মোরাতা খুব
২০১০ সালে বিশ্বকাপ জয়ের পর খুব কম সময়ই আছে যা স্পেনের জন্য সুখকর কেটেছে। ২০১২ সালে স্প্যানিশরা জিতেছে ইউরোপের বিশ্বকাপ ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপের ট্রফি। এরপর গত ১০ বছরে আর আহামরি কোনো সাফল্য নেই স্পেনের। জ্বলজ্বলে তারারা একের পর এক নিভে গেছেন আর স্প্যানিশদের পারফর্মেন্সেও ভাটা পড়েছে। তবে ৩০ বছর বয়সী আলভারো মোরাতা এবার স্পেন দলটিকে নিয়ে অন্যকিছু ভাবার সুযোগ তৈরি করে দিয়েছেন বিশ্বকে।
তারুণ্য নির্ভর দলে কয়েকজন অভিজ্ঞের মধ্যে মোরাতা একজন। দুই ম্যাচেই একটি করে গোল করেছেন তিনি। এরপর যেন সবারই মনে প্রশ্ন জেগেছে পেশাদার ক্যারিয়ারে এতদিন আসলে নিজেকে সেভাবে ফুটিয়ে তুলতে পারেননি তিনি। কিন্তু বিশ্বকাপ মঞ্চে এসে নিজেকে হঠাৎ করেই আলোকিত করে চলেছেন।
পেশাদার ক্যারিয়ারে মোরাতা খুব বেশি আলোচিত তারকা হতে পারেননি। ইউরোপের সেরা ক্লাবগুলোতে খেলেছেন এবং প্রায় নিয়মিতই গোল করেছেন। তবে বদলি হিসেবেই যেন তিনি সব কোচের বড় অস্ত্র হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন। সামান্য সময়ের জন্য মাঠে নেমেই গোল করার ক্ষেত্রে নিজের যোগ্যতা বারবার প্রমাণ করেছেন। লা লিগার ২টি, ২টি সিরি ‘এ’ এবং ২টি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ট্রফি জেতার গৌরব হয়েছে তার।
কিন্তু অন্য আরও সুপার স্টারের আড়ালে পড়ে গেছে মোরাতার কীর্তি। আলোচনায় থাকতে পারেননি তিনি। কিন্তু এখন যেন সময় এসেছে তার। কোস্টারিকার বিপক্ষে ম্যাচের ইনজুরি সময়ে গোল করেছেন এবং দ্বিতীয় ম্যাচে শক্তিশালী জার্মানির বিপক্ষে দলকে এগিয়ে নিয়েছেন প্রথমেই গোল করে। জর্ডি অ্যালবার নিচু করে বাড়ানো ক্রসে যেভাবে ফিনিশিং দিয়ে ম্যানুয়েল নিউয়েরকে বোকা বানিয়েছেন এ স্ট্রাইকার সেটিকে রীতিমতো মারাত্মক বলছেন সবাই।
এবার তাই মোরাতাকে নিয়ে আলোচনা না করে উপায় নেই কারো। এ মৌসুমে ডিয়েগো সিমিওনের দল অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের হয়ে বেশ ভালো পারফর্মেন্স দেখিয়েছেন। যদিও ১৪ ম্যাচে মাত্র ৫ গোল করতে পেরেছেন মোরাতা। গত সেপ্টেম্বরেও লা রোজার হয়ে শেষ মুহূর্তে গুরুত্বপূর্ণ গোল করেছেন তিনি পর্তুগালের বিপক্ষে নেশন্স লিগে। এ কারণে সেমিফাইনালে উঠতে পেরেছে স্পেন।
এবার স্পেনের শুরুর একাদশে অবশ্য কোচ লুইস এনরিকে মোরাতার পরিবর্তে উইঙ্গার মার্কো অ্যাসেনসিওকেই বেশি পছন্দ করেন। কিন্তু মোরাতা নিজেকে নিয়ে আত্মবিশ্বাসী এবং যখনই সুযোগ আসে সেটি কাজে লাগাতে তিনি বদ্ধপরিকর। এ বিষয়ে জার্মানির বিপক্ষে ম্যান অব দ্য ম্যাচ হয়ে তিনি বলেন, ‘জাতীয় দলে আমি খুবই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি। আমি এখানে থাকতে পেরে গর্বিত। আমাদের নিয়ে যে চাহিদা আছে এবং যে চাপ আছে সেটা অনেক উঁচুতে। তাই শুরুতে খেলেন কিংবা বদলি হিসেবে ভালো কিছু করা সহজ ব্যাপার নয়। আমি সব ম্যাচ জিততে চাই। আমি অন্য সবার মতোই সৈনিক এবং আমরা একসঙ্গে ধ্বংস হওয়াতেও রাজি।
আমরা দারুণ একটি দলে পরিণত হওয়ার জন্য দারুণ সংঘবদ্ধ এবং একতাবদ্ধ।’ অ্যাটলেটিকোর হয়ে নিজের যুব ক্যারিয়ার শুরু করে পরবর্তীতে রিয়াল মাদ্রিদে যোগ দেন মোরাতা এবং ২০১০ সালে জোসে মরিনহোর অধীনে রিয়ালের জার্সিতে অভিষেক হয় তার। পরের কয়েক বছর তার অগ্রগতি ছিল অত্যন্ত ধীর। ২০১৪ সালের চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনালে বদলি হিসেবে খেলার পর সেই গ্রীষ্মেই জুভেন্টাসে যোগ দেন।
সেমিফাইনালে রিয়ালের বিপক্ষে দুই লেগেই গোল করেন মোরাতা এবং দলকে ফাইনালে তোলেন। পরে ২০১৬ সালে আবার তাকে দলে নেয় রিয়াল। কিন্তু জিনেদিন জিদানের অধীনে করিম বেঞ্জামা ছিলেন প্রথম পছন্দ এবং মোরাতা সেই বদলিই থেকে যান।
এ কারণে পরের বছরই (২০১৭) ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের দল চেলসিতে যোগ দেন তিনি। কিন্তু এখানে অলিভার জিরুডের কাছে জায়গা হারান মোরাতা। তাই অ্যাটলেটিকোতে লোনে চলে যান। ২০২০ সালে সেখানেই চুক্তিবদ্ধ হন। কিন্তু তারা আবার জুভেন্টাসের কাছে লোনে মোরাতাকে পাঠিয়ে দেয়।
ক্লাবটি তার চুক্তি ১ বছর বাড়ালেও স্বাক্ষর না করালে এ বছর জুলাইয়ে আবার অ্যাটলেটিকোতেই ফেরেন মোরাতা। এই টানা-হ্যাঁচড়ার জীবনে হয়তো এবার বিশ্বকাপ শেষে সমাপ্তি ঘটতে পারে। কারণ এখন সময়টা মোরাতার। অ্যাটলেটিকোতেও নিজেকে প্রমাণ করেছেন এ মৌসুমে এবং বিশ্বকাপে স্পেনের হয়ে দুই ম্যাচেই তার ঔজ্জ্বল্য সবার চোখ ঝলসে দিয়েছে।