ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতা কেন?

ওসমান এহতেসাম

প্রকাশিত: ২০:৫০, ২৩ নভেম্বর ২০২২

নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতা কেন?

ডেঙ্গু বর্তমান বাংলাদেশের এক অন্যতম আতঙ্কের নাম

ডেঙ্গু বর্তমান বাংলাদেশের এক অন্যতম আতঙ্কের নাম। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ মহামারী করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে যতটাই না সফল, বিপরীতে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে ঠিক ততটাই ব্যর্থ। বলা যায় করোনার কান্নায় ডেঙ্গুর গর্জন। প্রতিদিনই খবরে শুনি ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সিটি কর্পোরেশনের অভিযান। কোথায় এ অভিযান? মশকনিধন কর্মীদের দেখাই তো তেমন মেলে না। বর্তমান অবস্থা এমন হয়েছে যে প্রতি ঘরে ঘরে ডেঙ্গু রোগী। তাহলে সিটি করপোরেশনের মশকনিধন কার্যক্রম কি শুধু লোক দেখানো! বাসা-বাড়ি, শিক্ষা-ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান, অফিসসহ বিভিন্ন স্থানে মশার কামড় থেকে কেউই রক্ষা পাচ্ছেন না। এদিকে বস্তি, আবাসিক কিংবা বাণিজ্যিক এলাকা সবখানেই মিলছে এডিস মশার লার্ভা। ফলে মশার জ্বালায় শিশু থেকে বৃদ্ধরাও অতিষ্ঠ।
ডেঙ্গু দুর্যোগ মোকাবিলায় সকল সিটি করপোরেশনের মেয়ররা গণমাধ্যমে যতটা সরব কাজে ততটা ব্যর্থ। ডেঙ্গু মোকাবিলায় সরকার ও জনগণের সমন্বিত প্রয়াস জরুরি হলেও সিটি করপোরেশন এলাকার কাউন্সিলরদের অবহেলার কারণে ডেঙ্গু এখন দুর্যোগে পরিণত হয়েছে। জনগণ নিয়মিত ট্যাক্স পরিশোধ করলেও সিটি করপোরেশনের নাগরিক সেবা থেকে বরাবরই জনগণ বঞ্চিত। অভিযোগ আছে, রাজধানী ঢাকাসহ চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সব এলাকায় নিয়মিত মশার ওষুধ না ছিটানো, ফগিং-এর সময় গলির মধ্যে না গিয়ে মেইন রাস্তায় ফগিং করাসহ লোক দেখানো অভিযান পরিচালনা করে জরিমানা আদায়, ডোবা-নালা নিয়মিত পরিষ্কার না করায় সিটি করপোরেশনের কার্যক্রম কোনো কাজে আসছে না। কাজেই ডেঙ্গুর প্রকোপ বৃদ্ধি সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের স্পষ্ট ব্যর্থতার বহির্প্রকাশ।

এ ব্যর্থতার দায় ঢাকাসহ চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের তিন মেয়র ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কিছুতেই এড়াতে পারেন না। ডেঙ্গু সংক্রমণের দায় নাগরিক, সিটি করপোরেশন ও স্থানীয় সরকারের। তবে ঘরে ঘরে প্রবেশ করে মশা মারা যেমন সিটি করপোরেশনের কাজ নয়, তেমনি ঘরের বাইরে এডিস মশার ডিমপাড়া ও বংশবৃদ্ধি রোধ করা সিটি করপোরেশন, স্থানীয় সরকারের দায়িত্ব। যেখানে-সেখানে পড়ে থাকা পরিত্যক্ত পাত্র, মাটির হাঁড়ি, টায়ার, ক্যান যার মধ্যে জমা পানি থাকে বা কোনো গর্ত যেখানে বৃষ্টি হলেই পানি জমতে পারে সেখানেই নির্মূলের ব্যবস্থা করতে হবে। ডেঙ্গুমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তুলতে সর্বস্তরের জনসাধারণকে সম্পৃক্ত করে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।

পরিবেশবান্ধব কার্যকর রাসায়নিক পদার্থ দিয়ে মশার লার্ভা ধ্বংস করার পাশাপাশি উড়ন্ত মশা মারার ব্যবস্থা করতে হবে। এডিস মশার প্রজনন, বিস্তার, প্রতিরোধ ও প্রতিকার নিয়ে নিয়মিত গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনার বিকল্প নেই।মশকনিধন কার্যক্রম শুধু নির্দিষ্ট একটি সময়ে সীমাবদ্ধ না রেখে বছরব্যাপী নিয়মিতভাবে পরিচালনা করতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তন ও তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে জনস্বাস্থ্যের ওপর যে বিরূপ প্রভাব পড়ছে তা নিয়ে গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করা ও তা মোকাবিলার পথ খুঁজে বের করাও জরুরি। আমরা মেয়রদের বক্তব্যের সঙ্গে মাঠপর্যায়ের কাজের বাস্তবায়ন দেখতে চায়। কাজেই দেরি না করে মেয়রেরা এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেবেন। প্রথমত, সবখানে মশানিধন ও পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম জোরদার করতে হবে। পাশাপাশি আন্তরিকতার মাধ্যমে কর্তৃপক্ষকে সব কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করতে হবে। এটিই আমাদের প্রত্যাশা।
বাকলিয়া, চট্টগ্রাম থেকে

×