ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ০১ আগস্ট ২০২৫, ১৭ শ্রাবণ ১৪৩২

চট্টগ্রাম-মোংলা বন্দরকে সাশ্রয়ী মূল্যে সেবা নিশ্চিত করতে হবে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার

প্রকাশিত: ০০:৫০, ১ আগস্ট ২০২৫

চট্টগ্রাম-মোংলা বন্দরকে সাশ্রয়ী মূল্যে সেবা নিশ্চিত করতে হবে

আমীর খসরু মাহমুদ, রিয়ার এডমিরাল শাহীন রহমান ও সাকিফ শামীম

বাংলাদেশের সমুদ্র বন্দরের সীমিত ক্ষমতা এবং অন্যান্য প্রতিবন্ধকতার কারণে ভৌগোলিক অবস্থানগত সুবিধা ও শক্তিশালী উৎপাদন ভিত্তি সম্পূর্ণ কাজে লাগানো যায়নি। এই অদক্ষতা বাংলাদেশের বৈশ্বিক প্রতিযোগিতা সক্ষমতার দুর্বলতা, উচ্চ ব্যবসা ও লেনদেন ব্যয় এবং বাণিজ্য বিলম্বের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। বাংলাদেশের বাণিজ্যের লাইফলাইন চট্টগ্রাম বন্দর। দ্বিতীয় বৃহত্তম সমুদ্র বন্দর মোংলার সক্ষমতার পুরোটা ব্যবহার হচ্ছে না।

এ অবস্থায় চট্টগ্রাম বন্দরে নিয়মিত কন্টেইনার জট, স্টোর চার্জ ও ট্যারিফ বৃদ্ধি এবং ই-পোর্ট সিস্টেম পুরোপুরি কার্যকর না হওয়ায় আমদানি-রপ্তানি ব্যাহত হচ্ছে। চট্টগ্রাম বন্দরের ব্যবস্থাপনা ও কন্টেইনার টার্মিলাল কারা পরিচালনা করবে, সেই আলোচনাও রয়েছে ব্যবসায়ী ও রাজনৈতিক মহলে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দরের সঠিক ব্যবহারের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতি এগিয়ে নেওয়া সম্ভব। এজন্য একটি পরিকল্পিত রোডম্যাপ থাকা প্রয়োজন। 
সম্প্রতি এক আলোচনা সভায় চট্টগ্রাম বন্দর নিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরের কনটেইনার টার্মিনাল বিদেশিদের হাতে তুলে দেওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া কোনো অরাজনৈতিক সরকারের কাজ নয়। এই বন্দরের সক্ষমতা বাড়ানো কিংবা পরিচালনার বিষয়ে রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত আসতে হবে। অপর এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, আগামী দিনে ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে বাংলাদেশের অর্থনীতির উন্নয়ন করা হবে।

এজন্য প্রয়োজনীয় সব ধরনের আইন পরিবর্তন করা হবে। সরকারের কাজ হচ্ছে ব্যবসা, বাণিজ্য ও বিনিয়োগের মাধ্যমে অর্থনীতিকে ফেসিলিটেড করা, অর্থাৎ সহযোগিতার মাধ্যমে জনগণের কাছে নিয়ে যাওয়া। কিন্তু বিগত দিনে জনগণের কাছ থেকে কেড়ে নিয়ে কিছু লুটেরাদের হাতে অর্থনীতি তুলে দেওয়া হয়েছিল। গত দেড় দশকে মুক্ত অর্থনীতির পরিবেশে কেউ কাজ করতে পারেনি। দেশের অর্থনীতি এখন গর্তের কিনারে আছে। গর্তের কিনার থেকে অর্থনীতিকে বের করে আনতে হলে ব্যবসায়ীদের সমর্থন দরকার।

সম্প্রতি মোংলা বন্দরের সক্ষমতা এবং কিভাবে এই বন্দর এগিয়ে নেওয়া হবে, সেই বিষয়ে জনকণ্ঠের সঙ্গে কথা বলেন পোর্ট চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল শাহীন রহমান। এছাড়া আসন্ন এফবিসিসিআই নির্বাচনে সহসভাপতি প্রার্থী ও  ল্যাবএইড ক্যান্সার হাসপাতাল অ্যান্ড সুপার স্পেশালিটি সেন্টারের ম্যানেজিং ডিরেক্টর সাকিফ শামীম জনকণ্ঠকে বলেন, আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের গতি বাড়াতে হলে চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দরের সক্ষমতা বাড়াতে হবে। ইতোমধ্যে আমদানি-রপ্তানিতে ৩০ শতাংশ শুল্ক (ট্যারিফ) বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। শুল্কের হার বাড়ানোর খবর ব্যবসায়ীদের দুশ্চিন্তা বহুগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। 
ব্যবসায়ীদের স্বার্থে ট্যারিফ ও  চার্জ কমিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরকে সাশ্রয়ী মূল্যে আন্তর্জাতিক সেবা নিশ্চিত করতে হবে। রিয়ার অ্যাডমিরাল শাহীন রহমান আরও বলেন, মোংলা পোর্টের সক্ষমতা পুরোপুরি কাজে লাগানো যাচ্ছে না। অথচ এই বন্দর ব্যবহার করলে কন্টেইনার জটে পড়তে হয় না। জেটি ও শেডগুলো প্রায় সময়ই খালি থাকে। তিনি জানান, বছরে দেড় হাজার জাহাজ এখানে নোঙর করতে পারলেও সেখানে এখন ৮৩৫টি জাহাজ আসছে।

তাই আমদানি-রপ্তানিকারক ব্যবসায়ীদের কাছে অনুরোধ থাকবে, আপনারা মোংলা পোর্ট ব্যবহারে উৎসাহিত হউন। তিনি বলেন, মোংলাপোর্ট উন্নয়নে ইতোমধ্যে চায়নার সহযোগিতায় কিছু প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। নতুন ২টি জেটি ও ২টি ইয়ার্ডসহ অত্যাধুনিক সরঞ্জামাদি বন্দরে সংযোজন করা হয়েছে। ফলে, বন্দরের সেবার মান বাড়ছে। একই সঙ্গে সরকারের রাজস্ব আদায়ও বেড়েছে। এদিকে, সাকিফ শামীম বলেন, আমদানি-রপ্তানিতে ৩০ শতাংশ শুল্ক (ট্যারিফ) বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। শুল্কের হার বাড়ানোর খবর ব্যবসায়ীদের দুশ্চিন্তা বাড়ছে।

পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে দিন শেষে বাড়তি মাশুল ভোক্তার পকেট থেকেই যাবে। তাতে পণ্যের দাম বেড়ে মূল্যস্ফীতিও বাড়ার শঙ্কা রয়েছে। অন্যদিকে, রপ্তানি পণ্যের ক্ষেত্রে পণ্য পরিবহনের খরচ বাড়বে, যা বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় রপ্তানিকারকরা পিছিয়ে যেতে পারেন। বন্দরের ব্যয় কম হলে ব্যবসায়ের ব্যয় কমে আসে, উদ্যোক্তাদের প্রতিযোগিতা সক্ষমতাও বাড়ে। সম্প্রতি তিনি বন্দর ব্যবস্থাপনা, স্টোর রেন্ট, লোডিং-আনলোডিং ফি, রিভার ডিউস, পোর্ট ডিউস, স্টাফিং-আনস্টাফিং ফি, বন্দর সিন্ডিকেট, ই-পোর্ট সিস্টেম, পোর্ট ব্লকচেইন, পোর্ট ট্রাকিং, ন্যাশনাল পোর্ট কমিউনিটি সিস্টেম, জীবন রক্ষাকারী খাদ্যপণ্য, ওষুধ এবং এ শিল্পের কাঁচামাল আমদানিতে বন্দর শুল্ক ব্যাপকহারে কমানো ও আসন্ন এফবিসিসিআই নির্বাচন সহসভাপতি প্রার্থী হওয়াসহ অর্থনীতির নানা বিষয় নিয়ে সম্প্রতি গণ্যমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন এই ব্যবসায়ী নেতা। সাকিফ শামীম বলেন, আমাদের এই দেশ বরাবরই একটি আমদানি নির্ভরদেশ। তাই খাদ্যপণ্য ও জীবন রক্ষাকারী ওষুধের মতো পণ্যসামগ্রী আমদানিতে সমানতালে বন্দর শুল্ক ধার্য করা ঠিক হয়নি। 
এখানে খাতওয়ারি শুল্কহার স্ল্যাব করা যেত। এক্ষেত্রে অন্য পণ্যসামগ্রীর মতো এসব পণ্যের দাম বেড়ে যাবে, যার প্রভাব পড়বে সরাসরি ভোক্তার ওপর। কারণ, ব্যবসায়ীরা উল্লিখিত শুল্ক, আমদানিকৃত দ্রব্যমূল্যের সঙ্গে দাম সমন্বয় করে এবং এক্ষেত্রে এসব পণ্যের মূল্য বেড়ে যাবে। 
তিনি বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা বাড়ানোর মাধ্যমে ৫-১০ শতাংশ পর্যন্ত ব্যবসার ব্যয় কমানো সম্ভব। চট্টগ্রাম বন্দরে পরীক্ষাগারের স্বল্পতা, পণ্য বা কনটেইনার রাখার স্থানস্বল্পতা, কাস্টমসের জটিলতা, উচ্চ ট্যারিফ, পণ্য খালাসে বিলম্ব প্রভৃতি কারণে ব্যবসার ব্যয় বাড়ছে।

প্যানেল হু

×