ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৬ জুলাই ২০২৫, ১ শ্রাবণ ১৪৩২

বীর নিবাস

প্রকাশিত: ২০:২৮, ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

বীর নিবাস

.

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষেবীর নিবাসপ্রকল্পের আওতায় অসচ্ছল বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নিজস্ব জমিতে একতলা বাড়ির চাবি হস্তান্তর অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যোগদান করেন। তাঁর পক্ষে কিশোরগঞ্জ, গোপালগঞ্জ, গাজীপুর, মাদারীপুর নড়াইলের জেলা প্রশাসকরা বীর মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে বীর নিবাসের চাবি হস্তান্তর করেন। সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান ফিরিয়ে দিতে বর্তমান সরকার বদ্ধপরিকর। যারা বঙ্গবন্ধুর ডাকে যুদ্ধ করেছেন, তারা যে দলেরই হোন না কেন, মর্যাদা পান। বীর মুক্তিযোদ্ধারা মানবেতর জীবনযাপন করবেন, রিকশা চালাবেন, আমি বঙ্গবন্ধুর কন্যা ক্ষমতায় থাকতে সেটা হবে না। আমরা অসচ্ছল বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ঘর করে দিচ্ছি। ডিজিটাল পদ্ধতিতে তাদের কাছে ভাতা পৌঁছে দিচ্ছি। আমরা চাই বেঁচে থাকা বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদদের পরিবার যেন মর্যাদা এবং সম্মানের সঙ্গে জীবনযাপন করতে পারেন। একই সঙ্গে যাদের ত্যাগের বিনিময়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে, তরুণ প্রজন্মের সামনে তা তুলে ধরতে এবং বাংলাদেশের প্রকৃত ইতিহাস জানাতে সারাদেশের অনাবিষ্কৃত বধ্যভূমিগুলো খুঁজে বের করে সেগুলো সংরক্ষণের জন্যও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন তিনি।

প্রধনমন্ত্রীর বক্তব্যে মুক্তিযোদ্ধারা যেমন গৌরববোধ করবেন, তেমনি দেশবাসীও তাঁকে সাধুবাদ জানাবেন। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সরকারপ্রধানের কাছে এমনটাই প্রত্যাশিত। ইতোমধ্যে অনেক যুদ্ধাপরাধীর বিচার সম্পন্ন হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধাদের ঘর-বাড়ি না থাকা এবং মানবেতর জীবনযাপন করা আমাদের জন্য লজ্জার বিষয়। তাই বর্তমান সরকার মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ঘর-বাড়ি তৈরি, তাদের জীবন-জীবিকা এবং চিকিৎসা-যাতায়াতসহ নানা সুযোগ-সুবিধা প্রদানের উদ্যোগ নিয়েছে। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আওতায় তাদের কল্যাণে গৃহীতবীর নিবাসপ্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে। ইতোমধ্যে পাঁচ হাজার বাড়ি নির্মাণ শেষে হস্তান্তর করা হয়েছে। ১৭ হাজার ৬৬০টি বীর নিবাসের কাজ বিভিন্ন পর্যায়ে চলমান রয়েছে। বছরই ৩০ হাজার বাড়ির নির্মাণকাজ শেষ হবে বলে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছে। তাছাড়া মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা ন্যূনতম ২০ হাজার টাকা করা হয়েছে এবং সাধারণ গৃহহীন-ভূমিহীন মানুষের জন্যও ঘর করে দিচ্ছে সরকার আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায়। উল্লেখ্য, মুজিববর্ষ এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে ২০২১ সালে সারাদেশে ৩০ হাজার বীর নিবাস নির্মাণের কার্যক্রম শুরু করেছিল সরকার। প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হয়েছে ২০২৩ সালের ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত।

মহান মুক্তিযুদ্ধে যারা বীরত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন তাদের সম্মান দিলে দেশ জাতি সম্মানিত হয়। জাতির এই শ্রেষ্ঠ সন্তানদের আত্মত্যাগের ফলেই আমরা স্বাধীন বাংলাদেশ পেয়েছি। তাদের কারণেই বাঙালি জাতির বিশ্বের কোথাও আত্মপরিচয়ের সংকট নেই। আমরা মাথা উঁচু করে বলতে পারি আমরা বাঙালি, আমাদের দেশ বাংলাদেশ। তাই বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে বর্তমান জাতি চিরঋণী। মহান মুক্তিযুদ্ধের বীর সৈনিকদের কল্যাণের উদ্দেশ্যে গৃহীত প্রকল্পগুলো স্বচ্ছ, দুর্নীতিমুক্ত নিষ্কণ্টক হোক, তাদের প্রত্যেকেই যোগ্য  প্রাপ্য সম্মান ফিরে পান, তাদের সম্মানিত করার মাধ্যমে বাঙালি জাতি কিছুটা হলেও ঋণের বোঝা থেকে মুক্ত হোকÑ এটাই প্রত্যাশা।

×