ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২০ মে ২০২৫, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

বৃক্ষমেলা ও বৃক্ষায়ন

গোরা বিশ্বাস

প্রকাশিত: ২৩:৫৩, ১ জুলাই ২০২৩

বৃক্ষমেলা ও বৃক্ষায়ন

.

বৃক্ষমেলার মূল লক্ষ্য হচ্ছে দেশের প্রতিটি গ্রাম থেকে শুরু করে শহর পর্যন্ত সর্বস্তরের মানুষকে বৃক্ষরোপণের প্রতি আগ্রহী করে তোলা এবং বৃক্ষরোপণ অভিযানকে সবার মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়া আমরা জানি যে, ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে বাংলাদেশ সবচেয়ে জলবায়ুর ঝুঁকিতে থাকা একটি দেশ প্রতিনিয়তই প্রাকৃতিক দুর্যোগের মুখোমুখি হচ্ছে দেশটি প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা করে প্রাণ-প্রকৃতি প্রতিবেশ রক্ষা জীববৈচিত্র্য সমৃদ্ধ টেকসই পরিবেশ গড়ে তুলে, আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে বৃক্ষায়ন বনায়ন কর্মসূচিকে সম্প্রসারিত করা একটি দেশে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় ৪০ ভাগ বনায়ন বা সবুজায়ন থাকার কথা সেখানে দেশে আছে মাত্র ১৭. শতাংশ যে কারণে বনবিভাগ সামাজিক প্রাকৃতিক ম্যানগ্রোভ বন সৃজনের কার্যক্রম হাতে নিয়েছে বাংলাদেশ পৃথিবীর মধ্যে অন্যতম একটি জনবহুল দেশ যার আয়তন মাত্র লক্ষ ৪৭ হাজার ৫৭০ বর্গ কিলোমিটার

জনসংখ্যার তুলনায় দেশটি একেবারেই ছোট ছোট এই দেশটি প্রাকৃতিক সৌন্দর্য সম্পদে ভরপুর এদেশের মাটি খুব উর্বর উর্বর মাটির দেশে যেনতেন ভাবে একটি বীজ বা গাছের চারা পুঁতে রাখলেই এক বিশাল গাছে পরিণত হয় এরপরও আমাদের গাছপালা সবুজের ঘাটতি রয়েছে কেন, তা ভেবে দেখার বিষয় জীবন বাঁচাতে যেমন খাদ্যের প্রয়োজন, তেমনি অক্সিজেনেরও প্রয়োজন অক্সিজেনের ৭০ ভাগ জোগান আসে গাছপালা থেকে তাই বৃক্ষ আমাদের পরম বন্ধু, প্রকৃতির এক অমূল্য সম্পদ পরিবেশের ঢাল স্বরূপ গাছপালা না থাকলে পশু-পাখি কীটপতঙ্গ হ্রাস পাবে এর প্রভাব মানব জীবন কৃষি ক্ষেত্রেও পড়ে থাকে বৃক্ষ শুধু প্রকৃতির সৌন্দর্য বৃদ্ধি সবুজের আচ্ছাদনই বাড়ায় না, মাটির উর্বরতা শক্তি বাড়ায়, মাটির ক্ষয় রোধ করে, ভূগর্ভস্থ পানির স্তর ধরে রাখতে সাহায্য করে, মানুষকে ফুল ফলের জোগান দেয়, জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে সাহায্য করে অসময়ে অর্থের জোগান দেয় মায়ের স্নে আর মায়া গাছের সুশীতল ছায়ায় বেড়ে ওঠেনি এমন মানুষ পৃথিবীতে একজনও নেই অথচ এক শ্রেণির স্বার্থান্বেষী মানুষ গাছের চরম শত্রু হয়ে উঠছে তারা অকারণে গাছপালা ধ্বংস বন উজাড় করে চলছে তাদের কাছে জাতির জিজ্ঞাসা- তারা কি গাছের ছায়ায় বসে একটুখানি শান্তির পরশ খুঁজে পায় না? তাদের পরিবার পরিজন সন্তানরা সুবাসিত ফুলের ঘ্রাণ আর সুস্বাদু ফলের স্বাদ গ্রহণ করে না? তবে কেন এই দস্যুপনা?

সরকার দেশের তাপমাত্রা সহনীয় পর্যায় রাখতে বৃক্ষের পরিমাণ বৃদ্ধির জন্য প্রচুর অর্থ ব্যয় করে যাচ্ছে, অন্যদিকে বৃক্ষ নিধনের মহোৎসব চলছে বিপরীতমুখী ধারা অব্যাহত থাকলে দেশ একদিন বৃক্ষশূন্য হয়ে উঠবে এমন আশঙ্কা পরিবেশবাদীদের এখনই সময় তাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবার সকলে মিলে প্রতিবাদ প্রতিরোধ গড়ে তোলার একই সঙ্গে দেশের প্রচলিত আইনের আওতায় তাদের বিরুদ্ধে শাস্তির ব্যবস্থা করা বৃক্ষরোপণ অভিযানকে সম্প্রসারিত করতে হলে সবার আগে প্রয়োজন ভালো বীজ, গাছের চারা গাছপালা পরিচর্যার জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ সেই সঙ্গে এগুলো কোথায় পাওয়া যাবে সে বিষয়টি বেশ গুরুত্বপূর্ণ

কেননা, দেশকে সবুজ আচ্ছাদিত করতে গাছপালার যেমন প্রয়োজন, তেমনি প্রয়োজন উন্নতমানের নার্সারির দেশের অধিকাংশ গাছপালার জোগান আসে নার্সারি মালিকদের কাছ থেকে বৃক্ষমেলায় অংশ গ্রহণকারী স্টল মালিকদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, পর্যাপ্ত জায়গা সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা না থাকার কারণে তারা কোনো রকমে ব্যবসায় টিকে আছেন তারা মনে করেন, দেশকে গাছপালায় ভরিয়ে তুলতে এবং মানুষের কাছে তা পৌঁছে দিতে নার্সারির ভূমিকা কম নয় দেশে মানসম্মত বীজ চারা উৎপাদনের জন্য হাতে গোনা এক দুটি সরকারী নার্সারি ছাড়া তেমন কোনো মাদার নার্সারি গড়ে ওঠেনি কারণ, বিদেশ থেকে প্রতিবছর প্রচুর গাছ আমদানি করতে হয় ফলে, প্রচুর অর্থ বিদেশে চলে যায় তার ওপর গাছের গুণগত মানও ঝুঁকির মধ্যে থাকে যদি সরকার অন্যান্য শিল্পের মতো অবহেলিত নার্সারি শিল্প মালিকদের প্রতি একটু সুনজর দেয়, তাহলে নার্সারি মালিকগণ দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে যেমন ভূমিকা রাখতে পারবে, তেমনি জলবায়ুর অভিঘাত মোকাবিলায় হতে পারে অংশীদার

প্রতিটি জেলা উপজেলা পর্যায়ে সরকারি উদ্যোগে একটি করে নার্সারি গড়ে উঠলে স্থানীয় লোকজন বৃক্ষরোপণের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠবে এবার বৃক্ষমেলায় ২০ জুন পর্যন্ত লক্ষ হাজার ৪শ৪৪টি গাছ বিক্রি হয়েছে, যার মোটমূল্য কোটি ৩০ লক্ষ ৯২ হাজার ৩শটাকা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার পর পরিবেশের ওপর গুরুত্ব দিয়ে ১৯৭২ সালে ১৬ জানুয়ারি  সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে একটি গাছের চারা রোপণ করে প্রথমে সবুজ বিপ্লবের শুরু করেছিলেন বঙ্গবন্ধুর সেই পথ অনুসরণ করেই প্রকৃতির কন্যা উপাধী প্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরিবেশ রক্ষা জলবায়ুর ঝুঁকি মোকাবিলায় বৃক্ষায়নের ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন সেই লক্ষ্যে বনবিভাগ জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ পরিবেশ প্রতিবেশ রক্ষায় ২২টি সংরক্ষিত বনাঞ্চল এলাকায় স্থানীয় জনগণকে সম্পৃক্ত করার মাধ্যামে ২৮টি সহব্যবস্থাপনা কমিটি গঠন করেছে এই কমিটির সদস্য হিসাবে হাজার ৬শ৯০ জনের মধ্যে ৩শ৮২ জনই মহিলা সম্প্রতি বনবিভাগ জনসচেতনতামূলক বনব্যবস্থা চালু করেছে যার মাধ্যমে রক্ষিত এলাকা বনাঞ্চল সংলগ্ন ৩১৫টি গ্রামের ৪১ হাজার মানুষকে বননির্ভর করা হয়েছে সামাজিক বনায়নসহ দেশব্যাপী বৃক্ষরোপণের ফলে দেশে মোট বৃক্ষাচ্ছাদিত ভূমির পরিমাণ মোট আয়তনের ২২.৩৭ ভাগে উন্নীত হয়েছে ২০৩০ সাল নাগাদ ২৫ ভাগে উন্নীত করার লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে আসুন, আমরা সবাই বৃক্ষরোপণে আগ্রহী হয়ে উঠি শুধু দায়সারা ভাবে বৃক্ষরোপণ নয়, তাকে সন্তানের মতো স্নে মমতা দিয়ে পরিচর্যার মাধ্যমে বড় করে তুলি তাহলেই জাতির পিতার সোনার বাংলা প্রধানমন্ত্রীর সবুজ বাংলা নির্মাণের স্বপ্ন বাস্তবায়ন হবে

লেখক : পরিবেশকর্মী

×