ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ০৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৫ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

পথ পায়নি প্রশাসন 

প্রকাশিত: ২০:৩৪, ৩ নভেম্বর ২০২৪

পথ পায়নি প্রশাসন 

সম্পাদকীয়

বিগত পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলের ১৫ বছরের একটানা শাসনে প্রশাসনের সর্বত্র বিস্তার লাভ করেছিল নির্লজ্জ দলীয়করণ- তা সে প্রশাসন থেকে বিচার বিভাগÑ যেখানেই হোক না কেন। সে অবস্থায় নবগঠিত সরকারকে অগ্রাধিকার দিতে হয়েছে প্রশাসনকে দলীয় প্রভাবমুক্ত করে যথাসম্ভব গতিশীল করার ওপর। তা না হলে সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের গৃহীত সিদ্ধান্তসমূহ মাঠপর্যায়ে যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে না।

তবে বাস্তবতা হলো, সরকারের আন্তরিকতা, প্রশাসনিক সংস্কার কমিশন গঠন, শীর্ষ পর্যায় থেকে তৃণমূল পর্যন্ত বিভিন্ন পর্যায়ে রদবদলসহ চাকরিচ্যুতি, পদবঞ্চিতদের পদোন্নতি, নতুন নিয়োগ প্রদান ইত্যাদি বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেও এখন পর্যন্ত প্রশাসনকে যথেষ্ট সচল, গতিশীল ও জনবান্ধব করা যায়নি। ফলে, সরকারের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য অর্জন পদে পদে হোঁচট খাচ্ছে অথবা আশানুরূপ সাফল্যের দেখা পাওয়া যাচ্ছে না। বাস্তবে বিগত সব সরকারের আমলেই সরকারি প্রশাসনকে কুক্ষিগত করার অভিপ্রায়ে নানা পদ-পদবির প্রলোভন দেখিয়ে নির্লজ্জ দলীয়করণ করা হয়েছে।

যে কারণে বহু কমিটি গঠনসহ নানাবিধ প্রশাসনিক সংস্কারের চেষ্টা করা হলেও আশানুরূপ সাফল্য অর্জিত হয়নি। ফলে, কাক্সিক্ষত উন্নয়ন-অগ্রগতি সম্ভব হয়নি। অন্যদিকে জনসাধারণও প্রত্যাশিত সেবা পেতে ব্যর্থ হয়েছে। পরিবর্তে পদে পদে প্রাধান্য পেয়েছে ঘুষ, দুর্নীতি, অনিয়ম, অব্যবস্থা, স্বজনপ্রীতিসহ রাজনৈতিক লেজুড়বৃত্তি। জগদ্দল এই দুরবস্থা থেকে মুক্তি পেতে প্রশাসনের টপ টু বটম আমূল সংস্কারের বিকল্প নেই। অন্তর্বর্তী সরকার তা করতে সক্ষম হবে বলেই প্রত্যাশা। 
অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পরপরই নানা গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার কর্মসূচির অংশ হিসেবে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়েছে প্রশাসনিক সংস্কারে। যাতে যথাসম্ভব দ্রুত প্রশাসনে শান্তি-শৃঙ্খলা ও গতি ফিরে আসে। নতুন সরকারের যাতে সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে তৃণমূল পর্যন্ত সরকারি সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়ন অপেক্ষাকৃত সহজ হয়। এরই অংশ হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে রদবদল করা হয়েছে। সিনিয়র সচিবসহ অনেককে পাঠানো হয়েছে অবসরে অব্যাহতি দিয়ে। অনেককে করা হয়েছে ওএসডি বা বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা।

এর পাশাপাশি বিগত সরকারের আমলে বঞ্চিত কর্মকর্তাদের পদোন্নতি দিয়ে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে পদায়ন করা হয়েছে। তড়িঘড়ি এসব করতে গিয়ে নানা আলোচনা ও বিতর্কের জন্ম দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। এ নিয়ে বিভিন্ন স্তরে ও পর্যায়ে প্রকাশ্যে ক্ষোভ-বিক্ষোভ-অসন্তোষ প্রকাশ করতেও দেখা গেছে সরকারি কর্মকর্তাদের, যা প্রায় নজিরবিহীন। স্বভাবতই এটি প্রশাসনে বিশৃঙ্খলার জন্ম দিয়েছে। কিছু ক্ষেত্রে আগে ঘোষিত সিদ্ধান্ত সংশোধনের চেষ্টা লক্ষ্য করা গেলেও নতুন করে দেখা দিয়েছে বিতর্ক। প্রশাসনে গতিসহ স্থিতিশীলতা আনার ক্ষেত্রে দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণে ঘাটতিও লক্ষ্য করা গেছে। ফলে, অনেক ক্ষেত্রে কাজকর্মে বিরাজ করছে প্রায় স্থবিরতা। 
জনপ্রশাসন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর গত ৫৩ বছরে প্রশাসনের ওপর এত চাপ তৈরি হয়নি। গত ১৫ বছর ধরে সাবেক সরকারের একটানা শাসনামলে প্রায় সর্বত্র ব্যাপক দলীয়করণ, মেধা ও যোগ্যতা উপেক্ষা করে রাজনৈতিক বিবেচনায় পদায়ন ও নিয়োগ, সর্বোপরি স্বজনপ্রীতির কারণে প্রশাসনে ব্যাপক বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়েছে। এই কঠিন পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে অন্তর্বর্তী সরকারকে অবশ্যই সময় দিতে হবে।

কোনো তোষণনীতির কাছে মাথা নত না করে রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ জায়গা থেকে সকল স্তরে সৎ, যোগ্য ও মেধাবী আমলাদের যথোপযুক্ত স্থানে বসিয়ে পেশাদারিত্ব ও কর্তব্যনিষ্ঠাকে প্রাধান্য দিয়ে একটি জনবান্ধব, স্বচ্ছ ও গতিশীল প্রশাসনিক ব্যবস্থা গড়ে তুলতে অন্তর্বর্তী সরকার যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করবে বলেই প্রত্যাশা।

×