ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১

খেলা পাঁচ দিনে নিয়ে গেলেন তাইজুল ও মিরাজ

সাগরিকায় পরাজয়ের প্রহর গুনছে বাংলাদেশ

মো. মামুন রশীদ

প্রকাশিত: ০০:৪৯, ৩ এপ্রিল ২০২৪

সাগরিকায় পরাজয়ের প্রহর গুনছে বাংলাদেশ

দিনশেষে অপরাজিত থেকে সাজঘরে ফিরছেন তাইজুল ইসলাম ও মেহেদী হাসান মিরাজ

টেস্ট ম্যাচের চতুর্থ ও পঞ্চম দিন ব্যাট করা দুরূহ। তবে সর্বশেষ কয়েকটি টেস্ট ইনিংসে বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ে যে দুর্দশা দেখা গেছে সেখান থেকে কিছুটা উন্নতি হয়েছে চলমান চট্টগ্রাম টেস্টে। কারণ দ্বিতীয় ইনিংসে এখন পর্যন্ত ৭ উইকেট হারিয়ে ২৬৮ রান তুলেছে বাংলাদেশ। তবে এই উইকেটে সফরকারী শ্রীলঙ্কার ব্যাটাররা প্রথম ইনিংসে ৫৩১ রানের বিশাল সংগ্রহ গড়েছে। সেখানেই প্রথম ইনিংসে ১৭৮ রানে গুটিয়ে যায় বাংলাদেশ। টানা ৫ ইনিংসে ২০০ রানের নিচে থেমে নিজেদের চরম ব্যাটিং ব্যর্থতার পরিচয়ও দেয়।

সেখান থেকে কিছুটা উন্নতি ঘটলেও ৫১১ রানের জয়ের লক্ষ্য নিয়ে নেমে আবারও ব্যাটাররা ব্যর্থই হয়েছেন। উইকেটে থিতু হয়েও নিজেদের ভুলে সাজঘরে ফিরেছেন প্রথম থেকে সাত নম্বর পর্যন্ত নামা স্বীকৃত ব্যাটাররা। জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে এই টেস্টের উইকেট যতটা ব্যাটিং সহায়ক, সেখানে টিকে থাকতে পারলেই বড় সংগ্রহ পাওয়া সম্ভব। বাংলাদেশী ব্যাটাররা সতর্ক থাকলে অন্তত ড্র করা যেত হয়তো, কিন্তু এখন উল্টো আরেকটি পরাজয়ের প্রহর গুনছে বাংলাদেশ। 
বাকি আছে মাত্র ৩ উইকেট। ক্রিজে আছেন মেহেদি হাসান মিরাজ ও তাইজুল ইসলাম। এরপর ব্যাট করবেন খালেদ আহমেদ ও হাসান মাহমুদ। অথচ বাংলাদেশের সামনে আছে আরও ২৪৩ রান এবং পুরো দিন। সেই দিনটি পঞ্চম দিন। টেস্টের এই শেষদিন ব্যাট করা যে কোনো দলের জন্যই কঠিন। কারণ প্রথম দিন যে উইকেটে খেলা শুরু হয় সেই অবস্থা আর থাকেনা চতুর্থ ও পঞ্চম দিনে। সে কারণে প্রথম ইনিংসে ব্যাটিং ভরাডুবিতে বাংলাদেশের ইনিংস ১৭৮ রানে শেষ হয়ে গেলেও ফলোঅন করায়নি শ্রীলঙ্কা।

তখনো বাংলাদেশ ৩৫৩ রানে পিছিয়ে। কিন্তু ফলোঅনে ব্যাটিং করে যদি বাংলাদেশ বড় টার্গেট দিয়ে ফেলে সেই চিন্তাতেই আবারও ব্যাটিং করেছে শ্রীলঙ্কা। দ্রুত কিছু রান করে বড় টার্গেট দিয়েছে এবং টেস্টের শেষ দুদিন ব্যাটিং করার চ্যালেঞ্জে ফেলেছে স্বাগতিকদের। যদিও চতুর্থ দিন পর্যন্ত সাগরিকার উইকেটে ব্যাটাররাই সুবিধা পেয়েছেন। আগের দিনের ৬ উইকেটে ১০২ রান নিয়ে নেমে শ্রীলঙ্কা আরেকটি উইকেট হারিয়ে ৫৫ রান যোগ করে এবং ৭ উইকেটে ১৫৭ রানে দ্বিতীয় ইনিংস ঘোষণা করে দেয়। ৫১১ রানের টার্গেটে নেমে বেশ ভালোভাবেই শুরু করেন মাহমুদুল হাসান জয় ও জাকির হাসান।

লাঞ্চ বিরতি পর্যন্ত নির্বিঘেœ কাটিয়ে ৮ ওভারে ৩১ রান তুলে ফেলেন তারা। কিন্তু নিজেদের কিছু ভুল শটের কারণেই তারা দলকে ভালো অবস্থানে নিয়ে যেতে পারেননি। দশম ওভারেই মাহমুদুল ৩২ বলে ৩ চারে ২৪ রানে সাজঘরে ফিরেছেন আবারও বোল্ড হয়ে। আধা ঘণ্টা না পেরোতেই জাকির ৩৯ বলে ২ চারে ১৯ রান করে স্লিপে ক্যাচ দিয়ে আউট হন। 
তৃতীয় উইকেটে অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত ও মুমিনুল হক ৪৩ রানের জুটি গড়েন। তারা যেভাবে খেলেছেন তাতে মনে হচ্ছিল দারুণ কিছু করবে বাংলাদেশ। আর বোলাররাও তেমন সুবিধা পাচ্ছিলেন না। কিন্তু লাহিরু কুমারার দুর্দান্ত ডেলিভারিতে লাইন মিস করে বোল্ড হন শান্ত ৫৫ বলে ২ চারে ২০ রান করে। অর্থাৎ তিনিও উইকেটে সেট হয়ে গিয়েছিলেন। এরপর মুমিনুল ও সাকিব আল হাসান ৩৮ রানের জুটি গড়েছেন। তার মানে এ দুজনও উইকেটে থিতু হয়ে গিয়েছিলেন। সাবলীল মুমিনুল ওয়ানডে মেজাজেই রান তুলছিলেন।

চা বিরতির সামান্য আগে ক্যারিয়ারের ১৮তম ফিফটি পাওয়া মুমিনুল তুলে মারতে গিয়ে স্কয়ার লেগে ক্যাচ দিয়েছেন। ৫৬ বলে ৮ চার, ১ ছয়ে ৫০ রানের দুর্দান্ত ইনিংস তাই বাজে একটি সুইপ শটেই থেমে গেছে। এরপর সবচেয়ে ভালো এবং বড় জুটি হয়েছে সাকিব ও লিটন কুমার দাসের মধ্যে। দীর্ঘ সময় পর ফেরা সাকিব বেশ ভালোই ব্যাট করছিলেন আর খারাপ সময় কাটিয়ে ব্যর্থতার মধ্যে থাকা লিটনও যেন নিজেকে মেলে ধরেছেন।

পঞ্চম উইকেটে ৬১ রান যোগ করেন তারা। দলকে এগিয়ে নিতে থাকেন বেশ ভালো গতিতেই। কিন্তু সাকিব দ্বৈত মানসিকতায় ব্যাট চালিয়ে কামিন্দু মেন্ডিসের অনিয়মিত অফস্পিনে সাজঘরে ফিরেছেন স্লিপে ক্যাচ দিয়ে। নিশান মাদুষ্কাও দুর্দান্ত ক্যাচ নিয়ে কামিন্দুকে প্রথম টেস্ট উইকেটের স্বাদ পাইয়ে দেন। ৫৩ বলে ৩ চারে ৩৬ রান করেন সাকিব। এর কিছুক্ষণ পরই লিটনও ভুল করেছেন। ৭২ বলে ৪ চারে ৩৮ রান করে কুমারার বলে হয়েছেন কট বিহাইন্ড। অভিষেকের পর থেকে ভালো কিছু করতে না পারা তরুণ শাহাদাত হোসেন দিপু অবশ্য ভালোভাবে শুরু করেন এবং সপ্তম উইকেটে মিরাজের সঙ্গে ৪৬ রানের জুটিও গড়েন।

কিন্তু ইনিংসটাকে কোনোভাবেই বড় করতে পারেননি, ১৫ রানেই সাজঘরে ফিরেছেন। এভাবেই শীর্ষ ৭ ব্যাটার ব্যর্থ হয়েছেন। এখন ৪৯ বলে ৭ চারে ৪৪ রান করা মিরাজ লড়াই করছেন ব্যবধান কমানোর। কারণ তার সঙ্গী ১০ রানে অপরাজিত তাইজুল এবং তারপর খালেদ আহমেদ, হাসান মাহমুদকে নিয়ে সারাদিন ব্যাট চালিয়ে ম্যাচ বাঁচানো অসম্ভব বাংলাদেশের জন্য।

×