
ছবি: সংগৃহীত
ওজন কমানো শুধু ডায়েট বা ব্যায়ামের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। এর জন্য দরকার মনের জোর, আত্মনিয়ন্ত্রণ, অনেক ধৈর্য আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ—নিয়মিততা। যারা অনেক ওজন কমিয়েছেন এবং দীর্ঘদিন ধরে সেটি ধরে রেখেছেন, তাদের অভিজ্ঞতা থেকে পরিষ্কার একটি বিষয় বোঝা যায়—ওজন কমানোর কোনো শর্টকাট নেই। টেকসই, বাস্তবসম্মত এবং নিজের জন্য অনুপ্রেরণামূলক উপায়েই সফলতা আসে।
ভাবছেন, এত মানুষ কীভাবে সফল হয়েছে এবং কীভাবে তারা ওজন কমিয়ে ধরে রেখেছে? তাদের সফলতার গল্প থেকে নেওয়া ৭টি কার্যকর টিপস জেনে নিন।
১. প্রোটিন গ্রহণ বাড়ান, পেশি ধরে রাখতে সাহায্য করবে
ওজন কমানোর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ টিপসগুলোর একটি হলো—প্রোটিন বেশি খাওয়া, বিশেষ করে যদি আপনি নিয়মিত ব্যায়াম করেন।
প্রোটিন দীর্ঘক্ষণ পেট ভরিয়ে রাখে, ক্ষুধা কমায় এবং মেদ কমানোর সময় পেশি ধরে রাখতে সাহায্য করে।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, ওজন কমানোর সময় দৈনিক শরীরের প্রতি কেজি ওজনের জন্য ১.৬ থেকে ২.২ গ্রাম প্রোটিন গ্রহণ করা উচিত।
প্রোটিনের ভালো উৎস:
-
মুরগির বুকের মাংস
-
মাছ
-
ডিম
-
লো-ফ্যাট দুধ বা দই
-
ডাল, টোফু, মুসুর ডাল, রাজমা ইত্যাদি
প্রয়োজনে, ব্যায়ামের পর প্রোটিন পাউডারও গ্রহণ করা যেতে পারে।
২. (বাস্তবসম্মত) ক্যালোরি ঘাটতি তৈরি করুন
ওজন কমাতে হলে শরীর যত ক্যালোরি পোড়ায়, তার তুলনায় কম ক্যালোরি খেতে হবে।
তবে মনে রাখবেন, ক্যালোরি ঘাটতি হতে হবে মাঝারি মাত্রার, যাতে ধীরে ধীরে টেকসইভাবে ওজন কমে।
সাধারণত দৈনিক প্রায় ৫০০ ক্যালোরির ঘাটতি কার্যকর ও নিরাপদ ধরা হয়।
হঠাৎ অনেক কম ক্যালোরি খেলে শুরুতে ওজন কমতে পারে, কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে বিপাকক্রিয়া ধীর হয়ে যেতে পারে, ফলে ওজন ধরে রাখা কঠিন হয়।
এজন্য, প্রতিদিন খাওয়া খাবারের ক্যালোরি হিসাব করুন, অ্যাপ বা ডায়েরি ব্যবহার করুন, এবং অগ্রগতির ভিত্তিতে পরিমাণ ঠিক করুন।
৩. প্রতিটি খাবারের সঙ্গে প্রোটিন রাখুন
এটি বহুবার বলা হয়েছে এবং সত্যিই খুব কার্যকর।
দিনজুড়ে খাবারে প্রোটিন সমানভাবে বিতরণ করলে পেশি মেরামতে সহায়তা করে এবং ক্ষুধা কমায়।
প্রতিটি খাবার ও স্ন্যাক্সে প্রোটিন রাখার চেষ্টা করুন।
প্রোটিনের সহজ উৎস:
-
ডিম
-
দই
-
ডাল
-
মুরগির মাংস
-
পনির
-
টোফু
স্ন্যাক্স হিসেবে বাদাম, পনির বা প্রোটিন শেকও ভালো।
দিনজুড়ে প্রোটিন খেলে শক্তি বজায় থাকে, ক্ষুধা কমে এবং ক্যালোরির লক্ষ্য ঠিক রাখা সহজ হয়।
৪. স্ট্রেংথ ট্রেনিং করুন (আগে না করলেও শুরু করুন)
ব্যায়াম জরুরি, তবে শুধু কার্ডিও নয়, স্ট্রেংথ ট্রেনিং বা পেশিবৃদ্ধির ব্যায়ামেও মনোযোগ দিন।
ওজন তুলা বা নিজের শরীরের ওজন দিয়ে ব্যায়াম করলে পেশি বাড়ে ও ধরে রাখা যায়, যা বিশ্রাম অবস্থায়ও বেশি ক্যালোরি পোড়ায়।
পেশি বৃদ্ধি শরীরকে আরও টানটান ও সুগঠিত করে তোলে।
প্রতি সপ্তাহে অন্তত ২-৩ দিন স্ট্রেংথ ট্রেনিং করুন।
ব্যায়ামের মধ্যে রাখতে পারেন:
-
স্কোয়াট
-
পুশ-আপ
-
লাঞ্জ
-
ওজন তোলা
প্রথমবার হলে ফিটনেস ট্রেইনারের সাহায্য নিতে পারেন।
৫. চিনি এড়িয়ে চলুন, পানি বেশি খান
অনেকেই পানি পানের গুরুত্ব বোঝেন না, অথচ এটি ওজন কমাতে অত্যন্ত জরুরি।
পানি ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণ করে এবং পেট ভরা রাখে, ফলে কম খাওয়া যায়।
প্রতিদিন অন্তত ৮-১০ গ্লাস পানি খান, ব্যায়াম করলে আরও বেশি।
সোডা, ফলের জুস, এনার্জি ড্রিংক—সব ধরনের মিষ্টি পানীয় এড়িয়ে চলুন, কারণ এতে অপ্রয়োজনীয় ক্যালোরি থাকে এবং রক্তে শর্করা বাড়ায়।
যদি সম্ভব হয়, প্রাথমিক পর্যায়ে সব ধরনের চিনি এড়িয়ে চলুন। শুধু মিষ্টি নয়, বিস্কুট, পাউরুটি, প্যাকেটজাত স্ন্যাক্সেও চিনি থাকে—সেগুলোরও অভ্যাস ছাড়ুন।
৬. নিয়মিত হিসাব রাখুন
আপনি কী খাচ্ছেন এবং কী ধরনের ব্যায়াম করছেন, তা নিয়মিত লিখে রাখলে ওজন কমানোর সফলতা অনেক বেড়ে যায়।
অনেক সফল ব্যক্তিই খাবারের ডায়েরি বা মোবাইল অ্যাপ ব্যবহার করেন, যাতে ক্যালোরি, প্রোটিন এবং অন্যান্য পুষ্টি উপাদান নিয়ন্ত্রণে থাকে।
হিসাব রাখলে আপনি বুঝতে পারবেন কোথায় বেশি খাচ্ছেন বা অযথা স্ন্যাকিং করছেন কি না।
তবে একটু ভুল হলে দুশ্চিন্তা করবেন না, বরং ধৈর্য ধরে ধারাবাহিক থাকুন।
৭. ঘুম ও মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ করুন
ওজন কমানো কেবল খাবার বা ব্যায়ামের ওপর নির্ভর করে না।
খারাপ ঘুম ও অতিরিক্ত মানসিক চাপ ওজন কমানোর সবচেয়ে বড় শত্রু।
অপর্যাপ্ত ঘুম ও চাপ শরীরে ক্ষুধা বাড়ায় এবং অস্বাস্থ্যকর খাবারের প্রতি লোভ তৈরি করে।
প্রতিদিন ৭-৯ ঘণ্টা ঘুমানোর চেষ্টা করুন।
মানসিক চাপ কমাতে ধ্যান, শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম বা হালকা যোগব্যায়াম করুন।
যখন শরীর বিশ্রামপ্রাপ্ত ও মন শান্ত থাকে, তখন সুস্থ খাওয়া ও নিয়মিত ব্যায়াম অনেক সহজ হয়।
অনেকেই দেখেছেন—ঘুম ও চাপ নিয়ন্ত্রণের পর ওজন কমানোর গতি উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে যায়।
আবির