ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০২ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১

সাফজয়ী বাংলাদেশ অনুর্ধ-১৯ নারী ফুটবল দলকে ওয়ালটনের সংবর্ধনা 

আর্থিক পুরস্কারের বদলে টিভি দেওয়ায় সমালোচনা!

প্রকাশিত: ২০:১০, ১২ মার্চ ২০২৪

আর্থিক পুরস্কারের বদলে টিভি দেওয়ায় সমালোচনা!

আর্থিক পুরস্কার নয়, টিভি উপহার পেলেন নারী ফুটবলাররা

গত ৮ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় অনুষ্ঠিত নাটকীয় ফাইনালে ভারতের সঙ্গে যৌথভাবে ‘সাফ অনূর্ধ্ব-১৯ নারী ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপ’-এর শিরোপা জেতে বাংলাদেশ। সাফজয়ী সেই দলকে আজ মঙ্গলবার বিশেষ সংবর্ধনা দিয়েছে ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ পিএলসি। খেলোয়াড়, কোচ ও কর্মকর্তাসহ মোট ৩৩ সদস্যের দলের প্রত্যেককে একটি করে ওয়ালটনের ৩২ ইঞ্চি স্মার্ট টিভি উপহার দেয়া হয় (এসএসসি পরীক্ষার কারণে ১০ ফুটবলার উপস্থিত ছিলেন না)। 

বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) ভবনে খেলোয়াড়, কোচ ও কর্মকর্তাদের হাতে এই পুরস্কার তুলে দেন ওয়ালটনের জ্যেষ্ঠ নির্বাহী পরিচালক এফএম ইকবাল বিন আনোয়ার (ডন), জ্যেষ্ঠ উপ-নির্বাহী পরিচালক রবিউল ইসলাম মিলটন ও বাফুফের মহিলা উইংয়ের চেয়ারম্যান মাহফুজা আক্তার কিরণ। এ সময় বাফুফের অন্যান্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

বাংলাদেশ দলের প্রায় সব নারী ফুটবলারই বেশ দরিদ্র পরিবারের সন্তান। সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয় তাদের। স্বাভাবিকভাবেই তাদের প্রয়োজন নগদ অর্থ। কিন্তু অর্থের পরিবর্তে উপহার সামগ্রী দেয়া হলে সেটা তাদের কতটা উপকারে আসবে, তা নিয়ে ক্রীড়াঙ্গনে উঠেছে সমালোচনার ঝড়। আর ওয়ালটন ঠিক এই কাজটিই করেছে। মঙ্গলবার সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে সাংবাদিকরা এ সংক্রান্ত প্রশ্নও করেছেন। কিন্তু কারো কাছে কোন সদুত্তর পাননি। খেলোয়াড়দেরও প্রশ্ন করা হয়। তারা বিব্রতবোধ করেন এবং কৌশলগত কারণে প্রশ্নটি এড়িয়ে যান। 

সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে হয় আরেক নাটক। বাংলাদেশ দলের সহাকারী কোচ মাহবুবুর রহমান লিটু এবং গোলরক্ষক কোচ আরিফুর রহমান পান্নুকে সামনের সারিতে বসতে দেয়া হয়নি। তাদের চেয়ারগুলো দখল করে সামনের সাড়িতে বসে পড়েন বাফুফের নির্বাহী কমিটির দুই সদস্য। এটা ছিল বেশ দৃষ্টিকটু। 

উল্লেখ্য, ওয়ালটন এর আগেও ২০১৬ সালে অনুর্ধ-১৬ নারী ফুটবলারদের সংবর্ধনার নামে ‘হোম এ্যাপ্লায়েন্স’ দিয়েছিল। অবশ্য আরও অনেকেই এমনটা করেছে। ২০১৮ সালের জানুয়ারির শেষদিকে যশোরে নিয়ে গিয়ে সংবর্ধবনা দেয়া হয় সাফ অনুর্ধ-১৫ ফুটবলের চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলকে। সংর্বধনা দেয় যশোর ডিএফএ। কিন্তু সংবর্ধনায় তারা মেয়েদের শুধু ফুলের তোড়া আর সাধারণ ক্রেস্ট দিয়েই দায়িত্ব সারে! কোন আর্থিক প্রণোদনা বা উপহার সামগ্রীর ধার ধারেনি তারা। আর সবকিছুর দায়িত্বে ছিলেন যশোর ডিএফএর তৎকালীন বিতর্কিত সভাপতি আসাদুজ্জামান মিঠু। সেবার বাফুফে ভবনের আবাসিক ক্যাম্প থেকে যশোরে সংবর্ধনায় যোগ দিতে মহিলা ফুটবল দলকে ট্রেনযোগে নেয়া হয়। সারা রাত যাত্রা করে ভোরে তারা যশোর পৌঁছে। দুপুরে সংবর্ধনা অনুষ্ঠান শুরু হয়। আসলে সেটি ছিল ‘জয় বাংলা প্রথম বিভাগ ফুটবল লীগের লোগো উন্মোচন অনুষ্ঠান’। যশোর ডিএফএ কৃর্তপক্ষ লোগো উন্মোচন অনুষ্ঠানের আড়ালে মেয়েদের সংবর্ধনা দেয় বলে অভিযোগ ওঠে। 

শুধু তাই নয়, সাবেক যুব ও ক্রীড়া উপমন্ত্রী আরিফ খান জয় অনুর্ধ-১৫ নারী ফুটবল দল দুটি ভিন্ন টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন হলে তাদের ৫ লাখ করে মোট ১০ লাখ টাকা দেয়ার ‘প্রকাশ্য প্রতিশ্রুতি’ দেন। কিন্তু মেয়েরা একটি টাকাও পায়নি! একটি স্বনামধন্য বেসরকারী ব্যাংকও সেসময় নারী ফুটবল দলকে সংবর্ধনার নামে শুধু ফুল দিয়েই দায়িত্ব সেরেছিল।
সচেতন ক্রীড়ামোদীদের মতে-ওয়ালটন যদি তাদের তথাকথিত ‘হোম এ্যাপ্লায়েন্স’ না দিয়ে এর সমপরিমাণ অর্থ নারী ফুটবলারদের দেয়, তাহলে প্রতিষ্ঠানটির ভাবমূর্তি আরও উজ্জ্বল হবে, এখনকার ঠিক বিপরীত।

রুমেল খান

×