ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ০২ আগস্ট ২০২৫, ১৮ শ্রাবণ ১৪৩২

ডাইনিবিদ্যার অভিযোগে এক পরিবারের পাঁচ সদস্যকে পুড়িয়ে হত্যা

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশিত: ১২:১৪, ২ আগস্ট ২০২৫

ডাইনিবিদ্যার অভিযোগে এক পরিবারের পাঁচ সদস্যকে পুড়িয়ে হত্যা

ছবি: সংগৃহীত

২০২৫ সালের ৬ জুলাই রাত ১০টার দিকে ভারতের বিহার রাজ্যের পূর্ণিয়া জেলার তেতগামা গ্রামের এক ভয়ংকর ঘটনা ঘটে। ডাইনিবিদ্যার অভিযোগে ওরাঁও জনগোষ্ঠীর পাঁচজনকে একদল গ্রামবাসী নির্মমভাবে পিটিয়ে ও আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করে। মৃতদের মধ্যে ছিলেন কাটো দেবী (৭১), তাঁর ছেলে বাবুলাল ওরাঁও, পুত্রবধূ সীতা দেবী, নাতি মঞ্জিত ওরাঁও এবং নববধূ রানি দেবী।

এ ঘটনায় বেঁচে যান কেবল বাবুলাল ও সীতার কিশোর সন্তান, যারা এখন পুলিশের নিরাপত্তা হেফাজতে আছেন।

ভুক্তভোগীদের স্বজন ও প্রতিবেশী মনীষা দেবী জানান, স্থানীয় এক বাসিন্দা রামদেব ওরাঁওয়ের ছেলে কিছুদিন আগে অসুস্থ হয়ে মারা যান। তিনি কাটো দেবীর ওপর ‘ডাইনিবিদ্যা’ প্রয়োগ করে সন্তানকে মেরে ফেলার অভিযোগ তোলেন। সেই রাতে তিনি আরও এক অসুস্থ আত্মীয়কে নিয়ে কাটোদের বাড়িতে আসেন। সাথে ছিলেন এক ওঝা (ঝাড়ফুঁককারী), যিনি কাটো ও সীতা দেবীকে 'ডাইনি' বলে ঘোষণা দেন। 

এরপর শুরু হয় বিভীষিকার রাত। একে একে পাঁচজনকে ঘর থেকে বের করে গ্রামের পুকুরের পাশে নিয়ে যাওয়া হয়। পথেই চলে নির্মম পিটুনি, তারপর পেট্রোল ঢেলে জীবন্ত আগুনে পোড়ানো হয়। অভিযোগ অনুযায়ী, লাশগুলো বস্তায় ভরে ট্রাক্টরে করে সরিয়ে ফেলা হয়।

ঘটনাস্থল মুফাসসিল থানার মাত্র ৭ কিলোমিটার দূরে হলেও, পুলিশ খবর পায় ঘটনার ১১ ঘণ্টা পর। জেলা প্রশাসক অাংশুল কুমার ঘটনাটিকে ব্যর্থতা বলে স্বীকার করেছেন। ইতোমধ্যে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বরখাস্ত হয়েছেন এবং ২৩ জনের নাম উল্লেখসহ ১৫০-২০০ অজ্ঞাতনামা ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। এরমধ্যে চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বাকিরা পলাতক।

এই ভয়াবহ হত্যাকাণ্ড ভারতের আদিবাসী সমাজে কুসংস্কার ও শিক্ষার অভাব কতটা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে, তার উদাহরণ। স্থানীয় সমাজকর্মী মীরা দেবী বলছেন, ‘‘এখানে ওঝাদের কথাই শেষ কথা, ডাক্তারের চেয়ে তাদের বিশ্বাস করা হয় বেশি।’’ গ্রামের বেশিরভাগ শিশুই স্কুলে যায় না, তারা মা-বাবার সঙ্গে ইটভাটায় কাজ করে।

এই হত্যাকাণ্ডের পর তেতগামা গ্রাম প্রায় জনশূন্য। অধিকাংশ বাড়ি তালাবদ্ধ, অনেকে তাড়াহুড়ো করে পালিয়ে গেছেন। কাটো দেবীর পরিবারের চার ছেলে ও তাদের পরিবার ছাড়া কেউ থাকছেন না গ্রামে। তারা পুলিশি নিরাপত্তায় রয়েছেন।

এই ঘটনার পর দেশজুড়ে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। একদিকে রাষ্ট্রের নিরাপত্তা কাঠামোর ব্যর্থতা, অন্যদিকে সমাজে কুসংস্কার ও শিক্ষার ভয়াবহ ঘাটতি, সবকিছুই নগ্নভাবে সামনে এসেছে।

একজন প্রতিবেশী বলেন, “আমরা চুপ করে দাঁড়িয়ে ছিলাম, দেখছিলাম আমাদের প্রতিবেশীরা মরার জন্য কাতরাচ্ছেন, কিন্তু কিছুই করতে পারিনি। সেই দৃশ্য এখনো চোখে ভাসে।”

মুমু ২

×