ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১

বিশ্ব স্বীকৃতি : রিক্সা-রিক্সাচিত্র

প্রকাশিত: ২০:৪৯, ৮ ডিসেম্বর ২০২৩

বিশ্ব স্বীকৃতি : রিক্সা-রিক্সাচিত্র

.

ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় স্থান করে নিল ঢাকা শহরেররিক্সা রিক্সাচিত্র জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান সংস্কৃতিবিষয়ক সংস্থা ইউনেস্কোর বিমূর্ত সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি মিলল। এর মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের বাউল গান (২০০৮), জামদানি বুননশিল্প (২০১৩), মঙ্গল শোভাযাত্রা (২০১৬) শীতলপাটি বুননশিল্পের (২০১৭) পর পঞ্চম বিমূর্ত ঐতিহ্য হিসেবে ইউনেস্কোরইনটেনজিবল কালচারাল হেরিটেজ অব হিউম্যানিটিতালিকায় স্থান পেল রিক্সা রিক্সাচিত্র। দেশের জন্য এটি পরম গৌরবের।

বুধবার ইউনেস্কোর আন্তঃসরকার কমিটির অধিবেশনে উপস্থাপন করা হয় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিমূর্ত ঐতিহ্য। এতে বাংলাদেশের রিক্সা রিক্সাশিল্প নিয়ে তথ্যচিত্র উপস্থাপন করা হয়। তাতে বলা হয়, ঢাকা শহরের তিন চাকার এই বাহনে থাকে নানা রঙের বৈচিত্র্য। বাহন হিসেবে শহরের মানুষের প্রথম পছন্দের তালিকায় রয়েছে রিক্সা। একই সঙ্গে উল্লেখ করা হয়, রিক্সাচিত্র শুধু একটি শিল্প নয়, এটি মানুষের সমকালীন জীবনের গল্প বলার চলমান ক্যানভাস। রিক্সাচিত্রের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের প্রকৃতি থেকে শুরু করে নানা বিষয়ের মধ্যে চলচ্চিত্রের অভিনেতাদের মুখচ্ছবিও উঠে আসে।

পঞ্চাশ ষাটের দশক থেকে রিক্সা পেইন্টিং তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে জনপ্রিয় হতে থাকে। রিক্সার আদি নিবাস হচ্ছে জাপানে। ২য় বিশ্বযুদ্ধের সময় জ্বালানি সংকট দেখা দিলে এর জনপ্রিয়তা আরও বেড়ে যায়। তবে বর্তমানে রিক্সার শহর বলতে ঢাকাকেই বোঝানো হয়। ১৯১৯ সালে তৎকালীন ভারতবর্ষে রিক্সার প্রচলন শুরু হয়। কথিত আছে, বার্মা থেকে চট্টগ্রামে আসে রিক্সা। তবে রিক্সার ব্যবহার চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় হয়নি। ঢাকাতে রিক্সা আসে কলকাতা থেকে। ইউরোপীয় বণিকদের হাত ধরে। সেটি সেই ১৯৩০-এর দিকের ঘটনা। এক দশক আগেও ঢাকার রিক্সায় মানুষের মতো কর্মকাণ্ডে লিপ্ত বনের পশুপাখির পেইন্টিং ছিল চোখে পড়ার মতো। এছাড়া লতা-পাতা-ফুল-পাখির নক্সা কিংবা বিভিন্ন ধরনের পারিবারিক, সামাজিক, রাজনৈতিক, সিনেমার কাহিনী, বীরত্বগাথা, ইতিহাস, মুক্তিযুদ্ধ, ধর্মীয় কাহিনী, সাম্প্রতিক বিষয় নিয়ে আঁকা ছবি দেখা যেত রিক্সাচিত্রে। বলা প্রয়োজন, চিত্রকলার আলাদা একটি মাত্রা রিক্সাচিত্র। মূলত রিক্সাচিত্র রিক্সায় উজ্জ্বল রঙে আঁকা কিছুু চিত্রকে বোঝায়। এই চিত্র খুব সাবলীল ভঙ্গিতে যে কোনো  বিষয়বস্তুকে উপস্থাপন করতে সক্ষম। সাধারণত রিক্সার পেছনে, হুডে এবং ছোট ছোট অনুষঙ্গে এই বিশেষ চিত্রকলা লক্ষ্য করা যায়। বিশেষজ্ঞরা ধরনের চিত্রকলাকে ফোক আর্ট, পপ আর্ট কিংবা ক্র্যাফট সবদিক দিয়েই আলোচনা করতে পছন্দ করেন।

আধুনিক প্রযুক্তি প্রয়োগের ফলে সিনেমা ব্যানার পেইন্টিং, বেবিট্যাক্সি পেইন্টিং, ফটোস্টুডিও ব্যাকড্রপ পেইন্টিং, স্টিকার পেইন্টিং, ট্রাক পেইন্টিং ইত্যাদি হারিয়ে গেছে। বাস্তবতা হলো- এখন খুব কম রিক্সাতেই কারুশিল্পীদের আঁকা চিত্রকর্ম স্থান পায়। তাই এটিও হারিয়ে যাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। আশা করা যায়, বিশ্বস্বীকৃতি প্রাপ্তি বিদ্যমান অবস্থার পরিবর্তন ঘটাবে এবং রিক্সাচিত্র সংরক্ষণে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।

×