
ছবি:সংগৃহীত
আমাদের সবার জীবনে এমন কিছু মানুষ থাকে, যাঁদের দেখে মনে হয়, বয়স যেন তাঁদের ছুঁতেই পারেনি। মুখে প্রশান্তি, চোখে দীপ্তি, চলাফেরায় প্রাণ। তাঁরা সেলিব্রিটি নন, কেউ চিরসবুজ ফিল্টারে ঢাকা পড়েননি। তাঁরা আমাদের আশেপাশের মানুষ—মা, কাকিমা, পাশের বাড়ির চাচা—যাঁরা সময়কে ভালোবাসায় ভরিয়ে রেখেছেন।
অনেক কথা বলার পর, অনেক ঘুরে বেড়িয়ে, আর কিছু গবেষণা পড়ে একটা ব্যাপার বুঝেছি—তাঁরা ম্যাজিক করেন না। বরং ছোট ছোট কিছু অভ্যাস মেনে চলেন প্রতিদিন। যেগুলো আমরা অনেক সময় গুরুত্ব দিই না। অথচ, সেটাই তাঁদের প্রাণবন্ত রাখে।
চলুন, এমন দশটি সাধারণ অথচ গভীর অভ্যাস দেখি—যা আপনাকেও বছরের পর বছর তরুণ রাখতে পারে।
১. তাঁরা প্রতিদিন হাঁটেন—না শখে, না জিমের চাপে, বরং ভালো লাগায়
হাঁটা আমাদের অনেকের কাছে স্রেফ একটা ব্যায়াম। কিন্তু যাঁরা সত্যিই তরুণ থাকেন, তাঁরা হাঁটেন যেন একটা রুটিনের মতো, একটা ধ্যানের মতো।
লিসবনের এক বৃদ্ধা বলেছিলেন, “আমি সকালে আর বিকেলে হাঁটি। হাঁটলে মনে হয় আমি জীবনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলছি।”
ওই হাঁটা শরীর ঠিক রাখে, মন পরিষ্কার করে, আর জীবনের ছোট ছোট জিনিস চোখে পড়ে—যা আমাদের তরুণ করে তোলে।
২. তাঁরা এমনভাবে খান, যা শরীরের সঙ্গে বন্ধুত্ব বজায় রাখে
না, তাঁরা কঠিন ডায়েটে থাকেন না। তাঁরা খান সময়মতো, শান্তভাবে, ভালোবাসা নিয়ে।
এক বাটি ডাল স্যুপ, একটু ফল, হাতে এক গ্লাস রেড ওয়াইন—আর তাতেই তৃপ্তি। না বাড়তি খাওয়া, না অনুশোচনা। খাবার তাঁদের কাছে শরীরের যত্ন, আত্মার বন্ধন।
৩. তাঁরা জানেন—জীবন মানে শেখা কখনো থেমে যায় না
বয়স তাঁদের কৌতূহল মেরে ফেলেনি। বরং, তাঁরা এখনো শেখেন। নতুন অ্যাপ, অদ্ভুত হবি, বা অন্য ভাষা—সবকিছুতে একটা “আহা!” ভাব নিয়ে যান।
একজন স্যান্তা ফেতে ড্রোন ক্যামেরা শিখছিলেন ৬৮ বছর বয়সে। বললেন, “নতুন কিছু শিখতে বয়স লাগে না, লাগে শুধু আগ্রহ।”
এই মনোভাবটাই তাঁদের চোখে-বুঝে তারুণ্য এনে দেয়।
৪. তাঁরা ঘুমকে ছোট করেন না—তাঁদের কাছে এটা পবিত্র সময়
ঘুম তাঁদের জন্য শুধু বিশ্রাম নয়, নিজের সঙ্গে দেখা করার সময়।
বিছানায় ফোন নয়, বরং বই, হালকা আলো, এক কাপ চা।
ঘুম যদি গভীর হয়, তাহলে চোখ জ্বলে, ত্বক টানটান থাকে, আর মন থাকে হালকা। সে জিমের দরকার পড়ে না।
৫. তাঁরা চাপ নিয়ে ‘নায়ক’ হতে চান না—চাপ কমাতে জানেন
চাপ থাকবেই। কিন্তু তাঁরা জানেন কখন না বলতে হয়, কখন একটু থেমে যেতে হয়।
কারো কাছে না বললে যদি শান্তি মেলে, তাঁরা সেটা বলেন। গার্ডেনিং করেন, প্রার্থনা করেন, চুপচাপ থাকেন।
চাপকে তাঁরা বন্ধু বানান না, কাঁধ থেকে নামিয়ে রাখেন।
৬. তাঁদের শরীরচর্চা হয় আনন্দে, গলার রেডিও চালিয়ে রান্নাঘরে নাচতে নাচতে
জিমের ট্রেডমিলে দৌড় নয়, বরং সকালে একটু স্ট্রেচ, বিকেলে পুকুরে সাঁতার, রাতে গান শুনে একটু নাচ। এই মুভমেন্ট তাঁদের প্রাণবন্ত রাখে।
শরীরের চেয়ে তাঁরা মনটাকে নাচান। আর সেই খুশিই ত্বকে, গায়ে, হাঁটার ভঙ্গিতে ছড়িয়ে পড়ে।
৭. তাঁরা এমন মানুষদের পাশে থাকেন—যাঁরা হাসায়, হালকা করে
হাসি তাঁদের জীবনের অন্যতম ওষুধ। গভীর বন্ধুতা, ঠাট্টা-মশকরা, প্রাণখোলা গল্প—এই জিনিসগুলো তাঁদের হালকা রাখে।
জীবন কঠিন হয়, কিন্তু মানুষ পাশে থাকলে তা সহজ লাগে। আর হাসিমুখে জীবনকে আলিঙ্গন করা যায়।
৮. তাঁরা রোদে বের হন, কিন্তু মেপে চলেন
সানস্ক্রিন তাঁরা ব্যবহার করেন, কিন্তু প্যানিক করে না। একটু রোদ লাগলেও ভয় পান না।
তাঁদের ত্বক পরিচ্ছন্ন, স্নিগ্ধ, আর রুটিনটা সহজ—ধোয়া, ময়েশ্চারাইজার, আর একটু যত্ন।
৯. তাঁরা সারা দিন পানি খান—না গুনে, বরং অভ্যাসে
তৃষ্ণা লাগার আগেই তাঁরা পানি খান। কেউ লেবু দিয়ে, কেউ পুদিনা মিশিয়ে। পানি তাঁদের শরীর, মন ও চেহারার রঙ ধরে রাখে।
তাঁদের চামড়া কোমল, মাথা ঠান্ডা, আর ক্লান্তি কম।
১০. তাঁরা নিজেকে লুকিয়ে রাখেন না—নিজেকে প্রকাশ করতে ভালোবাসেন
বয়স বাড়লেও, তাঁরা কখনো নিজেদের গুটিয়ে নেন না।
রঙিন স্কার্ফ, কাস্টমাইজড ব্যাগ, আবার পুরোনো গিটার—সব কিছুতে নিজেকে খুঁজে নেন।
কারও অনুমতি লাগে না। তাঁরা বলেন, "এই আমি—আর আমি এখনো বাঁচতে জানি।"
শেষ কথাটা কী?
তারুণ্য মানে শুধু ত্বকের টানটান ভাব নয়। সেটা এক রকমের প্রাণশক্তি, জীবনের সঙ্গে কানেকশনের অনুভব।
এই প্রাণশক্তি আসে ছোট ছোট অভ্যাস থেকে—যা আপনি প্রতিদিন করেন, সযত্নে।
একটা অভ্যাস দিয়ে শুরু করুন। হাঁটা হতে পারে, একটু জল খাওয়া হতে পারে, নাকি পুরনো এক বন্ধুকে ফোন করা?
যাই হোক না কেন, মনে রাখবেন—আজকের যেভাবে বাঁচছেন, সেটাই আপনার ভবিষ্যতের মুখ ও মনের আয়না হবে।
মারিয়া