
ছবিঃ সংগৃহীত
আমরা অনেক সময়েই ভাবি, তাজা ফলের রস বা সবুজ স্মুদি খেলেই বুঝি স্বাস্থ্য একেবারে ঝকঝকে থাকবে। কিন্তু বাস্তবতা একটু ভিন্ন। লিভার আমাদের শরীরের সবচেয়ে খুঁতখুঁতে, অথচ সবচেয়ে নিরহংকার অঙ্গ। চুপচাপ সে প্রতিদিন আমাদের শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ ছেঁকে ফেলছে, খাবার হজমে সাহায্য করছে, রক্তে চিনি নিয়ন্ত্রণ করছে, ভিটামিন জমিয়ে রাখছে।
এই লিভারের ভালো-মন্দ বুঝতে গিয়ে হার্ভার্ড ও স্ট্যানফোর্ড থেকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজিস্ট ড. সौरভ শেঠি সম্প্রতি একটি ভিডিওতে ৯টি জনপ্রিয় পানীয়কে ১ থেকে ১০ স্কেলে র্যাংক করেছেন—যেখানে ১০ মানে সবচেয়ে ভালো, ১ মানে একেবারে ক্ষতিকর।
চলুন, জেনে নিই কোন পানীয় লিভারের জন্য স্বর্গ, আর কোনটা নরক!
লিভারপ্রেমী পানীয় তালিকা (সবচেয়ে খারাপ থেকে সবচেয়ে ভালো)
খারাপ দিক:
বাজারের ফলের রস (১/১০)
যতই “হেলদি” বলুক বিজ্ঞাপন, এগুলোতে থাকে চিনি আর প্রিজারভেটিভ – লিভারের জন্য বিষের মতো।
মিষ্টি চা (২/১০)
দিনে তিনবার দুধ-চা খাওয়ার অভ্যাস থাকলে সাবধান হোন। চিনি লিভারকে আস্তে আস্তে ক্লান্ত করে দেয়।
তাজা ফলের রস (৪/১০)
যদিও বাসায় বানানো, তবু ফলের প্রাকৃতিক চিনি (ফ্রুকটোজ) বেশি খেলে লিভারে চর্বি জমতে শুরু করে।
মাঝামাঝি:
সবুজ স্মুদি (৫/১০)
ভালো-খারাপ মিশ্র। যদি শুধু ফল না দিয়ে সবজি, দানা-জাতীয় উপাদান দেওয়া হয়, তাহলে উপকার বেশি।
লেবু পানি (৬/১০)
হালকা ডিটক্স ইফেক্ট আছে, সকালে খালি পেটে ভালো কাজ করে।
বীট রুটের রস (৭/১০)
অ্যান্টি-অক্সিডেন্টে ভরপুর এই পানীয় লিভারের কোষগুলো রক্ষা করতে সাহায্য করে।
ভালো দিক:
চিনি ছাড়া সবজির রস (৮/১০)
বিশুদ্ধ সবজির রস – যেমন গাজর, পালং, শশা – লিভারকে পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে।
ব্ল্যাক কফি (৯/১০)
অবাক হচ্ছেন? হ্যাঁ, চিনি বা দুধ ছাড়া ব্ল্যাক কফি লিভারকে টক্সিন মুক্ত রাখতে দারুণ কাজ করে।
পানি (১০/১০)
সাধারণ, নির্লোভ আর বিশ্বস্ত – একমাত্র পানিই প্রতিদিনের লিভার-ক্লিনার।
কেন লিভার নিয়ে এত হইচই?
কারণ, এই অঙ্গটি একাই আমাদের শরীরের ৫০০-রও বেশি গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে। রক্ত পরিশোধন থেকে শুরু করে হরমোন ব্যালান্স, খাবার হজম, শক্তি সঞ্চয় – সব কিছুতেই এর অবদান।
কিন্তু যদি লিভারে চর্বি জমে (ফ্যাটি লিভার), তখন একে একে শরীরে দেখা দেয় ক্লান্তিভাব, হজমের সমস্যা, ওজন বেড়ে যাওয়া, এমনকি ডায়াবেটিস।
ফ্যাটি লিভার এখন ঘরে ঘরে – কেন?
- মোবাইল স্ক্রিনে আসক্তি = শারীরিক নিষ্ক্রিয়তা
- বাইরের ফাস্ট ফুড = চর্বি ও চিনি অতিরিক্ত
- ঘরে বসে বসে কাজ = লিভার কাজের চাপে হাঁপিয়ে ওঠে
ভয় পাবেন না। শুরুতে ধরা পড়লে এই রোগ সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আনা যায় – শুধু জীবনধারায় কিছুটা পরিবর্তন আনলেই হয়।
আর অ্যালকোহল?
এটা বলাই বাহুল্য – অ্যালকোহল লিভারের শত্রু নম্বর ১। যত কম, তত ভালো।
লিভারকে ভালোবাসুন, কারণ সে আপনাকে প্রতিদিন বাঁচিয়ে রাখে।
➤ পান করুন প্রচুর পানি
➤ বলুন না চিনি ও প্রসেসড জুসে
➤ ভালোবাসুন সবজি, ব্ল্যাক কফি আর লেবু পানি
আপনার প্রতিদিনের ছোট ছোট অভ্যাসই ঠিক করবে আপনার ভবিষ্যতের শরীর কেমন হবে।
মারিয়া