ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৯ মে ২০২৫, ১৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

তবু দেশের ফুটবলে আশার বছর

প্রকাশিত: ০০:৫৩, ১ জানুয়ারি ২০২৪

তবু দেশের ফুটবলে আশার বছর

.

সময়ের পরিক্রমায় আরও একটি বছর ইতিহাসের পাতায় গত হয়েছে। বিদায়ী ২০২৩ সালে ক্রীড়াঙ্গনও ছিল আলোচনার শীর্ষে। বিশেষ করে মাঠ ও মাঠের বাইরে বাংলাদেশের ফুটবলের জন্য বছরটা ছিল ঘটনাবহুল। এখানে যেমন ছিল সাফল্য-ব্যর্থতা, তেমনি ছিল আলোচনা-সমালোচনা আর বিতর্ক। নিঃসন্দেহে বিদায়ী বছরে দেশের ফুটবলে সবচেয়ে বড় সাফল্য পুরুষ জাতীয় ফুটবল দলের নিজেদের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ফিফা বিশ্বকাপের মূল বাছাইয়ে খেলার যোগ্যতা অর্জন করা। তেমনি বাফুফের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবু নাঈম সোহাগকে দেওয়া ফিফার নিষেধাজ্ঞাও বড় একটি ঘটনা হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে। 
২০২৩ সাল বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের জন্য ঐতিহাসিক বলা যায়। কেননা নিজেদের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ফিফা বিশ্বকাপ বাছাইয়ের মূলপর্বে জায়গা করে নেয় অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়ার দল। স্প্যানিশ কোচ জ্যাভিয়ের ক্যাবরেরার অধীনে বাংলাদেশ বেশ আশা জাগানিয়া ফুটবল খেলেছে। ১৪ বছর পর সাফের সেমিফাইনালে খেলাও বড় সাফল্য। এটা ধরে রেখেই বিশ্বকাপ বাছাইয়ে দারুণ পারফর্মেন্স প্রদর্শন করেন মোরসালিন-বিশ্বনাথরা। নতুন বছর ২০২৪ সালে সাফল্যের এ ধারাবাহিকতা ধরে রাখার চ্যালেঞ্জ জামালদের। বিশ্বকাপ বাছাইয়ের মূলপর্বে ইতোমধ্যে মিশনও শুরু করেছে লাল-সবুজের দেশ। প্রথম ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার কাছে বড় ব্যবধানে হারলেও দ্বিতীয় ম্যাচে লেবাননের সঙ্গে ড্র করেছে। নতুন বছরে বাছাইয়ে আরও চারটি ম্যাচ খেলার সুযোগ পাবে বাংলাদেশ। ম্যাচগুলোতে ফুটবলারদের উন্নতির গ্রাফ ধরে রাখার প্রত্যাশা করছেন দেশবাসী। 
২০২২ সালে সাফ চ্যাম্পিয়ন হয়ে দেশের ক্রীড়া ইতিহাসেরই অন্যতম সেরা সাফল্য উপহার দেয় বাংলাদেশ জাতীয় নারী ফুটবল দল। কিন্তু সাফল্যের এ ধারাবাহিকতা গেল বছরে ধরে রাখা সম্ভব হয়নি সাবিনা-সানজিদাদের। কেননা বছরের বেশিরভাগ সময়ই তাদের কাটাতে হয়েছে মাঠের বাইরে। সাফ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর ফেডারেশনের দুই শীর্ষ কর্তা অর্ধকোটি টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেছিলেন। পুরস্কার, নিয়মিত বেতন-বকেয়াসহ নানা ইস্যুতে অনুশীলন বর্জন করেছিলেন মেয়েরা। অভিমানে সাবিনাদের সাফল্যের নায়ক কোচ গোলাম রব্বানী ছোটনও কোচের দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করেন। নানা নাটকের পর ফেডারেশন ছাড়েন ব্রিটিশ টেকনিক্যাল ডিরেক্টর পল স্মলিও। এত নাটকীয়তার মধ্যে জাতীয় দলের সাবেক কোচ সাইফুল বারী টিটুর আর্বিভাব হয় নারী ফুটবলে। টিটুর অধীনে বাংলাদেশ নারী ফুটবল দল এশিয়ান গেমসে প্রথমবারের মতো অংশ নেয়। বিশ্বচ্যাম্পিয়ন জাপানের গ্রুপে পড়ে অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেন সাবিনারা। নেপালকে হারিয়ে সাফ জেতা নারীরা বিদায়ী বছরে তিনবার নেপালকে পেয়েও হারাতে পারেনি। 
জাতীয় দলের মতো সাবিনাদের ঘরোয়া ফুটবলেও হয়েছে অম্ল-মধুর অভিজ্ঞতা। নারী ফুটবলের ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগ আয়োজনের ঘোষণা দিয়েও বাস্তবায়ন না হওয়ায় অনেক ক্ষোভ মেয়েদের। অন্যদিকে বসুন্ধরা কিংসও নারী লিগে অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্তে নারী ফুটবলাররা গভীর সংকটে পড়েছেন। মার্চ মাসে মিয়ানমারে অলিম্পিক বাছাইয়ে নারী ফুটবল দলকে পাঠায়নি বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন বাফুফে। ফেডারেশনের আর্থিক অনটনের কারণে সাফ চ্যাম্পিয়নদের খেলতে না পাঠানোর ঘটনায় তখন তীব্র সমালোচনা হয় সর্বমহলে। এ ঘটনার রেশ ধরে দেশের দুই শীর্ষ ক্রীড়া সংস্থা বাফুফে ও বিসিবি সভাপতির বাকযুদ্ধও ছিল উল্লেখ করার মতো। 
ঐতিহ্যবাহী ও জনপ্রিয় মোহামেডান স্পোর্র্র্র্টিং ক্লাবের জন্য ২০২৩ সালটা প্রত্যাবর্তনের বছর। প্রায় এক দশক ফুটবলে শিরোপাখরায় থাকা মোহামেডান এ বছরে দুটি টুর্নামেন্টের ফাইনাল খেলেছে। মে মাসে ১৪ বছর পর ফেডারেশন কাপের চ্যাম্পিয়ন হয় বিখ্যাত সাদা-কালো জার্সিধারীরা। জনপ্রিয় ক্লাবের সেই ট্রফি জয় ক্রীড়াঙ্গনে নবজাগরণ সৃষ্টি করেছিল। এরপর বিজয়ের মাস ডিসেম্বরে নতুন মৌসুমের প্রথম টুর্নামেন্ট স্বাধীনতা কাপের ফাইনালেও উঠেছিল মোহামেডান। কিন্তু এবার বসুন্ধরা কিংসের কাছে হেরে রানার্সআপ হয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হয়। তবে সকল সাফল্য-ব্যর্থতা ছাপিয়ে বাফুফের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবু নাঈম সোহাগকে দেওয়া ফিফার নিষেধাজ্ঞা গেল বছর বাংলাদেশের ফুটবলে অন্যতম আলোচিত বিষয় হয়ে থাকবে। ১৪ এপ্রিল পহেলা বৈশাখের দিন ফিফা বাফুফের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সোহাগকে ২ বছরের জন্য নিষিদ্ধ করে। ফিফা বাফুফের আর্থিক বিষয়াদির ওপর কয়েক বছর তদন্ত করে এ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। নিষেধাজ্ঞার ঘটনায় কেঁপে ওঠে পুরো দেশের ক্রীড়াঙ্গন। এ ঘটনায় দেশের ফুটবলের অভিভাবক সংস্থা বাফুফেও বড়সড় ধাক্কা খায়।

×