিপরীতে স্বল্পমেয়াদি ঋণ নেয়। অন্যদিকে, নতুন মুদ্রানীতিতে আন্তঃব্যাংক ধার নেওয়ার ক্ষেত্রে নীতি সুদহার স্ট্যান্ডিং লেন্ডিং ফ্যাসিলিটি (এসএলএফ) ১১ দশমিক ৫০ শতাংশ অপরিবর্তিত থাকছে। আর স্ট্যান্ডিং ডিপোজিট ফ্যাসিলিটি (এসডিএফ) ৮ শতাংশই থাকছে।

দেশে ২৪ শতাংশ মানুষের  বহুমাত্রিক দারিদ্র্যে  বসবাস

দেশে ২৪ শতাংশ মানুষের  বহুমাত্রিক দারিদ্র্যে  বসবাস

বাংলাদেশে প্রতি চারজন নাগরিকের একজন অর্থাৎ মোট জনসংখ্যার ২৪.০৫ শতাংশ বা আনুমানিক ৩ কোটি ৯৭ লাখ ৭৭ হাজার মানুষ বহুমাত্রিক দারিদ্র্যে বাস করছে। দেশের প্রথম জাতীয় বহুমাত্রিক দারিদ্র্য সূচক (এমপিআই) প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে। বৃহস্পতিবার পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ (জিইডি) এই প্রতিবেদন প্রকাশ করে। আয়-ভিত্তিক দারিদ্র্যের প্রচলিত মাপকাঠির বাইরে গিয়ে এমপিআই স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও জীবনমানসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বঞ্চনার চিত্র তুলে ধরে দারিদ্র্য পরিমাপের একটি বিস্তৃত রূপ প্রদান করে। ২০১৯ সালের তথ্যের ভিত্তিতে তৈরি করা এই প্রতিবেদনে গ্রাম ও শহরের মধ্যে দারিদ্র্যের প্রকট বৈষম্য ফুটে উঠেছে। গ্রামীণ অঞ্চলে বহুমাত্রিক দারিদ্র্যের হার ২৬.৯৬ শতাংশ, যেখানে শহরাঞ্চলে এই হার ১৩.৪৮ শতাংশ। তবে লিঙ্গভিত্তিক দারিদ্র্যে খুব বেশি ফারাক নেই। পুরুষপ্রধান পরিবারে এমপিআই স্কোর ০.১০৬ এবং নারীপ্রধান পরিবারে ০.১০৫। প্রতিবেদনটি অঞ্চলভিত্তিক দারিদ্র্যেও তীব্র বৈষম্যের চিত্র তুলে ধরে। সিলেট বিভাগে সর্বোচ্চ ৩৭.৭০ শতাংশ মানুষ বহুমাত্রিক দারিদ্র্যে বাস করে। পাশাপাশি পাঁচটি জেলা বান্দরবান, কক্সবাজার, সুনামগঞ্জ, রাঙামাটি ও ভোলায় এই হার ৪০ শতাংশের বেশি। স্বাস্থ্য, শিক্ষা এবং জীবনযাত্রার মানের ক্ষেত্রে শিশুরা যেসব বঞ্চনার শিকার হয় এবং যেগুলো প্রতিনিয়ত তাদের অধিকার ও সম্ভাবনাকে ব্যাহত করে চলেছে, সেগুলো অবিলম্বে মোকাবিলার প্রয়োজনীয়তাকে গুরুত্বের সঙ্গে তুলে ধরা হয়েছে প্রতিবেদনে। শিশুরা দারিদ্র্যের সবচেয়ে বেশি শিকার। বাংলাদেশের প্রতি ১০ শিশুর মধ্যে প্রায় তিনজন (২৮ দশমিক ৯ শতাংশ) বহুমাত্রিক দারিদ্র্যের মধ্যে বাস করছে। এই হার দারিদ্র্যের মধ্যে বসবাসকারী প্রাপ্তবয়স্কদের হারের (২১ দশমিক ৪৪ শতাংশ) চেয়ে উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি। এর ফলে অসামঞ্জস্যপূর্ণভাবে শিশুরা বাংলাদেশে বিদ্যমান দারিদ্র্যের কঠিন চ্যালেঞ্জগুলোর মাধ্যমে প্রভাবিত হচ্ছে। অর্থনৈতিক দারিদ্র্য ও খর্বকায় শিশুর সংখ্যা কমে যাওয়ার ক্ষেত্রে অগ্রগতি হলেও বাংলাদেশে বহুমাত্রিক শিশু দারিদ্র্য এখনো একটি বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে রয়েছে। কারণ প্রাপ্তবয়স্কদের তুলনায় শিশুদের বহুমাত্রিক দারিদ্র্যের শিকার হওয়ার শঙ্কা ৩৫ শতাংশ বেশি। প্রতিবেদন অনুযায়ী, গ্রামীণ এলাকার শিশুরা শহরাঞ্চলের শিশুদের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি মাত্রায় বহুমাত্রিক দারিদ্র্যের শিকার হচ্ছে। সূচকে স্কুলে উপস্থিতিকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। তাতে দেখা গেছে, শিশুর শিক্ষা-সংক্রান্ত বঞ্চনাগুলো শিশু দারিদ্র্যের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ চালক। বাংলাদেশে ইউনিসেফের প্রতিনিধি রানা ফ্লাওয়ার্স এ বিষয়ে বলেন, যখন দারিদ্র্যের একাধিক মাত্রাগুলোকে কার্যকরভাবে মোকাবিলা করা যায়, তখন বর্তমান ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের শিশুদারিদ্র্য প্রতিরোধ করা সম্ভব।   ঢাকায় এক মতবিনিময় সেমিনারে আয়-ভিত্তিক পরিমাপের বাইরে গিয়ে দারিদ্র্য নিরূপণের জাতীয় প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে বিবেচিত এই প্রতিবেদনটি আনুষ্ঠানিকভাবে উন্মোচন করা হয়। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী আনিসুজ্জামান চৌধুরী। জিইডি সদস্য (সচিব) মনজুর হোসেন সভায় সভাপতিত্ব করেন। আলোচক হিসেবে অংশ নেন পিপিআরসি’র নির্বাহী চেয়ারম্যান অর্থনীতিবিদ হোসেন জিল্লুর রহমান এবং বিআইডিএস-এর মহাপরিচালক একে এনামুল হক। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব আলেয়া আখতার, বাংলাদেশে ইউনিসেফ প্রতিনিধি রানা ফ্লাওয়ার্স এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের প্রথম কাউন্সেলর ও ডেভেলপমেন্ট কো-অপারেশন ইনচার্জ এডউইন কোয়েককোক। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস), ইউনিসেফ, অক্সফোর্ড   পোভার্টি অ্যান্ড হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট ইনিশিয়েটিভ (ওপিএইচআই) এবং অন্যান্য জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সহযোগিতায় এই এমপিআই সূচক তৈরি করা হয়েছে। পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদের লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, এমপিআই কাঠামো টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (এসডিজি) ১-এর আলোকে আরও কার্যকর ও লক্ষ্যনির্দিষ্ট উন্নয়ন উদ্যোগ গ্রহণে সহায়ক। আনিসুজ্জামান চৌধুরী এমপিআই-এর ফলাফল জাতীয় নীতিমালা ও পরিকল্পনায় সংযুক্ত করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন এবং আঞ্চলিক বৈষম্য আরও ভালোভাবে বোঝার জন্য গবেষণা বাড়ানোর আহ্বান জানান। সমাপনী বক্তব্যে জিইডি সদস্য মনজুর হোসেন নিয়মিতভাবে এমপিআই প্রতিবেদন প্রকাশে জিইডির প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন এবং বলেন, নীতিনির্ধারক, গবেষক ও উন্নয়নকর্মীদের জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ উপকরণ হিসেবে কাজ করবে, যা একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক ও সমতাভিত্তিক বাংলাদেশ গঠনে সহায়তা করবে।

‎বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা কমাল কেন্দ্রীয় ব্যাংক

‎বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা কমাল কেন্দ্রীয় ব্যাংক

‎‎মূল্যস্ফীতি মোকাবিলায় বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ৯ দশমিক ৮ শতাংশ থেকে কমিয়ে আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত ৭ দশমিক ২০ শতাংশ নির্ধারণ করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। আর আগামী বছরের জুন পর্যন্ত নির্ধারণ করেছে ৮ শতাংশ।  ‎ ‎বাংলাদেশ ব্যাংক ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রথমার্ধের মুদ্রানীতিতে এই ঘোষণা দিয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর মুদ্রানীতি ঘোষণা করেন। ‎ ‎‎গত অর্থবছরের মে মাসে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি ছিল ৬ দশমিক ৬ শতাংশ। অথচ পুরো ২০২৪-২৫ অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রাই ছিল ৯ দশমিক ৮ শতাংশ। ‎ ‎মুদ্রানীতি বিবরণী অনুযায়ী, ডিসম্বর পর্যন্ত সরকারি খাতে ঋণের আনুমানিক প্রবৃদ্ধি হবে ২০ দশমিক ৪ শতাংশ। আর জুনে তা হবে ১৮ দশমিক ১ শতাংশ। 

চার খাতের সক্ষমতা বাড়াতে ১৫ সদস্যের উচ্চপর্যায়ের কমিটি গঠন

চার খাতের সক্ষমতা বাড়াতে ১৫ সদস্যের উচ্চপর্যায়ের কমিটি গঠন

স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের পর চার খাতের সক্ষমতা বাড়াতে কী কী করা যেতে পারে তা পর্যালোচনা করতে উচ্চপর্যায়ের কমিটি গঠন করা হয়েছে। ১৫ সদস্যের এ কমিটির প্রধান করা হয়েছে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের মুখ্য সচিবকে। সালের ২৪ নভেম্বর স্বল্পোন্নত দেশ থেকে বাংলাদেশের উত্তরণের পর রপ্তানি নির্ভর সাবসিডি বা নগদ সহায়তা প্রদান করা সম্ভব হবে না। এই প্রেক্ষাপট বিবেচনায় উদীয়মান বা প্রতিশ্রুতিশীল খাতগুলো থেকে চার খাত যথা- চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, পাটজাত পণ্য, কৃষি ও প্রক্রিয়াজাত কৃষি পণ্য এবং ফার্মাসিউটিক্যালস খাতের রপ্তানি সক্ষমতা বাড়াতে কী কী করা যেতে পারে তা পর্যালোচনা প্রয়োজন।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উদ্যোগে অস্থিরতা কমেছে ডলার বাজারে

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উদ্যোগে অস্থিরতা কমেছে ডলার বাজারে

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কার্যকর হস্তক্ষেপের পর অস্থিরতা কমেছে দেশের ডলার বাজারে। আন্তঃব্যাংক বাণিজ্যে এখন ডলার কিনতে হচ্ছে ১২১ টাকায় এবং বিক্রি হচ্ছে ১২১ টাকা ৬০ পয়সায় গত বৃহস্পতিবার থেকেই অপরিবর্তিত রয়েছে। এর আগে ডলারের দর ১৪ জুলাই নেমেছিল ১১৯ টাকা ৫০ পয়সায়। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক বাজারে সরাসরি হস্তক্ষেপ করে স্থিতি ফেরায় এই দর আবারও ঊর্ধ্বমুখী হয়েছে। সূত্র জানায়, নিলামের মাধ্যমে দুই দফায় ৪৩ কোটি ৪৫ লাখ ডলার কিনেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এতে বাজারে সরবরাহ কিছুটা সীমিত হওয়ায় মান বাড়তে শুরু করে ডলারের।  বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, এক বছরের বেশি সময় ধরে ডলার ১২১-১২২ টাকার মধ্যে লেনদেন হচ্ছিল। তবে আইএমএফের চাপ ও শর্ত মেনে ১৩ মে থেকে বাজারভিত্তিক বিনিময় হার চালুর পর সর্বোচ্চ ১২২ টাকা ৯৫ পয়সায় ওঠে ডলার। সেখান থেকে পতনের ধারায় পড়ে এটি আবার নেমে আসে ১১৯-এর ঘরে।