ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৬ জুলাই ২০২৫, ১ শ্রাবণ ১৪৩২

“মাঠে ফিরুক শিশু-কিশোর, রক্ষা পাক ভবিষ্যৎ প্রজন্ম”

বদরুল ইসলাম , কন্ট্রিবিউটিং রিপোর্টার, বরগুনা 

প্রকাশিত: ০০:৫৭, ১৬ জুলাই ২০২৫; আপডেট: ০১:০৮, ১৬ জুলাই ২০২৫

“মাঠে ফিরুক শিশু-কিশোর, রক্ষা পাক ভবিষ্যৎ প্রজন্ম”

ছবি: সংগৃহীত

বর্তমান সময়ে আমরা যেসব সামাজিক সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছি, তার মধ্যে দুটি বড় সমস্যা হলো—শিশুদের মোবাইল ফোন আসক্তি এবং তরুণ-যুবকদের মধ্যে ভয়ংকর মাদকাসক্তি। এই দুটি বিষাক্ত আসক্তি আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। শহর কিংবা গ্রাম—দুই জায়গাতেই এখন শিশুদের হাতে সারাদিন মোবাইল ফোন, গেম, ইউটিউব, টিকটক বা ফেসবুকে ডুবে থাকার প্রবণতা বেড়েই চলেছে।

একইভাবে, দেশের বহু তরুণ ও যুবক অবসরের অভাবে, দিশাহীনতায়, হতাশায় কিংবা প্রলোভনে পড়ে মাদকের নেশায় জড়িয়ে পড়ছে। এতে ব্যক্তি, পরিবার এবং সমাজের ওপর গভীর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। দেশের কর্মক্ষম এক বড় অংশ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে ছোটদের ভবিষ্যৎ গড়ে ওঠার আগেই প্রযুক্তির অতিরিক্ত ব্যবহারে তারা হয়ে যাচ্ছে শারীরিকভাবে দুর্বল, মানসিকভাবে স্থবির এবং সামাজিকভাবে একঘরে।

এই ভয়াবহ পরিস্থিতি থেকে সমাজকে রক্ষা করতে হলে জরুরি ভিত্তিতে বিকল্প পথ খুঁজে বের করতে হবে—একটি ইতিবাচক, আনন্দদায়ক, স্বাস্থ্যসম্মত এবং সামাজিক উপকারে আসে এমন কর্মকাণ্ড। আর সেটি হতে পারে "মাঠে খেলাধুলার ব্যবস্থা ও নিয়মিত আয়োজন"। খেলাধুলা মানুষের শরীর ও মনের জন্য এক অনন্য ও প্রাকৃতিক ওষুধের মতো কাজ করে। শিশুদের জন্য যেমন এটা শিক্ষার অংশ হওয়া উচিত, তেমনি তরুণদের জন্য এটা হতে পারে মাদক থেকে মুক্ত থাকার সহায়ক হাতিয়ার।

এক সময় বাংলাদেশের গ্রামগঞ্জ, পাড়া-মহল্লা, স্কুল-কলেজে বিকেল হলেই জমে উঠত নানা ধরনের খেলাধুলা। শিশুদের মধ্যে দড়িলাফ, গোল্লাছুট, কাবাডি, কানামাছি, দাঁড়িয়াবান্ধা, ছড়াগান, মার্বেল খেলা, আর বড়দের মধ্যে ছিল ফুটবল, ক্রিকেট, ভলিবল বা হাডুডু। সে সময় প্রযুক্তি ছিল না, কিন্তু মানসিক প্রশান্তি, সামাজিক বন্ধন এবং সুস্থ বিকাশ ছিল অনেক বেশি।

বর্তমান সময়ে এসব খেলা মাঠছাড়া হয়ে গেছে। খেলার মাঠে এখন গড়ে উঠছে দালানকোঠা, মার্কেট, গ্যারেজ, পার্কিং জোন। শিশুদের হাতে মাঠ নেই, হাতে আছে কেবল মোবাইল স্ক্রিন। তাই তাদের বিকাশ থমকে যাচ্ছে। তরুণদের হাতে কাজ নেই, আশপাশে নেই কোনো পজিটিভ সামাজিক সুযোগ—ফলে তারা ভুল পথে যাচ্ছে।

সমাধান কী?

১. প্রতিটি গ্রামে, ইউনিয়নে, ওয়ার্ডে ও পাড়ায় একটি করে খেলার মাঠ নিশ্চিত করা হোক।
২. বিদ্যালয়গুলোতে খেলার সময় বাধ্যতামূলক করা হোক।
৩. বিভিন্ন বয়সভিত্তিক টুর্নামেন্ট আয়োজনের জন্য স্থানীয় প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি ও সামাজিক সংগঠনগুলোকে উদ্যোগ নিতে হবে।
৪. সরকারি বাজেটে খেলাধুলার জন্য আলাদা বরাদ্দ বৃদ্ধি করতে হবে।
৫. বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও এনজিওগুলোকেও মাঠে নামতে হবে শিশু ও তরুণদের শারীরিক-মানসিক বিকাশে।

খেলাধুলা শুধু শরীর গঠনের বিষয় নয়—এটি মন গঠনেরও বড় উপাদান। এতে নেতৃত্ব বিকাশ হয়, নিয়ম মেনে চলার অভ্যাস গড়ে ওঠে, পরাজয় ও বিজয়ের শিক্ষা আসে, সহনশীলতা তৈরি হয়। মাদক, অপরাধ, অবসাদ ও নিঃসঙ্গতা থেকে দূরে থাকার জন্য মাঠে খেলাধুলা একটি কার্যকর প্রতিষেধক।

তাই আসুন, আমরা সবাই একসাথে বলি—
"স্ক্রিন নয়, মাঠ চাই"।
"মাদক নয়, খেলা চাই"।
"অসুস্থতা নয়, সুস্থ জীবন চাই"।

যেখানে খেলাধুলার আওতায় থাকবে আমাদের শিশু ও তরুণ সমাজ, সেখানে গড়ে উঠবে এক আলোকোজ্জ্বল বাংলাদেশ—ভবিষ্যৎ প্রজন্ম হবে সুস্থ, সচেতন, উদ্যমী এবং দায়িত্ববান।


লেখক: বদরুল ইসলাম
সাংবাদিক, বরগুনা

ফারুক

×