ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

পর্যাপ্ত মজুতে খাদ্য নিরাপত্তা

প্রকাশিত: ২৩:২২, ২৭ জানুয়ারি ২০২৩

পর্যাপ্ত মজুতে খাদ্য নিরাপত্তা

.

বছরের শুরুতে সরকারের রেকর্ড পরিমাণ খাদ্য মজুত গড়ে ওঠার সংবাদ স্বস্তিদায়ক। মজুতের পরিমাণ ১৯ লাখ ২৫ হাজার ৪২৭ মেট্রিক টন নিঃসন্দেহে সন্তোষজনক। এতে সংশয়ের কোনো অবকাশ নেই যে, বর্তমান মজুত খাদ্য নিরাপত্তা প্রশ্নে সরকারের অবস্থান সুদৃঢ় করেছে। সরকার দেশের ১৬ কোটি মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য নিরলস ভূমিকা রেখে চলেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বারবারই দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে আসছেন কোথাও এতটুকু জমি খালি থাকলে সেখানে কৃষিকাজ করার। একই সঙ্গে তিনি চলতি বছর বিশ^খাদ্য পরিস্থিতি বিষয়ে সবাইকে সতর্ক করে কৃচ্ছ্র সাধনেরও পরামর্শ দিয়েছেন।

অপচয় নয়, সাশ্রয়ী হওয়ার কোনো বিকল্প নেই। কৃচ্ছ্র সাধনের মাধ্যমে বিগত ছয় মাসে ৩৮২ কোটি টাকা সাশ্রয় করেছে খাদ্য মন্ত্রণালয়। বিষয়টি প্রশংসনীয়। আমরা আশা করি বর্ধিত মজুত দেশে খাদ্য পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখার লক্ষ্য পূরণে ভালো ভূমিকা রাখবে। বর্তমানে চলমান রয়েছে আমন সংগ্রহ অভিযান। এতে পাঁচ লাখ মেট্রিক টন সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ যুক্তিযুক্ত। রেকর্ড পরিমাণ মজুতের পর দেশে চালের বাজার স্থিতিশীল থাকাটাই স্বাভাবিক। আমরা দেখে আসছি সরকারের হাতে মজুত কমে গেলে চাল ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেট বাজারকে অস্থিতিশীল করার অপচেষ্টা চালায়।
বিদায়ী বছরে আমরা লক্ষ্য করেছি যে, খাবারের দাম বাড়ার সম্ভাব্য কারণ ছিল অনেক, যার কিছুটা পদ্ধতিগত। যেমন সরবরাহ শৃঙ্খলের সমস্যা, বিশেষ করে পরিবহন সংক্রান্ত, যা পণ্যের বিস্তৃত পরিসরে মূল্যবৃদ্ধির প্রধান কারণ হিসেবে কাজ করেছে। তবে ২ দশমিক ৮ বিলিয়ন টন রেকর্ড পরিমাণ  বৈশ্বিক উৎপাদন সত্ত্বেও শস্যের দাম অনেক বেশি দ্রুত হারে বেড়েছে। তাছাড়া শস্য উৎপাদন ও পরিবহন খরচ নির্ধারণের ক্ষেত্রে জ্বালানির মূল্যও ছিল গুরুত্বপূর্ণ। জ¦ালানি তেলের দামের ব্যাপক বৃদ্ধির কারণে ভোক্তাদের খাদ্যপণ্য ক্রয়ের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত মূল্য পরিশোধ করতে হয়েছে। এছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে শস্য উৎপাদন বাধাগ্রস্ত ও হ্রাস পাচ্ছে। সব মিলিয়ে সামনে এক কঠিন সময়ই আসছে বলে আশঙ্কা। ফলে তার মোকাবিলা করার চ্যালেঞ্জও যে কঠিন হবে এ বিষয়ে সংশয় নেই। এটি যে বাংলাদেশসহ বিশে^র প্রায় সকল দেশের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য সেটি বলাই বাহুল্য।
বিশ্বায়নের চাপ, উপর্যুপরি প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও আন্তর্জাতিক খাদ্যবাজারে অস্থিরতা আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় সংকটকালে খাদ্য নিরাপত্তা অর্জনের জন্য কৃষিতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি, অভ্যন্তরীণ খাদ্য উৎপাদন, সংরক্ষণ ও সরবরাহ ব্যবস্থার উন্নয়ন এবং জনসচেতনতা বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই। আমাদের খাদ্য আমাদেরই উৎপাদন করতে হবে। দেশের মাটি, পানি, প্রযুক্তির সর্বোত্তম ব্যবহার এবং নিজস্ব প্রচেষ্টার মাধ্যমেই তা করতে হবে। পরিবর্তিত জলবায়ুতে খাপ খাইয়ে আমাদের উৎপাদন নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি সারা বছরের জন্য পর্যাপ্ত খাদ্য মজুতও রাখা চাই।

 

×