ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১৭ মে ২০২৫, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

লাহোর প্রস্তাব থেকেই পাকিস্তানের জন্ম

কাওসার রহমান 

প্রকাশিত: ১৪:১৪, ২৭ এপ্রিল ২০২৩; আপডেট: ১৫:১৬, ২৭ এপ্রিল ২০২৩

লাহোর প্রস্তাব থেকেই পাকিস্তানের জন্ম

এ কে ফজলুল হক

পাকিস্তানের জন্মের বীজ হিসেবে বিবেচনা করা হয় লাহোর প্রস্তাবকে। ১৯৪০ সালে নিখিল ভারত মুসলিম লীগের সম্মেলনে গৃহীত হয়েছিল সেই প্রস্তাব। এই প্রস্তাবে ভারতের উত্তর-পূর্ব ও উত্তর-পশ্চিম অংশে মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ প্রদেশগুলো নিয়ে একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম মুসলিম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার কথা বলা হয়েছিল। 

বঙ্গীয় মুসলিম লীগ নেতা এবং বাংলার মুখ্যমন্ত্রী এ কে ফজলুল হক সম্মেলনে ওই প্রস্তাবটি পেশ করেছিলেন। পরে ওই লাহোর প্রস্তাবই ‘পাকিস্তান প্রস্তাব’ হিসেবে বিবেচিত হয়। এই প্রস্তাবের পর ভারত বর্ষে হিন্দু মুসলিম বিভাজন ক্রমেই স্পষ্ট হয়ে উঠে। ছয় বছর পর ১৯৪৬ সালের সাধারণ নির্বাচনে মুসলিম এলাকায় মুসলিম লীগের প্রার্থী এবং হিন্দু এলাকায় কংগ্রেসের প্রার্থীরা বিপুল ভোটে জয়ী হন। মুসলিমদের জন্য আলাদা রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দাবিতেই মুসলমানরা দলে দলে ভোট কেন্দ্রে গিয়ে সেসময় মুসলিম লীগকে ভোট দিয়েছিল।
ওই নির্বাচনের ফলের ভিত্তিতেই লর্ড মউন্টব্যাটেন ১৯৪৭ সালের জুন মাসে ধর্মের ভিত্তিতে ভারত বর্ষ ভাগের ঘোষণা দেন। ১৪ই অগাস্ট বৃটিশরা শাসনভার ছেড়ে দিলে দ্বি-জাতি তত্তে্বর ভিত্তিতে জন্ম হয় ভারত ও পাকিস্তানের।

ভারতকে মাঝখানে রেখে পাকিস্তানের দুটো অংশ ছিল পশ্চিম ও পূর্ব পাকিস্তান। ভারত ভাগের পরে এক দশক ধরে পূর্ব পাকিস্তানের আনুষ্ঠানিক নাম ছিল পূর্ব বাংলা। কিন্তু জন্মের পর থেকে একই দেশের এই দুটো অংশের মধ্যে বৈষম্য ক্রমশ স্পষ্ট হতে থাকে। ফলে পূর্ব বাংলার মুসলমানদের মোহভঙ্গ হতে আর দেরি হয়নি। ২৩ বছর পর এক রক্তক্ষয়ী যুদ্দের মাধ্যমে পূর্ব বাংলা এক স্বাধীন রাষ্ট্র বাংলাদেশে পরিণত হয়। 

ইতিহাসবিদদের মতে, ১৯৪০ সালের ঐতিহাসিক লাহোর প্রস্তাবই আসলে ভারত ভাগ হয়ে ভারত ও পাকিস্তান এবং পরবর্তীকালে স্বাধীন বাংলাদেশের ভিত্তি। আর লাহোর প্রস্তাবই খ্যাতিমান করে তুলেছিল এ কে ফজলুল হককে, যদিও তার লাহোর প্রস্তাবে তিনি পাকিস্তান শব্দটিও উচ্চারণ করেননি। আবার ১৯৪৭ সালে যখন ভারতবর্ষ ভাগ হয় তখন ফজলুল হকের তৎপরতাও খুব একটা স্পষ্ট ছিলনা। যদিও পরে তিনি পূর্ব পাকিস্তানের রাজনীতিতে জড়িয়েছিলেন এবং ৫৪ সালে যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে জয়লাভের পর তার নেতৃত্বেই মন্ত্রিসভা গঠিত হয়েছিল।

সেই লাহোর প্রস্তাবের জনক অবিভক্ত বাংলার মুখ্যমন্ত্রী শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হকের ৬১তম মৃত্যুবার্ষিকী বৃহস্পতিবার (২৭ এপ্রিল) পালিত হচ্ছে বাংলাদেশে। ১৯৬২ সালের ২৭ এপ্রিল ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন তিনি। শিক্ষানুরাগী এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির জীবন্ত প্রতীক হিসেবেও ইতিহাসের পাতায় তার রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ স্থান।

শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক ১৮৭৩ সালের ২৬ অক্টোবর ঝালকাঠি জেলার রাজাপুরের সাতুরিয়া গ্রামের মিঞা বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন। বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনে তিনি অবিভক্ত বাংলার মুখ্যমন্ত্রী, পাকিস্তান কেন্দ্রীয় সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, পূর্ব পাকিস্তানের গভর্ণর, যুক্তফ্রন্ট সরকারের মুখ্যমন্ত্রী, কলকাতা সিটি কর্পোরেশনের প্রথম মুসলিম মেয়র এবং আইনসভার সদস্যসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। 

তৎকালীন পূর্ব বাংলার সন্তান হয়ে ভারতীয় উপমহাদেশে প্রায় ৫০ বছর ধরে রাজনৈতিক ক্ষেত্রে সুপরিচিত নাম ছিল এ কে ফজলুল হক। বাংলার মানুষের কাছে তাঁর পরিচিতি ছিল শেরে বাংলা হিসেবে। তবে লাহোর প্রস্তাবই তাকে রাতারতি খ্যাতিমান করে তুলেছিল।
গবেষক ও প্রাবন্ধিক আহমদ রফিক তার ‘দেশবিভাগ: ফিরে দেখা’ গ্রন্থে লিখেছেন, ১৯৪০ সালে লাহোরে অনুষ্ঠিত মুসলিম লীগের অধিবেশনে ভারতীয় মুসলমানদের জন্য স্বতন্ত্র বাসভূমির যে প্রস্তাব গৃহীত হয়, তাতেই দেশ বিভাগের ভিত তৈরি হয়। ইতিহাসে সেই প্রস্তাব লাহোর প্রস্তাব হিসাবে উল্লেখিত হলেও রাজনৈতিক আলোচনায় তা হয়ে ওঠে ‘পাকিস্তান প্রস্তাব’। 

হিন্দু ও মুসলমান দুই ভিন্ন জাতি- জিন্নাহর (পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ) এ তত্তে¡র ভিত্তিতেই লাহোর প্রস্তাব (মার্চ, ১৯৪০) দেশবিভাগের তাত্তি¡ক ভিত রচনা করে। অর্থাৎ ৪৭ সালে ভারত যখন ভাগ করা হয় তখন রাজনীতির মূল মঞ্চে না দেখা গেলেও দেশভাগের ভিত রচনার বীজ রোপিত হয়েছিলো এ কে ফজলুল হকের হাত ধরেই, ১৯৪০ সালে লাহোরে।

বরিশাল জেলায় বাকেরগঞ্জের সাতুরিয়ায় তিনি জন্মগ্রহণ করেন ১৮৭৩ সালের ২৬শে অক্টোবর। বরিশাল জিলা স্কুল ও পরে কলকাতায় প্রেসিডেন্সি কলেজে শিক্ষা লাভ করেন। ১৮৯৪ সালে তিনি একই বছরে রসায়ন, গণিত ও পদার্থবিদ্যা তিনটি বিষয়ে অনার্সসহ কৃতিত্বের সঙ্গে স্নাতক পরীক্ষা পাশ করেন, যা ছিল একটি বিরল দৃষ্টান্ত।

ইংরেজি ভাষায় এমএ পাঠ শুরু করলেও পরে তিনি গণিতশাস্ত্রে এমএ ডিগ্রি নেন ১৮৯৬ সালে। তিনি আইনেও স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেছিলেন এবং কলকাতার খ্যাতনামা আইনজীবী স্যার আশুতোষ মুখার্জির অধীনে আইনের শিক্ষানবিশ হয়েছিলেন। দুবছর শিক্ষানবিশীর পর তিনি কলকাতা হাইকোর্টের আইনজীবী হিসাবে আইন ব্যবসা শুরু করেন।

যদিও এক বছরের মাথায় পিতার মৃত্যুর পর তিনি ফিরে গিয়েছিলেন বরিশালে এবং সেখানে বরিশাল আদালতে যোগ দিয়েছিলেন। আইন ব্যবসা ছেড়ে ফজলুল হক সরকারি চাকরি নিলেন ১৯০৬ সালে। কিন্তু ব্রিটিশ সরকারের সঙ্গে বনিবনা না হওয়ায় ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেটের পদ থেকে তিনি ইস্তফা দেন ১৯১১ সালে। আবার তিনি ফিরে যান কলকাতা হাইকোর্টে আইনের পেশায়।

১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গের পর ঢাকার চতুর্থ নবাব স্যার খাজা সলিমুল্লাহ বাহাদুর মুসলমানদের স্বার্থ রক্ষার জন্য ১৯০৬ সালের ৩০ ডিসেম্বর ঢাকায় অল ইন্ডিয়া মুসলিম এডুকেশন কনফারেন্স আহ্বান করেছিলেন। ওই সম্মেলন থেকেই জন্ম নেয় নিখিল ভারত মুসলিম লীগ।

ঢাকার আহসান মঞ্জিলে অনুষ্ঠিত এই সম্মেলনে যোগ দিয়েছিলেন ফজলুল হক। পরে জড়ান মুসলিম লীগের রাজনীতিতে। লক্ষৌ শহরে ১৯১৬ সালে মুসলিম লীগ ও কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশনে তিনি যে প্রস্তাব উত্থাপন করেছিলেন, তা ‘লক্ষৌ চুক্তি’ নামে অভিহিত হয়। এই চুক্তির অন্যতম একজন প্রধান উদ্যোক্তা ছিলেন ফজলুল হক। ওই অধিবেশনে উপস্থিত ছিলেন মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ এবং মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী।

১৯৩৫ সালে কলকাতা কর্পোরেশনের মেয়র নির্বাচিত হন তিনি। তিনিই ছিলেন এ পদে অধিষ্ঠিত প্রথম বাঙালি মুসলমান। এভাবে ধীরে ধীরে তিনি ভারতবর্ষের রাজনীতির গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে পরিণত হন।

এ প্রসঙ্গে আহমদ রফিক লিখেছেন, ত্রিশের দশকের শেষ দিক থেকে বঙ্গীয় রাজনীতিতে, বিশেষ করে বঙ্গীয় মুসলিম রাজনীতিতে আবুল কাসেম ফজলুল হক একটি গুরুত্বপূর্ণ নাম হয়ে উঠে। তার হাত ধরেই বঙ্গীয় রাজনীতির পালাবদলের সূচনা। ‘...বঙ্গীয় রাজনীতির রঙ্গমঞ্চে সে সময়কার অন্যতম প্রধান চরিত্র এ কে ফজলুল হক তার ভূমিপুত্র ও স্থানীয় সমর্থকদের ভাষায় তিনি হয়ে উঠেন ‘মোগো হক সাব’।’

১৯২৯ সালে তিনি প্রজাস্বার্থে গঠন করেছিলেন কৃষক প্রজাপার্টি। আর অল্প রাজনৈতিক পরিচিতি নিয়েই অল্প সময়ের মধ্যে কলকাতার মেয়র হন ও পরে ১৯৩৭ সালে প্রাদেশিক নির্বাচনেও সাফল্য পান। যদিও নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাননি তবে তার দল ৩৬ আসন পেয়ে তখনকার রাজনৈতিক হিসেব নিকেশ বদলে দিয়েছিল।

তবে রাজনীতিক হিসেবে তিনি ভারতীয় উপমহাদেশের ইতিহাসে স্থান করে নেন মূলত ১৯৪০ সালে লাহোর প্রস্তাব উত্থাপনের মধ্য দিয়ে। এই প্রস্তাবের সাত বছর পর লর্ড মাউন্টব্যাটেন ১৯৪৭ সালের জুন মাসে ঘোষণা করেন ব্রিটিশ সরকার দেশ বিভাগের নীতি মেনে নিয়েছে। ১৪ই অগাস্ট তারা শাসনভার ছেড়ে দিলে ওই দ্বি-জাতি তত্তে¡র ভিত্তিতে জন্ম হয় ভারত ও পাকিস্তানের।

এ প্রসঙ্গে রাজনৈতিক গবেষক মহিউদ্দিন আহমদ তার ‘আওয়ামী লীগ: উত্থান পর্ব ১৯৪৮-১৯৭০’ গ্রন্থে লিখেছেন, পূর্ববঙ্গের সার্বভৌম অবস্থানের একটা রূপকল্পের সন্ধান পাওয়া যায় ১৯৪০ সালের ২৩-২৪ মার্চ লাহোরে অনুষ্ঠিত মুসলিম লীগের ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে। ওই  বৈঠকে গৃহীত তিনটি সার্বভৌম অঞ্চল নিয়ে একটি সর্বভারতীয় কনফেডারেশনের প্রস্তাব ছিল। স্যার জাফরুল্লাহ খানের লেখা প্রস্তাবটি পাঠ করেছিলেন অবিভক্ত বাংলার প্রধানমন্ত্রী শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক।

১৯৪৬ সালের ৯ই এপ্রিল দিল্লিতে মুসলিম লীগের নির্বাচিত পার্লামেন্ট সদস্যদের এক কনভেনশনে জিন্নাহর পরামর্শে অবিভক্ত বাংলার তখনকার প্রধানমন্ত্রী সোহরাওয়ার্দী ‘লাহোর প্রস্তাবে’র কয়েকটি শব্দ বদলে দিয়ে এক পাকিস্তানের প্রস্তাব উত্থাপন করেন। 

এ প্রসঙ্গে ইতিহাসবিদ অধ্যাপক সৈয়দ আনোয়ার হোসেন বলছেন, লাহোরে প্রস্তাবে ফজলুল হক পাকিস্তান শব্দটিই উল্লেখ করেননি। তবে তিনি মুসলিম এলাকাগুলো নিয়ে রাষ্ট্রসমূহের কথা বলেছেন। অন্যদিকে জিন্না ও সোহরাওয়ার্দির তৎপরতায় সামনে এককেন্দ্রিক পাকিস্তানের ধারণা সামনে চলে আসার পর দেশভাগে আর ফজলুল হকের তেমন কোন তৎপরতা দেখা যায় না।

১৯৪০ সালের ২৩ মার্চ লাহোরে সর্বভারতীয় মুসলিম লীগের সাতাশতম বার্ষিক অধিবেশনে তখনকার বাংলার নেতা ও প্রধানমন্ত্রী আবুল কাশেম ফজলুল হক প্রস্তাব উত্থাপন করেন, ‘যেসব অঞ্চলে মুসলমানরা সংখ্যাগরিষ্ঠ, যেমন ভারতের উত্তর-পশ্চিম অঞ্চল এবং পূর্বাঞ্চল-সেগুলো একই দলভুক্ত হয়ে স্বাধীন রাষ্ট্রসমূহ গঠন করতে পারে, যেখানে গঠনকারী প্রতিটি ইউনিট হবে স্বায়ত্তশাসিত ও সার্বভৌম।’ প্রস্তাবটি পরদিন পাস হয়।

এই প্রস্তাবের সূত্র ধরেই সাত বছরের মাথায় তৈরি হয় পাকিস্তান, মুসলমানের আলাদা দেশ। মূলত ধর্মের ভিত্তিতে ভাগ হওয়া রাজনীতির অনিবার্য পরিণতি ছিল ভারত ও পাকিস্তান। ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট তৈরি হল পাকিস্তান। আধুনিক বিশ্বে ধর্মের ভিত্তিতে তৈরি হওয়া এটিই প্রথম রাষ্ট্র, আর এ ক্ষেত্রে দ্বিতীয় উদাহরণ হল ইসরায়েল।

কিন্তু দেশভাগের সমযে খুব একটা সরব উপস্থিতি দেখা যায়নি ফজলুল হকের। এর কারণ হিসেবে ইতিহাসবিদদের অনেকে বলেন, তিনি আসলে মুহাম্মদ আলী জিন্নার সঙ্গে রাজনীতিতে পেরে ওঠেননি। আর জিন্নাহও চাননি ফজলুল হকের মতো অনগ্রসর মুসলমানদের কাছে ব্যাপক জনপ্রিয় কেউ রাজনীতিতে প্রবল প্রতাপ নিয়ে টিকে থাকুক।

এ প্রসঙ্গে আহমদ রফিক তার গ্রন্থে লিখেছেন, ‘... জিন্নার কূটচালে পরবর্তী সময়ে ফজলুল হকের প্রজা-রাজনীতির, এমনকি সাময়িক হলেও সেই চল্লিশের শেষে ক্রান্তিক্ষণের রাজনীতির অবসান ঘটে। তাই দেশবিভাগের কুটিল-জটিল রাজনীতির অন্ধকার সময়ে ফজলুল হক অপাঙক্তেয়, রাজনৈতিক প্রভাব বিচ্যুত হন।’

তবে ১৯৪২ সাল থেকেই ফজলুল হক প্রবলভাবে দ্বিজাতিতত্তে¡র বিরোধিতা করতে থাকেন এবং মুসলিম লীগের প্রভাব হ্রাস করার জন্য চেষ্টা চালিয়েছিলেন। কিন্তু ১৯৪৬ সালের সাধারণ নির্বাচনে মুসলমানদের জন্য সংরক্ষিত ১১৭টি আসনের মধ্যে মুসলিম লীগ ১১০টি আসন পায়, আর এ কে ফজলুল হকের কৃষক প্রজা পাটি মাত্র চারটি আসন পাওয়ার পর আসলে ক্রমশ রাজনৈতিকভাবে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন তিনি।

ওই বছরেই কলকাতায় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার পর কলকাতার অবস্থা দেখে তিনি দারুণভাবে মর্মাহত হন ও পরে ওই বছরের সেপ্টেম্বরে মুসলিম লীগে যোগ দেন। এরপর ৪৭ সালে দেশভাগের পর তিনি ঢাকায় বাস করতে শুরু করেন ও পূর্ব পাকিস্তানের অ্যাডভোকেট জেনারেল হন। পরে ৫৪ সালে যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে জয়লাভ করলে তিনি মুখ্যমন্ত্রী হন।
ফজলুল হকের রাজনীতির লক্ষ্যই ছিলো অনগ্রসর মুসলমান সমাজের উন্নতি, তবে তিনি অসাম্প্রদায়িক রাজনীতিতেই বিশ্বাসী ছিলেন। ত্রিশের দশকের শেষ দিক থেকে বঙ্গীয় রাজনীতিতে, বিশেষ করে বঙ্গীয় মুসলিম রাজনীতিতে আবুল কাসেম ফজলুল হক ছিল একটি গুরুত্বপূর্ণ নাম। তার হাত ধরেই বঙ্গীয় রাজনীতির পালাবদলের সূচনা। সেই সময় থেকেই পূর্ব বাংলার মানুষের কাছে তিনি পরিচিত হয়ে উঠেন ‘শেরে বাংলা’ হিসেবে। দেশভাগের পর তিনি পাকিস্তানের রাজনীতিতে বিশেষ করে পূর্ব পাকিস্তানের রাজনীতিতে জড়িয়ে   পড়েন।

১৯৫৬ সালে তিনি পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর হয়েছিলেন এবং ১৯৫৮ সালে সে পদ থেকে অপসারিত হন। তারপর থেকেই তিনি প্রায় পাঁচ দশকের রাজনীতি থেকে অবসর গ্রহণ করেন। ১৯৬২ সালের ২৭ শে এপ্রিল ঢাকাতেই তাঁর মৃত্যু হয়। 

 
 

এসআর

×