ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

খাদ্য নিরাপত্তা

প্রকাশিত: ২০:৩৪, ২০ মার্চ ২০২৩

খাদ্য নিরাপত্তা

সম্পাদকীয়

বিশ্বজুড়ে অভ্যন্তরীণ খাদ্য মূল্যস্ফীতি রয়েছে উচ্চ পর্যায়ে। অক্টোবর ২০২২ থেকে ফেব্রুয়ারির ২০২৩ পর্যন্ত খাদ্যের তথ্যে দেখা গেছে, প্রায় সব নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশে বিরাজ করছে উচ্চ মূল্যস্ফীতি। নিম্ন আয়ের দেশগুলোতে মূল্যস্ফীতি ৯৪ শতাংশের ওপরে। উচ্চ আয়ের দেশগুলো প্রায় ৮৭ শতাংশ উচ্চ মূল্যস্ফীতির সম্মুখীন হচ্ছে। আফ্রিকা, উত্তর আমেরিকা, লাতিন আমেরিকা, দক্ষিণ এশিয়া, ইউরোপ ও মধ্য এশিয়ার দেশগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সবচেয়ে বেশি। আমদানি ছাড়াও নানা কারণে বিশ্বব্যাপী চড়া ছিল খাদ্যপণ্যের দাম।

বাংলাদেশের বাজারেও আটা ও মোটা চালের বাজারে বিরাজ করছে চরম অস্বস্তি। চাল-আটার দামে অস্বস্তি থাকলেও খাদ্যে নিরাপদ বাংলাদেশ। তবে আমদানিতে মন্দা এখনো প্রকট। বিশ্বব্যাংকের ‘ফুড সিকিউরিটি আপডেট’ শীর্ষক প্রতিবেদনে খাদ্যমূল্য নিয়ে বৈশ্বিক চিত্রে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
বিশ্বের বৃহত্তম গম উৎপাদক দেশ রাশিয়া ও ইউক্রেন। যুদ্ধ শুরুর পর ইউক্রেন কয়েক মাস গম রপ্তানি করতে পারেনি। ফলে গমের দাম বাংলাদেশসহ বিশ্বের সবখানেই অনেকটা বেড়েছে। যুদ্ধের কারণে জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি এবং সরবরাহ ব্যবস্থা বিঘ্নিত হওয়ার কারণে মূল্যস্ফীতি বেড়েছে আরেক দফা। নি¤œ আয় বা গরিব মানুষের ব্যয়ের সিংহভাগ যায় খাদ্যের পেছনে। শহরের প্রান্তিক গোষ্ঠীগুলো গড়ে মোট খরচের ৬১ দশমিক ৩১ শতাংশ খাদ্যের পেছনে খরচ করে।

গ্রামীণ প্রান্তিক গোষ্ঠীর ক্ষেত্রে তা ৬৫ দশমিক ৩৬ শতাংশ। যুক্তরাজ্যের মতো উন্নত দেশের মানুষও খাদ্য ব্যয় মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে। বিশ্বজুড়ে যখন টালমাটাল অবস্থা তখন দেশের অভ্যন্তরে বিভিন্ন ধরনের ফসলের চাষাবাদে যথেষ্ট আশা সঞ্চার করেছে। বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের (ব্রি) হিসাবে, আমনের উৎপাদন ধরে মোট ৩ কোটি ৯৭ লাখ টন চাল পাওয়া যেতে পারে এ বছর। ১৭ কোটি মানুষের জন্য প্রয়োজন দুই কোটি ৫১ লাখ টন চাল। চালের অন্যান্য ব্যবহারে ২৬ দশমিক ১২ শতাংশ হিসাব ধরে প্রয়োজন এক কোটি তিন লাখ টন। সেই হিসাবে উদ্বৃত্ত থাকবে ৪২ লাখ টন চাল। অর্থাৎ জুন পর্যন্ত দেশে চালের কোনো সংকট দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা নেই। তবে সার্বিক বাজার ব্যবস্থাপনাসহ নিরবচ্ছিন্ন সাপ্লাই চেন অবশ্যই ঠিক রাখতে হবে।

কৃষিনির্ভর বাংলাদেশ বরাবরই খাদ্যে প্রায় স্বয়ংসম্পূর্ণ। এরপরও বিভিন্ন সময়ে দেখা দেয় কৃত্রিম খাদ্য সংকট। আমদানিনির্ভর পণ্য ছাড়াও দেশীয় পণ্যের সরবরাহ বিঘ্নিত করছে মধ্যস্বত্বভোগী একটি চক্র। এরা যখন যে জিনিসের প্রয়োজন তার মজুদ করে বাজারে ঘাটতি দেখিয়ে দাম বাড়ায়। সরকারকে কঠোর হস্তে দমন করতে হবে এসব অসাধু চক্রকে। দ্রব্যমূল্যের অস্থিতিশীলতা শুধু সাধারণ মানুষের ভোগান্তির কারণই হয় না, এটি সরকারের ভাবমূর্তিও ক্ষুণ্ণ করে। কয়েকদিন পরেই শুরু হবে পবিত্র রমজান। দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল রাখতে এ মাসে খাদ্য অধিদপ্তরের জোরালো পদক্ষেপ একান্ত কাম্য।

×