ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

উৎসাহ প্রেরণা দিন

এবি ছিদ্দিক

প্রকাশিত: ২১:২৬, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২২

উৎসাহ প্রেরণা দিন

বাংলাদেশের মেয়েরা ফুলবলে সাফ গেমসে শিরোপা অর্জন

ভারতীয় উপমহাদেশে সবসময়ই বহিরাঙ্গনে মেয়েদের সৃজনশীল কাজ হতে কৌশলে বিরত রাখার প্রবণতা লক্ষণীয়। কিন্তু প্রতিকূল অবস্থার মধ্যে দিয়েই বহু নারী সমাজে ও রাষ্ট্রের বিভিন্ন পর্যায়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছেন। বিশ্বায়নের যুগে এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসা একান্ত জরুরী।
সম্প্রতি বাংলাদেশের মেয়েরা ফুলবলে সাফ গেমসে শিরোপা অর্জন করে দেশের জন্যে বিরল সম্মান বয়ে এনেছে। তাক লাগিয়ে দিয়েছে বিশ্ববাসীকে। জানিয়ে দিয়েছে উপযুক্ত পরিচর্যা, উৎসাহ আর পৃষ্ঠপোষকতা পেলে বিশ্ব জয় করা এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। একটি বিষয় উল্লেখ না করলেই নয়। আমাদের প্রমীলা ফুলবল দলে যেসকল মেয়ে খেলছেন তাদের প্রায় সবাই নিম্নবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত ঘরের সন্তান। ধনাঢ্য বা অভিজাত শ্রেণীর পরিবার থেকে এখনও ফুটবলে মেয়েরা খুব একটা এগিয়ে আসছে না।

এর অন্যতম প্রধান কারণ সামাজিক বাধা ও কুসংস্কার। এখনও আমাদের মেয়েরা এটা করা যাবে না, সেটা করা যাবে না এমন খোঁড়া যুক্তির যাঁতাকলে পড়ে তাদের সৃজনশীল প্রতিভার বিকাশ ঘটাতে বহিরাঙ্গনে পা রাখতে পারছে না। বাংলাদেশের মানুষ এমন বিচিত্র মানসিকতার যে, একই গ্যালারিতে বসে ফুটবল খেলা উপভোগ করে মা-বাপ ও তাদের ছেলে-মেয়ে। এটি নিঃসন্দেহে একটি ভাল দিক। কিন্তু কোন মেয়ে ফুটবলারের মেয়ে, বোন বা ছেলের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে গেলে শতবার ভাবতে হয়!

ঠিক এমনটি অন্যান্য সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রেও লক্ষণীয়। অথচ অস্ট্রেলিয়ায় চিত্রটি বিপরীত। কোন অস্ট্রেলীয় নরসুন্দর তার মেয়ে বা ছেলে বিয়ে দিতে গেলে শিক্ষিত ও অভিজাত ঘরের ছেলে বা মেয়ে খুঁজতে যায় না। এমনিতেই আসে। নরসুন্দরের মেয়েকে বিয়ে করে গর্ব বোধ করে। বৃদ্ধি পায় সামাজিক মর্যাদা।
যে কোন ঘরের মেয়েই হোক না কেন মেয়েটি যদি ফুটবল বা যে কোন বহিরাঙ্গনের খেলাধুলা বা সৃজনশীল কাজে আগ্রহ দেখায় তবে তাকে বাধা না দিয়ে বরং উৎসাহ দেয়া এখন সময়ের দাবি। কোন মানুষ অপর কোন মানুষকে সৃজনশীল কাজে বাধা দিতে পারে না। এটি অনৈতিক। সম্প্রতি প্রযুক্তির সুবাদে আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্ম যেভাবে ইনডোর খেলাধুলায় আসক্ত হয়ে পড়ছে তা আশঙ্কাজনক!  তাদের অবশ্যই বাহিরে খেলাধুলা করার প্রতি উৎসাহিত করতে হবে। একটি মানুষ যতক্ষণ মাঠে খেলে ততক্ষণ তার ভেতর আর কোন নেতিবাচক চিন্তা আসতে পারে না। ততক্ষণ ওই মানুষটি একটি নিটোল আনন্দ উপভোগ করে। খেলাধুলার মাঠে যে শিক্ষা লাভ হয় তাতে কোন খুঁত থাকে না। ব্যক্তির মজবুত ব্যক্তিত্ব তৈরি হয়।
পরিশেষে বলতে চাই মেয়েদের ফুটবল খেলতে বাধা নয় বরং সর্বাত্মক সহযোগিতা নিয়ে এগিয়ে আসা উচিত। উপযুক্ত পরিবেশ, পরিচর্যা আর পৃষ্ঠপোষকতা পেলে আমাদের মেয়েদের ফুলবলে বিশ্ব জয় করার গৌরব দেখতে খুব বেশি সময় অপেক্ষা করতে হবে বলে বিশ্বাস করি না।

শ্রীপুর, গাজীপুর থেকে

×