
.
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘের ৭৮তম সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগদানের জন্য বর্তমানে অবস্থান করছেন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে। সেখানে তিনি বিশ্বের শীর্ষ নেতৃবৃন্দের সামনে শুক্রবার আনুষ্ঠানিক ভাষণ দান করেন মাতৃভাষা বাংলায়। এর আগে প্রধানমন্ত্রী বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালকসহ অন্যান্য দেশের শীর্ষ নেতা, রাষ্ট্রপ্রধান ও পদস্থ গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সঙ্গে বৈঠক করেন সাইডলাইনে। সাধারণ পরিষদে প্রদত্ত ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন, যুদ্ধবন্ধ ও নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার, জরুরি অবস্থা মোকাবিলার জন্য আঞ্চলিক খাদ্য ব্যাংক চালু, জলবায়ু পরিবর্তন, মানবাধিকার, নারীর ক্ষমতায়ন, স্বাস্থ্যসেবা, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি), সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলাসহ অন্যান্য বৈশ্বিক সমস্যা, আঞ্চলিক সমস্যা এবং বাংলাদেশ সরকারের অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনৈতিক উন্নয়নের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন। প্রধানমন্ত্রী সবিশেষ গুরুত্বারোপ করেন, বাংলাদেশের সংবিধানে বর্ণিত সব নাগরিকের মৌলিক মানবাধিকারের নিশ্চয়তাসহ আইনি সুরক্ষা। তিনি সুস্পষ্ট ভাষায় বলেন, দেশে গণতন্ত্র আইনের শাসন ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা হবে।
রাশিয়া-ইউক্রেন দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধের প্রতি বিশ্ব নেতৃবৃন্দের দৃষ্টি আকর্ষণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যুদ্ধের কারণে এক পরাশক্তি কর্তৃক অপর পরাশক্তির ওপর নানা বিধিনিষেধ ও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করায় বিশ্বব্যাপী বৃদ্ধি পেয়েছে জ্বালানি তেল-গ্যাসের দাম। এর পাশাপাশি খাদ্যশস্যসহ নিত্যপণ্য পরিবহনে বিশৃঙ্খলা ও উচ্চমূল্য সর্বস্তরের মানুষকে ঠেলে দিয়েছে মূল্যস্ফীতির ঝুঁকিতে। অনেক দেশে দেখা দিয়েছে খাদ্য সংকট। ফলে, মানুষ কষ্টে আছে। সেই প্রেক্ষাপট গুরুত্বসহকারে আমলে নিয়ে অবিলস্বে এ যুদ্ধ বন্ধ করে বিশ্বব্যাপী শান্তি ও শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে হবে।
বাংলাদেশে দীর্ঘদিন থেকে আশ্রিত ১১ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা শরণার্থীর মানবেতর জীবনযাপনের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এর ফলে আমাদের দেশের অর্থনৈতিক পরিবেশ নিরাপত্তাসহ সামাজিক রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টির সমূহ আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনে ইচ্ছুক রোহিঙ্গাদের মধ্যে দেখা দিয়েছে হতাশা। এ পরিস্থিতি সন্ত্রাস ও মৌলবাদকে ইন্ধন জোগাতে পারে। ফলে, আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক নিরাপত্তা পড়তে পারে হুমকিতে। সে অবস্থায় জরুরি ভিত্তিতে জাতিসংঘসহ বিশ্ব সম্প্রদায়কে এগিয়ে আসতে হবে রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানে। মিয়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টি করে অবিলম্বে সেদেশে রোহিঙ্গাদের সম্মানজনক পুনর্বাসন নিশ্চিত করতে হবে।
সর্বোপরি, বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সমস্যার প্রতি বিশ্ব নেতৃত্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, এ সমস্যার দ্রুত সমাধানে এগিয়ে আসতে হবে বিশ্বের উন্নত দেশগুলোকে। তা না হলে পৃথিবী বিশেষ করে অনুন্নত ও সমুদ্র উপকূলবর্তী দেশগুলো অচিরেই সমূহ ঝুঁকি ও ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হবে, যা থেকে মুক্ত নয় বাংলাদেশও। সে অবস্থা বিবেচনায় উন্নত দেশগুলোকে তাদের প্রতিশ্রুত ১০০ বিলিয়ন ডলারের অঙ্গীকার পূরণ করতে হবে অবিলম্বে। প্রধানমন্ত্রী হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, সবাইকে মনে রাখতে হবে যে, বিশ্বকে ঝুঁকি ও বিপন্মুক্ত না রাখতে পারলে আমরা কেউই ঝুঁকিমুক্ত ও নিরাপদ নই।