ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৬ জুলাই ২০২৫, ১ শ্রাবণ ১৪৩২

উপজেলায় আদালত

প্রকাশিত: ১৭:৩৯, ৯ জুলাই ২০২৫

উপজেলায় আদালত

বাংলাদেশের বিচারব্যবস্থা প্রান্তিক মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছাতে উপজেলা পর্যায়ে অধস্তন আদালত সম্প্রসারণে রাজনৈতিক দলগুলো একমত হয়েছে, যা আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে ঊষার আলো। রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমির দোয়েল হলে দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় পর্যায়ের দশম দিনের বৈঠকে তিনটি এজেন্ডা ছিল। উপজেলায় অধস্তন আদালত সম্প্রসারণ, জরুরি অবস্থা ঘোষণা ও নারী প্রতিনিধিত্ব। সময় স্বল্পতায় নারী প্রতিনিধিত্ব নিয়ে বিস্তর আলোচনা হয়নি। জরুরি অবস্থা নিয়েও ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাবে রাজনৈতিক দলগুলো একমত হয়েছে। ভবিষ্যতে জরুরি অবস্থা যেন রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার না হয়, তা নিশ্চিত করতে দল ও জোটগুলো জোর তাগিদ দিয়েছে। জাতীয় ঐকমত্য কমিশন বলছে, আদালত বিকেন্দ্রীকরণের বিষয়ে হাইকোর্টের সঙ্গেও আলোচনা করবেন তারা।
উপজেলায় আদালত সম্প্রসারণের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলো ছয়টি বিষয় বিবেচনার প্রস্তাব রেখেছে। যেসব উপজেলা, জেলা সদরে অবস্থিত অর্থাৎ সদর উপজেলাগুলোর আদালত জেলা জজকোর্টের সঙ্গে সংযুক্ত রাখা, বিদ্যমান চৌকি আদালত ও উপজেলা আদালত আছে, সেগুলো বহাল রেখে প্রয়োজনীয় সংস্কার ও অবকাঠামো নির্মাণ, জেলা সদরের কাছাকাছি উপজেলায় নতুন আদালত স্থাপন না করা ও প্রয়োজনীয় জরিপ পরিচালনা করা। এই মানদণ্ড সামনে রেখে অবশিষ্ট উপজেলাগুলোর জনসংখ্যার ঘনত্ব, ভৌগোলিক অবস্থান ও বৈশিষ্ট্য, দূরত্ব ও যাতায়াতব্যবস্থা, অর্থনৈতিক অবস্থা ও মামলা সংখ্যা বিবেচনায় পর্যায়ক্রমে আদালত স্থাপন করা। অধস্তন আদালতের জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো ও অর্থ বরাদ্দ নিশ্চিত করা এবং সরকারের আইনগত সহায়তা কার্যক্রম উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত সম্প্রসারণ করা।
ঐকমত্য কমিশন ও রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে এই বোঝাপড়া নিঃসন্দেহে আশার আলো জাগাবে জনগণের হৃদয়ে। আমরা আশাবাদী, ভবিষ্যতে এই সংস্কার বাস্তবায়ন হবে।
স্বাধীন বাংলাদেশে প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণ শুরু হয় হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের (১৯৮২-১৯৯০) শাসনকালে। উপজেলা পর্যায়ে জেলা পুলিশের আওতাধীন ‘মুনসেফ আদালত’ এর কার্যক্রম শুরু হয় ১ জুলাই ১৯৮২ সালে, যা চলমান থাকে ৯ বছর। ১৯৯১ সালে পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর উপজেলা পর্যায়ে পর্যাপ্ত অবকাঠামোর অভাব ও দক্ষ জনবল না থাকায় বিচারকার্য পরিচালনা সম্ভব হচ্ছিল না। এমন অভিযোগে তৎকালীন বিএনপি সরকার ওই বছর ২৩ নভেম্বর এক গেজেটে উপজেলা আদালত  অপসারণ এবং তা জেলা সদরের সঙ্গে একীভূত করে দেয়। আনন্দের বিষয় হলো, যে বিএনপি উপজেলা আদালত সেবা বন্ধ করল, তারাই আবার উপজেলা আদালত প্রতিষ্ঠায় ঐকমত্য পোষণ করেছে। তাদের বক্তব্য পরিস্থিতি ও বাস্তবতার পরিবর্তনে আদালতের বিকেন্দ্রীকরণ প্রয়োজন। দেশের রাজনৈতিক দলগুলো যদি জনগণের পাল্স বুঝে রাজনীতি করেন, তবেই দেশের নাগরিকরা তার সুফল পাবে। বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন অধস্তন আদালত বিকেন্দ্রীকরণে উপজেলা আদালত ব্যবস্থা পুনর্বহালের সুপারিশ করেছে, দেশের রাজনৈতিক দলগুলোও তা মেনে নিয়েছে।

প্যানেল/মো.

×