ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৬ জুলাই ২০২৫, ১ শ্রাবণ ১৪৩২

তেজোদ্দীপ্ত স্লোগান

দেওয়ান সামছুর রহমান

প্রকাশিত: ১৭:৫৪, ৯ জুলাই ২০২৫

তেজোদ্দীপ্ত স্লোগান

ইতিহাসের ঘটে যাওয়া শত ঘটন অঘটনের অন্যতম সাক্ষী ২০২৪ সালের জুলাই অভ্যুত্থান। স্বাধীনতা-পরবর্তী বাংলাদেশের সবচেয়ে আলোচিত একটি ঘটনা এটি যা স্বৈরাচারী শাসকের বিরুদ্ধে বিজয় এনে দিয়েছে। ছাত্র আন্দোলনের মধ্য দিয়ে যার শুরু। কোটা সংস্কার আন্দোলনের মধ্য দিয়ে ছাত্রদের রাজপথে আগমন, স্লোগানে স্লোগানে মুখর। ধীরে ধীরে সে আন্দোলন রূপ নেয় স্বৈরাচার পতন আন্দোলনে। সে আন্দোলনের রসদ ছিল চমৎকার সব স্লোগান। ‘কোটা না মেধা- মেধা, মেধা। ‘আমার সোনার বাংলায়- বৈষম্যের ঠাঁই নাই’। ‘আপোস না সংগ্রাম- সংগ্রাম, সংগ্রাম।’
এভাবেই নানাবিধ স্লোগানে স্লোগানে মুখর হয়ে ওঠে ঢাকা শহর। পরবর্তীকালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর এক ব্যাঙ্গাত্মক কথার প্রতিবাদে ছাত্রসমাজ স্লোগান দেয়- ‘তুমি কে? আমি কে? রাজাকার, রাজাকার।’ ‘কে বলেছে? কে বলেছে? স্বৈরাচার স্বৈরাচার। কিংবা ‘এক, দুই, তিন, চার- আমরা হলাম রাজাকার।’ সবচেয়ে চমকপ্রদ ছিল, ‘চাইতে গেলাম অধিকার, হয়ে গেলাম রাজাকার।’
এভাবে রাজপথে কাঁপন ধরিয়ে ঢাকার পাশাপাশি অন্যান্য প্রধান প্রধান শহরসহ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়সহ, উচ্চমাধ্যমিক কলেজ এমনকি স্কুলের শিক্ষার্থীরাও রাজপথে নেমে আসে। ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, রাষ্ট্র কারো বাপের না।’ ‘সঙ্গে থাকলে সঙ্গী, না থাকলে জঙ্গি। ‘কিংবা’ পা চাটলে সঙ্গী, না চাটলে জঙ্গি। সবচেয়ে আবেগি বিষয় ছিল- ‘বুকের ভিতর দারুণ ঝড়, বুক পেতেছি গুলি কর।’ আর এভাবেই বুক পেতে আবু সাঈদ যখন মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে আগুনে ঘি ঢালার অবস্থা তৈরি হয় দেশব্যাপী। নানান ধর্মের, বর্ণের, নানান পেশার লোকজন যোগ দিতে থাকে এ আন্দোলনে। স্লোগান হতে থাকে, ‘আমার ভাইয়ের রক্ত, বৃথা যেতে দেব না।’ কিংবা ‘আবু সাঈদ, মুগ্ধ- শেষ হয়নি যুদ্ধ।’ লাখো শহীদের রক্তে কেনা, দেশটা কারো বাপের না। ‘হোক লড়াই আরেকবার, ধ্বংস হোক স্বৈরাচার।’ কিংবা ‘রক্তের বন্যায়, ভেসে যাবে অন্যায়’। ‘লেগেছে রে লেগেছে, রক্তে আগুন লেগেছে।’ ‘কথায় কথায় বাংলা ছাড়, বাংলা কি তোর বাপদাদার?’
‘বিজিবি কি করে? সীমান্তে মানুষ মরে।’ পুলিশকে উদ্দেশ্য করে ‘কে এসেছে? কে এসেছে? পুলিশ এসেছে, পুলিশ এসেছে। কি করছে? কি করছে? স্বৈরাচারের পা চাটছে।’ ‘লাশের মধ্যে জীবন দে, নইলে গদি, ছাইড়া দে।’অবশেষে স্বৈরাচারী সরকার গদি ছাড়তে বাধ্য হয়।
বুকের তাজা রক্ত ঢেলে রাজপথ রঞ্জিত করে ১৬ বছরের গোলামির পিঞ্জর ভাঙতে সক্ষম হয় এ দেশের অকুতোভয় ছাত্র জনতা। রাজপথে সাহস জোগানোর বড় রসদ ছিল এসব জ্বালাময়ী স্লোগান। এদেশ আবারও ফিরে পাক তার গন্তব্যের সঠিক রাস্তা। আর কোনো স্বৈরাচার মাথাচাড়া দিতে না পারুক। এসব জ্বালাময়ী স্লোগান স্বৈরশাসকের জন্য যেন বড় শিক্ষা হয়।

সোনারগাঁ, নারায়ণগঞ্জ থেকে

প্যানেল/মো.

×