ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৪ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

বাড়ছে খাদ্য মূল্যস্ফীতি

-

প্রকাশিত: ২০:৩০, ১৫ মে ২০২৪

বাড়ছে খাদ্য মূল্যস্ফীতি

সম্পাদকীয়

মূল্যস্ফীতি আবারও উঠেছে দুই অঙ্কের ঘরে। মাত্র এক মাসের ব্যবধানে বেড়েছে দেশের খাদ্য মূল্যস্ফীতি। এপ্রিল মাসে খাদ্য মূল্যস্ফীতি বেড়ে উঠেছে ১০ দশমিক ২২ শতাংশে। আগের মাসে এই হার ছিল ৯ দশমিক ৮৭ শতাংশ। গত বছরের নভেম্বর মাসে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ছিল ১০ দশমিক ৭৬ শতাংশ। দেশের অর্থনীতিতে এখন বড় চ্যালেঞ্জ হলো মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ। মানুষের আয় বাড়ছে না। বাড়ছে মূল্যস্ফীতি।

নিম্ন ও মধ্যবিত্তের নিত্য প্রয়োজনীয় খাবারের চাহিদা মেটানো কঠিন হয়ে পড়ছে প্রতিনিয়ত। চিকিৎসা, পরিবহনসহ খাদ্যবহির্ভূত খাতেও বেড়েছে খরচ। মূল্যস্ফীতি জনজীবনে চাপ সৃষ্টি করছে পরোক্ষ করের মতো। বিবিএস প্রকাশিত তথ্যে দেখা গেছে, শহরের চেয়ে গ্রামে মূল্যস্ফীতির হার বেশি। বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) তথ্যানুযায়ী, দেশে গরিব মানুষের ক্ষেত্রে খাদ্য মূল্যস্ফীতি এখন প্রায় ১৫ শতাংশে পৌঁছেছে। মূল্যস্ফীতির হার বাড়ার পেছনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখছে চাল, ডাল, চিনি, ভোজ্যতেলসহ মাছ-মাংসের দাম।
বাংলাদেশ ব্যাংক ইতোমধ্যে ৯ শতাংশ সুদ হারের ক্যাপ তুলে নিয়েছে। এ উদ্যোগের ফলে ব্যাংকের তারল্য আবার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে শুরু করেছে। এটা মূল্যস্ফীতি কমাতে ভূমিকা রাখবে। তবে তা সময়সাপেক্ষ বলে জানালেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার।

অর্থনীতিবিদদের মতে, একদিকে সুদের হার যদি বাড়ে, একইসঙ্গে মার্কিন ডলারের দামও বাড়ে, তাহলে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ সহজ হবে না। কারণ, ডলারের দাম বাড়লে বাড়ে পণ্য ও কাঁচামালের আমদানি ব্যয়। বিশ্ববাজারে পণ্য ও জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে অনেক দেশেই মূল্যস্ফীতি ঘটেছে। আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের সরবরাহ স্বাভাবিক ও মূল্যহ্রাসের কারণে বহির্বিশ্ব তা নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষমও হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ এখনো এর লাগাম টেনে ধরতে পারছে না। তবে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে জনজীবনে স্বস্তি আনা একান্ত প্রয়োজন।

বর্তমান পরিস্থিতি মোকাবিলায় চলতি অর্থবছরে (২০২৩-২০২৪) মূল্যস্ফীতির লক্ষ্যমাত্রা ৬ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৮ শতাংশে নেওয়া হয়। যদিও বিবিএসের হিসাবে এই মুহূর্তে মূল্যস্ফীতি সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি। তবে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা রোধে আমদানি নির্ভরতা কমাতে হবে। কেননা, ডলার সংকটে প্রয়োজনীয় কাঁচামাল আমদানিতে হিমশিম খাচ্ছে ব্যবসায়ীরা। এতে বাড়ছে দ্রব্যমূল্য।

এছাড়াও রাজস্ব ও মুদ্রানীতি প্রণয়নে অর্থনীতিবিদদের পরামর্শ অনুযায়ী এগোতে হবে। অর্থসচিব বলেছেন, খাদ্যপণ্য ও জ্বালানি তেলের মূল্য কমে আসায় ২০২৪ এবং ২০২৫ সালে ক্রমান্বয়ে হ্রাস পাবে মূল্যস্ফীতি। এ ছাড়া সরকারি ব্যয়ে কৃচ্ছ্রসাধন, খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি ও পণ্য সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে নেওয়া হয়েছে বিভিন্ন পদক্ষেপ। পণ্যের সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে দেওয়া হচ্ছে ভর্তুকি। বাস্তবে এসবের কার্যকর প্রয়োগ আবশ্যক। পাশাপাশি পণ্যের কৃত্রিম সংকট তৈরি করা অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে জোরদার করতে হবে বাজার মনিটরিং ব্যবস্থা।

×