ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৬ জুলাই ২০২৫, ১ শ্রাবণ ১৪৩২

সকালের প্রথম ৩০ মিনিটে পানি না খেলে পেটে কী ঘটে?

প্রকাশিত: ০৫:৫১, ৯ জুলাই ২০২৫

সকালের প্রথম ৩০ মিনিটে পানি না খেলে পেটে কী ঘটে?

ছ‌বি: প্রতীকী

সকালের প্রথম ৩০ মিনিট হলো শরীরের জন্য একটি অত্যন্ত সংবেদনশীল এবং গুরুত্বপূর্ণ সময়। দীর্ঘ রাতের ঘুমের পর শরীর থাকে পানিশূন্যতায় আক্রান্ত, কারণ এই সময়টিতে শরীর কোনো পানীয় গ্রহণ করে না অথচ শ্বাস-প্রশ্বাস, ঘাম, প্রস্রাবের মাধ্যমে পানি হারায়। এই অবস্থায় যদি ঘুম থেকে উঠে ৩০ মিনিটের মধ্যে পানি না খাওয়া হয়, তাহলে শরীরের একাধিক অঙ্গপ্রত্যঙ্গে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করে।

প্রথমত, পানির অভাবে হজম প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়। সকালে খালি পেটে পানি না খেলে পাকস্থলীতে জমে থাকা অম্ল এবং টক্সিন শরীর থেকে বের হতে পারে না। ফলে হজমের সমস্যা, গ্যাস, বদহজম বা অ্যাসিডিটির সমস্যা বাড়তে পারে। বিশেষত যারা সকালে খালি পেটে চা বা কফি খান, তাদের জন্য এটি আরও ক্ষতিকর, কারণ পানি না খেয়ে এই ধরনের পানীয় গ্রহণ করলে পাকস্থলীর এসিড আরও সক্রিয় হয়, যা আলসার পর্যন্ত গড়াতে পারে।

দ্বিতীয়ত, সকালে পানি না খাওয়ার ফলে শরীরের বিপাকক্রিয়া ধীরগতির হয়ে পড়ে। ঘুম থেকে ওঠার পর পানি পান করলে শরীরের অর্গানগুলো কার্যক্রম শুরু করে, বিপাকক্রিয়া সক্রিয় হয়। কিন্তু যখন পানি খাওয়া হয় না, তখন শরীরের কোষগুলো পর্যাপ্ত অক্সিজেন ও পুষ্টি গ্রহণে ব্যর্থ হয়, যার ফলে সারাদিন ধরে শরীর অলসতা ও ক্লান্তিতে ভোগে। অনেক সময় মাথাব্যথা, চোখে ঝাপসা দেখার মতো সমস্যাও দেখা দিতে পারে।

তৃতীয়ত, পানি না খেয়ে দিন শুরু করলে কিডনির উপর বাড়তি চাপ পড়ে। কিডনি আমাদের শরীর থেকে টক্সিন দূর করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে এবং এই কাজে প্রয়োজন পর্যাপ্ত পানি। সকালে খালি পেটে পানি না খেলে প্রস্রাবের পরিমাণ কমে যায় এবং কনসেন্ট্রেটেড ইউরিনের মাধ্যমে টক্সিন শরীরে জমে থাকে, যা কিডনির ক্ষতির কারণ হতে পারে। দীর্ঘমেয়াদে এটি কিডনি স্টোন বা কিডনি ইনফেকশনের ঝুঁকিও বাড়ায়।

চতুর্থত, সকালে পানি না খেলে ত্বকের উপরেও প্রভাব পড়ে। পানি শরীরের ডিহাইড্রেশন দূর করে, রক্তপ্রবাহ ঠিক রাখে এবং কোষগুলো সজীব রাখে। পানি না খেয়ে দিন শুরু করলে ত্বক হয়ে পড়ে রুক্ষ, প্রাণহীন ও নির্জীব। দীর্ঘদিন এভাবে চলতে থাকলে বয়সের ছাপ ত্বকে দ্রুত পড়তে শুরু করে।

এছাড়াও, সকালে পানি না খাওয়ার ফলে হৃদযন্ত্রের উপরেও নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। শরীরের পানিশূন্যতা রক্তকে ঘন করে তোলে, ফলে রক্তচাপ বেড়ে যেতে পারে এবং হার্টকে অধিক পরিশ্রম করতে হয়। এটি উচ্চরক্তচাপ, স্ট্রোক এবং হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়। বিশেষত যারা বয়সে বেশি বা আগে থেকেই হৃদরোগের ঝুঁকিতে রয়েছেন, তাদের জন্য এটি আরও বিপজ্জনক হতে পারে।

মনোসংযোগ এবং মানসিক সতর্কতার ক্ষেত্রেও পানি একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। সকালে ঘুম থেকে উঠে পানি না খেলে মস্তিষ্ক পর্যাপ্ত অক্সিজেন পায় না, যার ফলে মনোযোগে ঘাটতি, স্মৃতিশক্তি দুর্বল হওয়া এবং মানসিক অবসাদ দেখা দিতে পারে। বিশেষ করে যারা সকালে অফিস, ক্লাস বা গুরুত্বপূর্ণ কাজে ব্যস্ত থাকেন, তাদের ক্ষেত্রে এটি কর্মদক্ষতা কমিয়ে দেয়।

সব মিলিয়ে বলা যায়, সকালে ঘুম থেকে উঠে প্রথম ৩০ মিনিটের মধ্যে পানি না খেলে শরীর একাধিক জৈব ও মানসিক সমস্যায় পড়তে পারে। এটি একটি ছোট কিন্তু অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্যাভ্যাস, যা দিনের শুরুতেই শরীরকে সতেজ ও সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, ঘুম থেকে উঠে অন্তত ১ থেকে ২ গ্লাস উষ্ণ বা কক্ষতাপমাত্রার পানি খাওয়া উচিত, যা শরীরের বিপাকক্রিয়া জাগিয়ে তোলে এবং সারাদিনের কার্যক্রমে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।

তাই স্বাস্থ্যসচেতন হতে চাইলে সকালে উঠেই পানি খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তোলা উচিত। এটি একটি সহজ, প্রাকৃতিক এবং কার্যকর স্বাস্থ্যনীতি, যা দীর্ঘমেয়াদে আপনাকে সুস্থ ও প্রাণবন্ত রাখতে পারে।

এম.কে.

×