ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৬ জুলাই ২০২৫, ১ শ্রাবণ ১৪৩২

ধরলার ভাঙনে ভিটেমাটি হারিয়ে নিঃস্ব অর্ধশতাধিক পরিবার

রাজু মোস্তাফিজ, কুড়িগ্রাম 

প্রকাশিত: ১২:০৪, ১৬ জুলাই ২০২৫

ধরলার ভাঙনে ভিটেমাটি হারিয়ে নিঃস্ব অর্ধশতাধিক পরিবার

ছবি: জনকণ্ঠ

কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার চরগোরকমণ্ডল এলাকায় ধরলার তীব্র ভাঙনে অর্ধশতাধিক পরিবারের ঘরবাড়িসহ শত শত বিঘা ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। ধরলার তীব্র ভাঙনের হাত থেকে রক্ষা পেতে অনেকেই আগাম ঘরবাড়ি অন্য এলাকায় সরিয়ে নিচ্ছেন। এদিকে ওই এলাকায় ২ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত মুজিব কেল্লার ভবনটিসহ প্রায় পাঁচশতাধিক পরিবারের বাড়িঘর, ভিটেমাটি ও শত শত বিঘা ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়ার আশঙ্কায় স্থানীয়রা চরম দুশ্চিন্তায় দিন পার করছেন। ধরলার তীব্র ভাঙন রোধে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে টেকসই তীররক্ষা বাঁধ নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

শেষ সম্বল ঘরবাড়ি ও ভিটেমাটি নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার আশঙ্কায় চরম দুর্দিন পার করছেন চরগোরকমণ্ডল গ্রামের বাসিন্দা আলা-বকস (৬৫)। ধরলার তীব্র ভাঙনে ধরলা নদী বাড়ির একেবারে কাছে এসে পড়েছে। তাই আগ্রাসী ধরলার ভাঙনে ঘরবাড়ি রক্ষা করতে তিনি ইতোমধ্যে অন্য জায়গায় যাওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছেন। কিন্তু বাড়িঘর নতুন জায়গায় গড়ে তোলার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ না থাকায় চরম দুশ্চিন্তায় দিন পার করছেন তিনি।

আলা-বকস জানান, "কি কই বাহে, ৬৫ বছর বয়সে কমপক্ষে পাঁচবার বাড়িঘর নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। বাড়িঘর, জমিজমা হারিয়ে পথে বসেছি। আমার নিজস্ব জমি না থাকায় গত চার বছর ধরে মানুষের জমিতে ঘরবাড়ি করে স্ত্রীসহ অতিকষ্টে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করছি। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস—এইবার ধরলার তীব্র ভাঙন একেবারে বাড়ির কাছেই চলে এসেছে। এখন আমার শ্যালকের জমিতে বসবাস করার জন্য ঘরবাড়ি সরানোর কাজ শুরু করেছি। কিন্তু টাকার অভাবে কাজ বন্ধ হয়ে গেছে। আমি আনন্দবাজারে ছোট একটি সুতা ও রশির দোকান করে কোনো রকমে ডাল-ভাত খেয়ে না খেয়ে দিন কাটাই।"

একই এলাকার জহুরুল ইসলাম (৩৫) ও তাঁর স্ত্রী মাহমুদা বেগম জানান, নদী ভাঙতে ভাঙতে একেবারে তাঁদের বাড়ি থেকে নদীর দূরত্ব এখন ২০ গজ। যে কোনো মুহূর্তে তাঁদের বাড়িঘর নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন তাঁরা। তাঁরা আরও জানান, দ্রুত সময়ের মধ্যে ধরলার ভাঙন ঠেকাতে না পারলে অনেক পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

ইতোমধ্যে নদীগর্ভে জাবেদ আলী, মনসের আলী, আজিবর রহমান ও আজগর আলীর বাড়িঘর বিলীন হয়েছে বলে জানান স্থানীয় যুবক কামাল হোসেন, আব্দুল কুদ্দুস, নুর আলম ও জাহিদুল। তাঁরা আরও জানান, ২ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত মুজিব কেল্লার ভবনসহ চরগোরকমণ্ডলের প্রায় পাঁচশতাধিক পরিবার হুমকির মুখে।

চরগোরকমণ্ডল ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আয়াজ উদ্দিন জানান, চরগোরকমণ্ডল এলাকায় গত বর্ষায় ধরলার তীব্র ভাঙনে ৩০টি পরিবার ও আধা কিলোমিটার সড়কসহ শত শত ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। সে সময় কর্তৃপক্ষকে জানানোর পর ৫ থেকে ৬ হাজার জিওব্যাগ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তা দিয়েও ভাঙন ঠেকানো যায়নি।

তিনি আরও জানান, বর্তমানে হুমকির মুখে রয়েছে মুজিব কেল্লার ভবন, স্কুল, মাদ্রাসাসহ ওই এলাকার ৫০০ পরিবার। বর্ষার আগেই ধরলার ভাঙন রোধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন তিনি।

নাওডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. হাছেন আলী জানান, তিনি ভাঙনকবলিত এলাকাগুলো পরিদর্শন করেছেন। দুই এক দিনের মধ্যেই ভাঙন রোধে কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলীর বরাবর আবেদন জানানো হবে।

কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রাকিবুল হাসান জানান, চরগোরকমণ্ডল এলাকায় ধরলা নদীর তীব্র ভাঙন ঠেকাতে গত বছর ৭ হাজার জিওব্যাগ ফেলা হয়েছে। আপাতত তাঁদের কাছে এই মুহূর্তে জিওব্যাগ নেই। চরগোরকমণ্ডলে প্রচুর পরিমাণে জিওব্যাগ লাগবে। জিওব্যাগের বরাদ্দ এলেই সেখানে দেওয়া হবে।

মুমু ২

×