ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ জুলাই ২০২৪, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১

শ্রম অধিকার ইস্যু

প্রকাশিত: ২০:১০, ৩ ডিসেম্বর ২০২৩

শ্রম অধিকার ইস্যু

.

শ্রম অধিকার ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক পদক্ষেপের পেছনে রাজনীতি রয়েছে বলে চিঠি দিয়ে জানিয়েছে ওয়াশিংটনের বাংলাদেশ দূতাবাস। ব্যবসায়ী মহলে শঙ্কা জেগেছে যে, যুক্তরাষ্ট্র নানাভাবে এটি ব্যবহার করতে পারে। শ্রম ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য জরিমানা ভিসা বিধিনিষেধের মুখে পড়তে পারে বাংলাদেশ। কারণে বিষয়টি অগ্রাধিকার দিয়ে পরবর্তী করণীয় নির্ধারণে তাগিদ দেওয়া হয় চিঠিতে। ফলে, কিছুটা উদ্বেগ থাকলেও বাণিজ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, রাজনীতি ব্যবসা আলাদা জিনিস। ইউরোপ-আমেরিকা এমন কিছু করবে না, যার প্রভাব বাংলাদেশের পোশাকশিল্পে পড়ে। বাংলাদেশ সবচেয়ে কম মূল্যে সারাবিশ্বে ভালোমানের পোশাক রপ্তানি করছে, যা অন্য কোনো দেশ পারবে না। 

একক দেশ হিসেবে দীর্ঘদিন ধরেই দেশের পোশাক রফতানির বৃহত্তম বাজার যুক্তরাষ্ট্র। গত বছর মোট পোশাক রফতানির প্রায় ২০ শতাংশই গেছে যুক্তরাষ্ট্রে। মার্কিন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন অফিস অব টেক্সটাইল অ্যান্ড অ্যাপারেলের (ওটিইএক্সএ) তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালে বিশ্ববাজার থেকে হাজার ৯৯৩ কোটি ২২ লাখ ৫০ হাজার ডলারের পোশাক আমদানি করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এর মধ্যে বাংলাদেশ থেকে আমদানি করেছে ৯৭৪ কোটি ৬১ লাখ ৬০ হাজার ডলারের পোশাক। হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের আমদানি করা মোট পোশাকের দশমিক শতাংশের জোগান দেয় বাংলাদেশ।

গত মাসে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট শ্রমিকদের ক্ষমতায়ন, শ্রম অধিকার শ্রমিকদের মানসম্মত জীবনযাপন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে একটি স্মারকে (প্রেসিডেনশিয়াল মেমোরেন্ডাম) স্বাক্ষর করেছেন। যার প্রেক্ষিতে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, যারা শ্রমিকদের অধিকারের বিরুদ্ধে যাবেন, শ্রমিকদের হুমকি দেবেন, ভয় দেখাবেন, তাদের ওপর প্রয়োজনে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হতে পারে। ওই নীতি সব দেশের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হলেও বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের বক্তব্যে বিষয়টি নিয়ে বাড়তি দুশ্চিন্তাই প্রকাশ পেয়েছে। এটা ঠিক যে, রানা প্লাজা বিপর্যয়ের পর পশ্চিমা ক্রেতা শ্রমিক সংগঠনের জোট অ্যাকর্ড অ্যালায়েন্সের সুপারিশের ভিত্তিতে কর্মপরিবেশ শ্রমিকের নিরাপত্তা উন্নয়নে বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগ হয়েছে দেশে। যদিও সব কারখানার পরিস্থিতি সমান নয়। এর মধ্যে গুটিকতক কারখানার পরিস্থিতিকে হাতিয়ার করে গোটা পোশাক খাতের ওপর পদক্ষেপ নেওয়া হতে পারে বলে কয়েকজন গার্মেন্ট ব্যবসায়ী শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। সেরকম কিছু ঘটবে না বলেই যুক্তরাষ্ট্র আশাবাদী।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এটাও অস্বীকার করতে পারবে না যে, মজুরি অধিকার প্রশ্নে শ্রমিকদের ভেতর কিছু অসন্তোষ রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের নতুন নীতির কারণে যদি আমাদের মালিকপক্ষ শ্রম অধিকার প্রতিষ্ঠায় আরও সচেতন হন, তাহলে দেশের জন্য তা মঙ্গলজনকই হবে। যে শ্রমিকদের শ্রমেঘামে মালিকদের মুনাফা অর্জন, তাদের ভেতর অসন্তুষ্টি বিরাজ করলে সেটি শুভফল বয়ে আনতে পারে না। তৈরি পোশাকশিল্পে মালিকপক্ষ আরও মানবিক, বাস্তবোচিত উদার মনোভাব নিয়ে শ্রম অধিকারসহ শ্রমিকদের সার্বিক বিষয়টি বিবেচনা করবেন, সেটিই প্রত্যাশা।

×