ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

 বিশ্বনেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

মো. সাখাওয়াত হোসেন

প্রকাশিত: ২৩:২৬, ২৫ মে ২০২৩

 বিশ্বনেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

.

বিশ্বে দীর্ঘ সময় ধরে নারী নেতৃত্বের আসনে অধিষ্ঠিতদের মধ্যে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনন্য সাধারণ। শেখ হাসিনা সর্বপ্রথম ১৯৯৬ সালে রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হন এবং ২০০১ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৮ সালে পুনরায় তিনি রাষ্ট্রক্ষমতায় আসেন। পরবর্তীতে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর সংসদীয় আসনের অধিকাংশ আসন পেয়ে সরকার গঠন করেন। অদ্যাবধি রাষ্ট্রক্ষমতায় আছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা। ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী বিভিন্ন সময়ে ১৫ বছরের বেশি সময়কাল দায়িত্ব পালন করেছেন। শ্রীলঙ্কার চন্দ্রিকা কুমারাতুঙ্গা প্রধানমন্ত্রী প্রেসিডেন্ট হিসেবে ১১ বছর দিন দায়িত্ব পালন করেছেন। যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী মার্গারেট থ্যাচার মে ১৯৭৯ থেকে ১৮ নভেম্বর ১৯৯১ সাল পর্যন্ত ১১ বছর ২০৮ দিন দায়িত্ব পালন করেছেন। সময়কাল বিবেচনায় শেখ হাসিনা বিশ্বের নারী নেতৃত্বের মধ্যে উল্লেখযোগ্যদের অতিক্রম করে গেছেন। 

জার্মানির এঙ্গেলা মেরকেল চ্যান্সেলর হিসেবে ২২ নভেম্বর ২০০৫ থেকে ডিসেম্বর ২০২১ পর্যন্ত টানা ১৬ বছর দায়িত্ব পালন করেছেন। জার্মানিকে নতুনভাবে বিশ্বের বুকে উপস্থাপন স্বীকৃতি আদায়ের মাধ্যমে দেশের অর্থনৈতিক রাজনৈতিক উন্নয়নে ভূমিকা রেখেছেন। রাষ্ট্রক্ষমতায় অন্যান্য জনপ্রিয় নেতৃত্বের তুলনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের সময়কাল বেশি। এই সময়ে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত হয়েছে এবং মানুষের মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি পেয়েছে বহুলাংশে। আন্তর্জাতিক পরিসরে শেখ হাসিনার নেতৃত্বগুণ নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। বিশ্ব নেতৃবৃন্দ শেখ হাসিনা বন্দনায় মেতেছেন। বাংলাদেশ সরকার করোনার ধাক্কা সফলভাবে মোকাবিলা করতে সক্ষম হয়েছে, বেশ কিছু মেগা প্রকল্প বাস্তবায়িত হয়েছে এবং আরও কিছু প্রকল্প বাস্তবায়নের অপেক্ষায়। ধরনের সাহসী পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের জীবনমানের উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে সরকার।

বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার সরকার নারীদের যথার্থ মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় অর্থনৈতিক, সামাজিক, প্রশাসনিক রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে নারীশিক্ষার প্রসারে ব্যাপকভাবে কাজ করে যাচ্ছে। বঙ্গবন্ধু কন্যা পারিবারিকভাবে নারীর ক্ষমতায়ন, নারী নেতৃত্ব বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সেক্টরে নারীদের অংশগ্রহণ নিয়ে পূর্ব অভিজ্ঞতাসমেত উদ্যোগ গ্রহণ করে নারীর উন্নয়নে বহুমুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু মহান মুক্তিযুদ্ধে যেসব নারী পাকিস্তানি সৈন্যদের দ্বারা সম্ভ্রম হারিয়েছেন, তাদের বীরাঙ্গনা হিসেবে ভূষিত করেছেন। জাতির পিতার নির্দেশনায় ১৯৭২ সালে সরকার বীরাঙ্গনাদের জন্য নারী পুনর্বাসন বোর্ড গঠন করে তাদের পারিবারিক সামাজিকভাবে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। বর্তমান সময়ে বঙ্গবন্ধু কন্যা দুস্থ নারীদের জন্য, গর্ভবতী মেয়েদের জন্য নানা উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। তাদের মানসিক শক্তিকে ত্বরান্বিত করতে আধুনিক যুগোপযোগী পদক্ষেপ গ্রহণ করছেন। 

অর্জিত পারিবারিক শিক্ষা তিনি দেশ গড়ার কাজে লাগাচ্ছেন। বঙ্গবন্ধু কারান্তরীণ থাকাকালীন বেগম মুজিব রাজনীতিসহ পরিবার সামলেছেন। সে সময়ে বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব শেখ হাসিনাকে রাজনীতি করার অনুমতি দিয়েছেন। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী যখন ইডেন কলেজে ভিপি প্রার্থী, তাঁকে জয়লাভ করানোর জন্য নির্বাচনে সকলকে একযোগে কাজ করার জন্য নির্দেশ প্রদান করেছিলেন বেগম মুজিব। কাজেই নারীর স্বনির্ভরতা, নারীর রাজনীতিতে অংশগ্রহণে উদ্বুদ্ধকরণের বিষয়ে শেখ হাসিনা পরিবার থেকেই শিক্ষা পেয়েছেন। নিজ দলে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে নারীদের অন্তর্ভুক্ত করেছেন। সরাসরি নির্বাচনে অংশগ্রহণের নিমিত্তে নারীদের দল থেকে মনোনয়ন প্রদান করছেন। প্রকৃত অর্থে নারী-পুরুষের সমন্বিত কার্যক্রম ব্যতীত একটি দেশের কাক্সিক্ষত পরিবর্তন তথা উন্নয়ন কোনোভাবেই সম্ভব নয়।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০০৯ সালে রাষ্ট্র ক্ষমতায় এসে জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতি ২০১১ প্রণয়ন করেন। নারীদের শিক্ষা সহায়ক পরিবেশ তৈরিতে প্রধানমন্ত্রীর নিরলস প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকায় শিক্ষাক্ষেত্রে কর্মক্ষেত্রে নারীরা ব্যাপক সাফল্য পাচ্ছেন। বিভিন্ন ভর্তি পরীক্ষায় নারীরা প্রথম স্থান অধিকার করছে। কিছু কিছু জায়গায় বিশেষ করে চিকিৎসাবিদ্যায় নারীর অংশগ্রহণ তুলনামূলকভাবে বেশি। জাতীয় সংসদের স্পিকার, প্রথম স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পররাষ্ট্রমন্ত্রীর পদে নারীরা দায়িত্ব পালন করেন। সংসদ উপনেতাও একজন নারী। উপজেলা পরিষদে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদ সৃষ্টি ইউনিয়ন পরিষদে তিনজন নারী সদস্য নির্বাচনে অংশগ্রহণের মাধ্যমে নির্বাচিত হওয়ার বিধান নিশ্চিত করা হয়েছে। বাংলাদেশের নারীরা বিচারক, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, সচিবসহ নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে দক্ষতা নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছেন। শিক্ষা, চিকিৎসা, বিজ্ঞান প্রযুক্তি, কূটনৈতিক দক্ষতা, খেলাধুলা, পর্বতারোহণ, নাসায় কর্মরতসহ সব চ্যালেঞ্জিং পেশায় সাফল্যের চিহ্ন রাখছেন। শেখ হাসিনা সরকারই উচ্চ আদালতে বিচারপতি, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম নারী উপাচার্য, নারীকে সেনাবাহিনীর মেজর জেনারেল পদে পদায়িতও করেছে।

শেখ হাসিনার সরকার সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত মেয়েদের বিনা বেতনে শিক্ষার ব্যবস্থা করেছেন। এসএসসি সমমানের পরীক্ষায় পাসের হারে এগিয়ে রয়েছে ছাত্রীরা। স্কুলভিত্তিক প্রকল্প গ্রহণ করছে সরকার, যেখানে নারীদের নানাবিধ বিষয়কে এড্রেস করে নারীদের সতর্ক করে তোলা হচ্ছে। পুরুষের ন্যায় মেয়েদের সুযোগ সৃষ্টি হওয়ায় নারীরাও ইতিবাচক অগ্রযাত্রায় এগিয়ে যাচ্ছে। সরকারের পক্ষ থেকে শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট ফান্ড গঠন করে প্রাথমিক থেকে স্নাতকোত্তর পর্যন্ত নারীদের শিক্ষাবৃত্তি প্রদান করা হচ্ছে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে ৬০ ভাগ নারী শিক্ষক বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। বাল্যবিয়ে রোধ নারী নির্যাতন প্রতিরোধে সরকারের কঠোর অবস্থানের কারণে নারী নির্যাতন কমে এসেছে। সন্তান জন্মের পর আগে অভিভাবকের জায়গায় শুধু পিতার নাম লেখা হতো, এখন মায়ের নামও লেখা হয়। নারীদের যথাযথ সম্মান প্রদর্শনের ক্ষেত্রে সরকার বদ্ধপরিকর এবং সরকার গৃহীত কার্যক্রমের মাধ্যমে উপকৃত হচ্ছে নারীরাও।

জাতিসংঘসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নারীরা রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালন করছেন। শান্তিরক্ষী মিশনে নারী সদস্যরা অত্যন্ত সফলতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছেন। আন্তর্জাতিক সংস্থায়ও নারীদের অগ্রগণ্য ভূমিকা ঈর্ষণীয়। ইতালিতে অবস্থিত The World Academy of Sciences (TWAS)  ২০২০ সালে সারাবিশ্বে যে কয়জন ঞডঅঝ ফেলো মনোনীত করেছে, তার মধ্যে তিনজন বাংলাদেশী বিজ্ঞানী আছেন। দক্ষিণ এশিয়ার সাফ চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশের মেয়েরা। মেয়েরা ক্রিকেটেও সুনামের সঙ্গে অগ্রযাত্রা অব্যাহত রেখেছে। আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে বাংলাদেশের পতাকা হাতে দ্যুতি ছড়াচ্ছে মেয়েরা এবং এর প্রভাবে অন্য মেয়েরা তথা নারীরা উদ্বুদ্ধ হচ্ছে, অনুপ্রাণিত হয়ে সাহসের সঙ্গে বিভিন্ন কর্মকান্ডে অংশগ্রহণ করছে। বিদেশে উচ্চশিক্ষা গ্রহণে নারীদের অংশগ্রহণ চোখে পড়ার মতো। 

আন্তর্জাতিকভাবে শেখ হাসিনা নারীর ক্ষমতায়নে অনন্য অবদানের জন্য ইনস্টিটিউট অব সাউথ এশিয়ান উইমেন কর্তৃকলাইফটাইম কন্ট্রিবিউশন ফর উইমেন এমপাওয়ারমেন্ট অ্যাওয়ার্ড’, বাংলাদেশে নারী শিক্ষা উদ্যোক্তা তৈরিতে অসামান্য নেতৃত্ব দানের জন্যগ্লোবাল উইমেনস লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড’, দক্ষিণ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় রাজনৈতিক অঙ্গনে লিঙ্গবৈষম্য হ্রাসে অগ্রণী ভূমিকা পালনের জন্যউইমেন ইন পার্লামেন্ট (ডব্লিউআইপি)’ ইউনেসকোডব্লিউআইপি গ্লোবাল ফোরাম অ্যাওয়ার্ড’, নারী শিক্ষা প্রসারের জন্যট্রি অব পিস’, নারীর ক্ষমতায়নে অসামান্য অবদান রাখার জন্য ইউএন উইমেনএজেন্ট অব চেঞ্জপুরস্কার প্লানেট ৫০-৫০ চ্যাম্পিয়নপুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন।

নারীর ক্ষমতায়ন এবং নারীর নেতৃত্বে বাংলাদেশের অগ্রগামী ভূমিকা বিশ্বের অন্যান্য দেশের জন্য উদাহরণ হয়ে থাকবে। নারীদের সক্রিয় অংশগ্রহণের ফলে আর্থিক উন্নতি, সমৃদ্ধি প্রবৃদ্ধি অর্জন সম্ভব হয়েছে। ২০৪১ সালের রূপকল্প বাস্তবায়নে গৃহীত পরিকল্পনা পরিপূর্ণরূপে বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে নারীদের অংশগ্রহণ অনস্বীকার্য। লক্ষ্যে নারীদের জীবনমান উন্নয়ন, নারীদের কর্মসংস্থান, সিদ্ধান্ত গ্রহণে নারীদের ভূমিকা; সর্বোপরি নারীদের সমভাবে-সমসুযোগে চলমান কার্যাক্রম অব্যাহত রাখার স্বার্থে সরকার উদ্যোগ গ্রহণ করে যাচ্ছে এবং এর সুফল পাচ্ছে বাংলাদেশ।

লেখক : সভাপতি, ক্রিমিনোলজি অ্যান্ড পুলিশ সায়েন্স বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

×