ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৬ জুলাই ২০২৫, ১ শ্রাবণ ১৪৩২

সুস্থ থাকলেও প্রাপ্তবয়স্কদের প্রতি বছর করানো উচিত এই ৫ রক্ত পরীক্ষা

প্রকাশিত: ২০:২২, ৯ জুলাই ২০২৫

সুস্থ থাকলেও প্রাপ্তবয়স্কদের প্রতি বছর করানো উচিত এই ৫ রক্ত পরীক্ষা

ছবি: সংগৃহীত

শরীরে সবকিছু ঠিকঠাক চলছে কি না, তা শুধু ভালো লাগা দিয়ে বোঝা যায় না। অনেক সময় শরীরের ভেতরে নানা পরিবর্তন শুরু হয় নীরবেই, কোনো উপসর্গ ছাড়াই। আর সেই গোপন সংকেত আগেভাগেই ধরতে সাহায্য করে নিয়মিত রক্ত পরীক্ষা। রক্ত পরীক্ষা হলো শরীরের আভ্যন্তরীণ অবস্থা জানার এক কার্যকর উপায়।

বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রতি বছর অন্তত পাঁচটি রুটিন রক্ত পরীক্ষা প্রতিটি প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের করা উচিত। এতে করে হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, থাইরয়েডের মতো দীর্ঘমেয়াদি রোগ শনাক্ত ও প্রতিরোধ সম্ভব।

নিচে উল্লেখ করা হলো এমনই পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ রক্ত পরীক্ষার নাম, যেগুলো আপনি সুস্থ থাকলেও বছরে একবার করে করাতে পারেন—

১. কমপ্লিট ব্লাড কাউন্ট (CBC)

এই পরীক্ষার মাধ্যমে রক্তে লোহিত কণিকা, শ্বেত কণিকা, হিমোগ্লোবিন, হিমাটোক্রিট এবং প্লেটলেটের পরিমাণ নির্ণয় করা হয়। এটি অ্যানিমিয়া, সংক্রমণ, রক্ত জমাট বাঁধার সমস্যা এবং পুষ্টিহীনতার ইঙ্গিত দিতে পারে। এছাড়া RBC এর সাইজ (MCV) ও তার বৈচিত্র্য (RDW) দেখেও অ্যানিমিয়ার ধরন নির্ণয় করা যায়।

২. লিপিড প্রোফাইল (Cholesterol এবং Triglycerides)

এই পরীক্ষা হৃদরোগের ঝুঁকি নির্ধারণে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এতে মোট কোলেস্টেরল, এলডিএল (খারাপ কোলেস্টেরল), এইচডিএল (ভাল কোলেস্টেরল) এবং ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা জানা যায়।

স্বাভাবিক মাত্রা হওয়া উচিত—

  • LDL: ১০০ mg/dL-এর নিচে
  • Triglycerides: ১৫০ mg/dL-এর নিচে

উচ্চ রক্তচাপ বা পারিবারিক ইতিহাস থাকলে বছরে একাধিকবার করানো দরকার।

৩. রক্তে গ্লুকোজ ও HbA1c পরীক্ষা

ডায়াবেটিস নির্ণয় ও নিয়ন্ত্রণে এই দুই পরীক্ষা অপরিহার্য।

  • Fasting glucose >১২৬ mg/dL হলে ডায়াবেটিস ধরা পড়ে
  • HbA1c >৬.৫% হলে তা দীর্ঘমেয়াদি ডায়াবেটিস নির্দেশ করে

প্রি-ডায়াবেটিস ধরা পড়ে ১০০–১২৫ mg/dL গ্লুকোজ অথবা ৫.৭–৬.৪% HbA1c থাকলে।

৪. থাইরয়েড ফাংশন টেস্ট (TSH, Free T4, Free T3)

থাইরয়েড হরমোন বিপাক, ওজন, শক্তি ও মেজাজ নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ।

  • TSH বেশি ও T4 কম থাকলে হাইপোথাইরয়েডিজম
  • TSH কম ও T3/T4 বেশি থাকলে হাইপারথাইরয়েডিজম

বিশেষ করে নারীদের জন্য বছরে একবার অথবা দুই বছরে একবার করানো উচিত।

৫. কমপ্রিহেনসিভ মেটাবলিক প্যানেল (CMP)

এই প্যানেলে কিডনি, লিভার, রক্তে সুগার, ইলেকট্রোলাইট এবং প্রোটিনের মাত্রা দেখা হয়।

এতে যেসব উপাদান পরিমাপ করা হয়—

  • সোডিয়াম, পটাশিয়াম, BUN, ক্রিয়েটিনিন (কিডনি)
  • গ্লুকোজ, ক্যালসিয়াম
  • ALT, AST, বিলিরুবিন, অ্যালবুমিন (লিভার)

উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস বা দীর্ঘমেয়াদি ওষুধ গ্রহণকারীদের জন্য এই টেস্ট বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।

কখন করবেন এই পরীক্ষা?

  • CBC, লিপিড প্রোফাইল, গ্লুকোজ/HbA1c, CMP: প্রতি বছর
  • থাইরয়েড প্যানেল: প্রতি ১–২ বছর (লক্ষণ থাকলে বা পারিবারিক ইতিহাস থাকলে আগেই)

রক্ত পরীক্ষার আগে কী করবেন?

  • ফাস্টিং: লিপিড, গ্লুকোজ ও CMP পরীক্ষার জন্য ৮–১২ ঘণ্টা না খেয়ে থাকতে হয়
  • রিপোর্ট বোঝা: ফলাফলগুলো বয়স, লিঙ্গ ও ল্যাবভেদে ভিন্ন হতে পারে, তাই চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ নেওয়া জরুরি
  • প্রবণতা দেখুন: একবারের রিপোর্ট নয়, বছরের পর বছর ডেটা দেখেই চিকিৎসক মূল্যায়ন করেন

অতিরিক্ত পরীক্ষাও প্রয়োজন হতে পারে প্রয়োজন অনুযায়ী

বয়স, জীবনধারা বা পারিবারিক ইতিহাস অনুযায়ী চিকিৎসক নিচের পরীক্ষাগুলোও সাজেস্ট করতে পারেন—

  • ভিটামিন ডি ও বি১২
  • CRP বা hs-CRP (হৃদরোগের ঝুঁকি নির্ধারণে)
  • ফেরিটিন বা সিরাম আয়রন (অ্যানিমিয়া নির্ণয়ে)

স্বাস্থ্য ভালো থাকার অর্থ শুধু অসুস্থ না থাকা নয়, বরং নিজের শরীরের ভেতরের অবস্থা সম্পর্কে জানা ও সচেতন থাকা। এই পাঁচটি রক্ত পরীক্ষা করতে পারলেই আপনি দীর্ঘমেয়াদে সুস্থ জীবনযাপনের জন্য এক ধাপ এগিয়ে থাকবেন।

 

সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া।

রাকিব

×